
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে এক ব্যতিক্রমধর্মী ও প্রেরণামূলক জনসচেতনতামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। “শান্তি-শৃঙ্খলা ও প্রণয়নে এবং সামাজিক সচেতনতায় যুবদের ভূমিকা” শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। মূলত, সমাজে যুবকদের ইতিবাচক ভূমিকা জোরদার করা, তাদেরকে সচেতন করে গড়ে তোলা এবং সামাজিক দায়িত্ব পালনে উদ্বুদ্ধ করাই ছিল এ অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন জনাব মোঃ ইকবাল হাসান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “যুবসমাজ হলো একটি জাতির চালিকাশক্তি ও সম্ভাবনার প্রতিচ্ছবি। বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা যদি তাদের মেধা, মনন ও সৃজনশীলতা দিয়ে সমাজের উন্নয়নে কাজ করে, তবে একটি নিরাপদ, উন্নত এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।” তিনি যুবসমাজকে মাদক, জঙ্গিবাদ, বাল্যবিবাহ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য স্ব-উদ্যোগী হয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় যুব সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জনাব মোঃ এ কে এম সহিদুল ইসলাম, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা, রাঙ্গাবালী, পটুয়াখালী। তিনি বলেন,
“যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর দীর্ঘদিন ধরেই দেশের তরুণদের দক্ষ করে তোলার জন্য নানা প্রশিক্ষণ ও কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। আজকের এই অনুষ্ঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম যেখানে যুবসমাজ নিজেদের দায়িত্ব, ভূমিকা ও সম্ভাবনার ব্যাপারে সচেতন হতে পারছে।” তিনি আরও বলেন, যুবদের মাঝে নেতৃত্ব গুণাবলি গড়ে তোলা, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিতভাবে আয়োজন করা জরুরি। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ কামরুজ্জামান, প্রভাষক, রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ, যিনি শিক্ষাক্ষেত্রে তরুণদের মূল্যবান সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “প্রযুক্তি নির্ভর ও দ্রুত পরিবর্তনশীল এই সময়ে তরুণদের সৃজনশীলতা, নেতৃত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয়ে সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা সম্ভব। কলেজ পর্যায় থেকেই শিক্ষার্থীদের মাঝে এই চেতনা গড়ে তুলতে হবে। অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “যুব ফোরাম রাঙ্গাবালী” এবং “বিডি ক্লিন রাঙ্গাবালী” এর প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। তাঁরা সমাজে পরিচ্ছন্নতা, নাগরিক দায়িত্ব, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং যুব নেতৃত্ব বিকাশে তাঁদের সংগঠনের ভূমিকা তুলে ধরেন। সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি ছোট ছোট কাজের মধ্য দিয়েই বড় পরিবর্তন সম্ভব। সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ, পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন ও জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এই তিনটি বিষয়কে আমরা আমাদের কাজের মূলভিত্তি হিসেবে নিয়েছি।”তাঁরা ভবিষ্যতেও আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করার এবং অন্যান্য যুবকদের যুক্ত করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বক্তারা সমাজে বিদ্যমান সমস্যা যেমন—মাদকাসক্তি, বাল্যবিবাহ, সহিংসতা, জঙ্গিবাদ ইত্যাদি প্রতিরোধে যুবদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন। সেইসাথে নেতৃত্ব বিকাশ, পরিবেশ রক্ষা এবং সামাজিক সম্প্রীতির গুরুত্বও তুলে ধরা হয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল একটি উৎসবমুখর পরিবেশ। আগত অতিথি ও অংশগ্রহণকারী যুবরা এমন একটি সময়োপযোগী উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং ভবিষ্যতেও এই ধরণের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান নিয়মিত আয়োজনের দাবি জানান। এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে যে, সচেতন, সৃজনশীল ও সমাজমুখী যুবসমাজ একটি জাতিকে শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও মানবিক ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে নিতে পারে।