০৬:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সূর্যমুখীর হাসিতে মুখরিত নোবিপ্রবি: ভোরের আলোয় জেগে ওঠে এক স্বপ্নীল প্রান্তর

ভোরের আলো ছুঁয়ে যায় যখন ১০১ একরের সবুজ ক্যাম্পাস, তখন যেন জেগে ওঠে এক রঙিন স্বপ্ন। বাতাসে মিশে যায় বৃষ্টিভেজা মাটির ঘ্রাণ, সাথে যোগ হয় সূর্যমুখী ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ। এই আবেশময় সকালে, ঘাসের ডগায় আলো খেলে গেলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রাঙ্গণ যেন রূপ নেয় এক জীবন্ত চিত্রকর্মে—যেখানে প্রকৃতি নিজেই হয়ে ওঠে চিত্রকর, আর সূর্যমুখী হয়ে ওঠে তার তুলির রং।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ প্রান্ত ও একাডেমিক ভবনের সামনের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যতদূর চোখ যায়, শুধুই হলুদের দোলা—সেই সাথে মাঝে মাঝে সবুজের কোমল ছোঁয়া। মার্চ ও এপ্রিল যেন নোবিপ্রবির বার্ষিক ক্যালেন্ডারের দুটি বিশেষ পৃষ্ঠা, যেখানে লেখা থাকে রৌদ্রছায়া মাখা সূর্যমুখীর আগমনী বার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আন্তরিক তত্ত্বাবধানে এ বছর সুচারুভাবে বোনা হয় সূর্যমুখীর বীজ। সেই চেষ্টার ফল আজ সকলের চোখের সামনে—প্রকৃতির এক জীবন্ত বিস্ময়। শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যই নয়, এই দৃশ্য প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীর মনকেও।
তবে সূর্যমুখী শুধুই কি রূপবতী? মোটেও নয়। ‘হেলিয়ানথাস’ নামের এই বর্ষজীবী তেলজাতীয় ফসলটি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। বর্তমানে কিরণী (ডিএস-১), বারি সূর্যমুখী-২ ও হাইসান-৩৩ জাতগুলো কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। সূর্যমুখী শুধু সৌন্দর্য ছড়ায় না—এটি মাটি উর্বর করে, দেয় তেল, জ্বালানি এবং কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
বাংলা ডিপার্টমেন্টে এক শিক্ষার্থী বলেন,
লুদের রাজ্যে সবুজের ছোঁয়া, আর সেই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ছুটে আসছে মানুষ। এই ফুল শুধু চোখ নয়, ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের গভীরেও। কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘রাত্রি শেষে কখন আবার, তোমার বাগানজুড়ে ফোটে সূর্যমুখী।
শুধু শিক্ষার্থীই নয়, সৌন্দর্যপ্রেমী দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ এই অপরূপ ফুলের মেলা দেখে। ক্যাম্পাস ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন,
আমি প্রথমবার এরকম সূর্যমুখী বাগানে আসছি, এর আগে নানা ব্যস্ততার জন্য কখনোই আসা হয়নি। এবার প্রথম আসলাম। খুবই ভালো লাগছে। চারদিকে সূর্যমুখী। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন আরো ফুটিয়ে তুলেছে।
নতুন পরিচয়ে নোবিপ্রবি
আজ সূর্যমুখী শুধু একটি ফুল নয়, এটি নোবিপ্রবির প্রাণপ্রবাহের প্রতীক। এটি একটি প্রাকৃতিক চিত্রকল্প—যেখানে জ্ঞান, প্রকৃতি ও আবেগ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। হয়তো আগামী দিনের কোনো আগন্তুক হঠাৎ এসে দাঁড়াবে এই হলুদ-সবুজ রাজ্যে। তার চোখেও ফুটে উঠবে সেই একই বিস্ময়, যেমন ফুটে থাকে সূর্যমুখীর পাপড়িতে ভোরের প্রথম রোদ।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মাগুরায় রোমহর্ষক ঘটনা! জীবন্ত মাটিচাপা দিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীকে হত্যাচেষ্টা

