
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদের তিনশত আসনেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। হাইকমান্ডের নির্দেশ মতে, এবার প্রার্থী করার ক্ষেত্রে দলের ত্যাগী এবং ক্লিন ইমেজের নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। একশত আসনে প্রাধান্য দেওয়া হবে তরুণ নেতাদের। নিজ নিজ সংসদীয় আসনে প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে চলছে নেতাদেরও দৌড়ঝাঁপ। রাজনৈতিক মাঠে নেই আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। এদিকে, সংস্কার ও পতিত স্বৈরশাসক গোষ্ঠীর বিচার ছাড়া নির্বাচন নয় বললেও- ইতিমধ্যে জামায়াত, বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলন, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদও তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে উপজেলা বিএনপির সভাপতি সম্ভাব্য প্রার্থী মোহাম্মদ কামরুল হুদা এবং জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমীর ডাক্তার সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ভোটারদের মন জয় করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে বিএনপি- জামায়াতের দুই প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এমপি থাকাকালীন চৌদ্দগ্রামের বিভিন্ন সেক্টরে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি জামায়াত ইসলামীর দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হলে, চৌদ্দগ্রামে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করবেন বলে ভোটারদের মনজয় করতে এবং সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
এরই মধ্যে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী মোহাম্মদ কামরুল হুদা মাঠে কাজ শুরু করেছেন। গত প্রায় দুই যুগ ধরে সমাজ সেবার মধ্যদিয়ে চৌদ্দগ্রামের প্রতিটি এলাকার সাধারন মানুষের সার্বিক সহায়তার মাধ্যমে অর্জন করেছেন ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা। তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কঠোর পরিশ্রমের পাশাপাশি অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা জেল ঝুলুম উপেক্ষা করে, বীরদর্পে রাজপথে সৎ সাহসী একজন নেতা হিসেবে দল পরিচালনা করে চৌদ্দগ্রাম বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করে তুলেছেন। ফলে চৌদ্দগ্রামের নির্দলীয় সাধারন মানুষের গ্রহনযোগ্যতা ও ভালবাসাকে পূঁজি করে, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মাধ্যমে, আসন্ন নির্বাচনে জনগনের দেয়া মূল্যবান ভোটে তিনি নির্বাচিত হলে- চৌদ্দগ্রামকে উন্নয়নের মডেল একটি উপজেলায় রূপান্তিত করার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন বলে- ভোটারদের মনজয় করতে এবং সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
দলীয় সূত্র জানায়, চৌদ্দগ্রামে মোহাম্মদ কামরুল হুদার বিকল্প কোন নেতা নেই! চৌদ্দগ্রাম বিএনপিতে কোন গ্রুপিং নেই। তবে রাজাকারের চরিত্র নিয়ে দলের ক্ষতিকারক কিছু কিছু ব্যক্তি রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ জামায়াতের অর্থযোগানে বিএনপির পতাকার তলে থেকে কতেক ব্যক্তি উল্টো সাতার দিচ্ছে বলে স্থানীয় নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেছেন।
বিশ্বস্ত আরেকটি সূত্র জানায়, দলীয় আদর্শিক রাজনীতি করার কারণে জামায়াত ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ডাক্তার সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নির্দিষ্ট ভোটার রয়েছে। এটা জামায়াতের জন্য ইতিবাচক। তবে, জামায়াত নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেমন মাতামাতি দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে নির্দলীয় ভোটাররা তাদের নিয়ে কী ভাবছে তা ভোটের ফলাফল ছাড়া ধারনা করা মুশকিল। পেইজবুকে চৌদ্দগ্রামের জামায়াত ইসলামীর নেতাদের ব্যাপক প্রচারণায় দৃশ্যমানতা মানেই জনপ্রিয়তা নয়। তাদের প্রচারণা ও উশৃংখলতা এবং সাবেক নেতাদের মূল্যায়ন না করা, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা আজ আলোচনায় নেই। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত লাইভ, ভিডিও ও স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জামায়াত নেতারা নিজেদের জনপ্রিয় করে তুলতে চাইছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সম্প্রতি চৌদ্দগ্রামের রাজনীতি হিসেব নিকেশ পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে আসা তথ্য চিত্রে দেখা যায়, উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের চিরশত্রু আওয়ামী লীগের অনেক আলোচিত কাহিনী। আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহন না করলেও- চৌদ্দগ্রামে জামায়াত ইসলামীর প্রার্থী জয়লাভ করুক এটা তারা কখনো চাইবেনা। অতীতে এই দুই দলের মধ্যে যারাই এমপি হিসেবে ক্ষমতার চেয়ারে বসেছিল, তারাই প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে একে অপরকে খুন-খারাবি এবং রগ কাটা সহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল। আওয়ামীলীগ বনাম জামায়াত, যে দলের এমপি ক্ষমতায় এসেছিল অপর দলকে ঘায়েল করার জন্য- প্রতিহিংসায় মেতে উঠে একের পর এক হত্যাকান্ড এবং মিথ্যা মামলায় হয়রানি সহ দাঙ্গা হাঙ্গামা ও সন্ত্রাসীমূলক কার্যকলাপ আজও অব্যাহত চালিয়ে আসছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর চৌদ্দগ্রামের প্রতিটি সেক্টর দখলে নিয়েছে জামায়াত। আওয়ামীলীগের অনেক নেতাকে ছাপে রেখে তাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে দেয়ার বিনিময়ে- জামায়াতকে সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দেয়া কতেক নেতারাও নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে পল্টি নেয়ার প্রতিক্ষায় দিন গুনছেন বলে সূত্র জানিয়েছেন। নিজ দলের বাহিরে বিশাল একটি ভোটের অংশ, জামায়াত প্রার্থীর বিপক্ষে যাবে বলে মন্তব্য করছেন নিরপেক্ষ জনগন।
উপজেলার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আসন্ন নির্বাচনে তাঁরা সৎ, যোগ্য ও এলাকার উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ প্রার্থীকে বেছে নিতে চান। ভোটাররা জানান, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এমন প্রার্থীই তাঁদের পছন্দ, যিনি চিন্তা ও মননে অপরিসীম দেশপ্রেমে উজ্জীবিত এবং আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান রাখবেন। সবমিলিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই নতুন নেতৃত্ব দেখতে এমপি নির্বাচিত করতে চাইবেন চৌদ্দগ্রামের ভোটাররা।