সূর্যমুখীর হাসিতে মুখরিত নোবিপ্রবি: ভোরের আলোয় জেগে ওঠে এক স্বপ্নীল প্রান্তর

পোস্ট হয়েছেঃ ০২:১৫:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
ভোরের আলো ছুঁয়ে যায় যখন ১০১ একরের সবুজ ক্যাম্পাস, তখন যেন জেগে ওঠে এক রঙিন স্বপ্ন। বাতাসে মিশে যায় বৃষ্টিভেজা মাটির ঘ্রাণ, সাথে যোগ হয় সূর্যমুখী ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ। এই আবেশময় সকালে, ঘাসের ডগায় আলো খেলে গেলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) প্রাঙ্গণ যেন রূপ নেয় এক জীবন্ত চিত্রকর্মে—যেখানে প্রকৃতি নিজেই হয়ে ওঠে চিত্রকর, আর সূর্যমুখী হয়ে ওঠে তার তুলির রং।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের দক্ষিণ প্রান্ত ও একাডেমিক ভবনের সামনের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে যতদূর চোখ যায়, শুধুই হলুদের দোলা—সেই সাথে মাঝে মাঝে সবুজের কোমল ছোঁয়া। মার্চ ও এপ্রিল যেন নোবিপ্রবির বার্ষিক ক্যালেন্ডারের দুটি বিশেষ পৃষ্ঠা, যেখানে লেখা থাকে রৌদ্রছায়া মাখা সূর্যমুখীর আগমনী বার্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং সৌন্দর্যবর্ধন কমিটির আন্তরিক তত্ত্বাবধানে এ বছর সুচারুভাবে বোনা হয় সূর্যমুখীর বীজ। সেই চেষ্টার ফল আজ সকলের চোখের সামনে—প্রকৃতির এক জীবন্ত বিস্ময়। শুধুমাত্র ক্যাম্পাসের সৌন্দর্যই নয়, এই দৃশ্য প্রতিনিয়ত ছুঁয়ে যাচ্ছে দর্শনার্থীর মনকেও।
তবে সূর্যমুখী শুধুই কি রূপবতী? মোটেও নয়। ‘হেলিয়ানথাস’ নামের এই বর্ষজীবী তেলজাতীয় ফসলটি বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। বর্তমানে কিরণী (ডিএস-১), বারি সূর্যমুখী-২ ও হাইসান-৩৩ জাতগুলো কৃষকদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। সূর্যমুখী শুধু সৌন্দর্য ছড়ায় না—এটি মাটি উর্বর করে, দেয় তেল, জ্বালানি এবং কৃষিক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত।
বাংলা ডিপার্টমেন্টে এক শিক্ষার্থী বলেন,
লুদের রাজ্যে সবুজের ছোঁয়া, আর সেই সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ছুটে আসছে মানুষ। এই ফুল শুধু চোখ নয়, ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের গভীরেও। কবি নির্মলেন্দু গুণের মতো বলতে ইচ্ছে করে—‘রাত্রি শেষে কখন আবার, তোমার বাগানজুড়ে ফোটে সূর্যমুখী।
শুধু শিক্ষার্থীই নয়, সৌন্দর্যপ্রেমী দর্শনার্থীরাও মুগ্ধ এই অপরূপ ফুলের মেলা দেখে। ক্যাম্পাস ঘুরতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন,
আমি প্রথমবার এরকম সূর্যমুখী বাগানে আসছি, এর আগে নানা ব্যস্ততার জন্য কখনোই আসা হয়নি। এবার প্রথম আসলাম। খুবই ভালো লাগছে। চারদিকে সূর্যমুখী। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য যেন আরো ফুটিয়ে তুলেছে।
নতুন পরিচয়ে নোবিপ্রবি
আজ সূর্যমুখী শুধু একটি ফুল নয়, এটি নোবিপ্রবির প্রাণপ্রবাহের প্রতীক। এটি একটি প্রাকৃতিক চিত্রকল্প—যেখানে জ্ঞান, প্রকৃতি ও আবেগ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। হয়তো আগামী দিনের কোনো আগন্তুক হঠাৎ এসে দাঁড়াবে এই হলুদ-সবুজ রাজ্যে। তার চোখেও ফুটে উঠবে সেই একই বিস্ময়, যেমন ফুটে থাকে সূর্যমুখীর পাপড়িতে ভোরের প্রথম রোদ।