০৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রদ্ধা ও প্রার্থনায় সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরোর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম দিন

  • মোঃ হাসান আলী
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
  • 41

 

পার্বত্য বৌদ্ধ সমাজের অবিসংবাদিত ধর্মগুরু মহামান্য ৪র্থ সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরোর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর)  প্রথম দিনে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মগবান শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, চাকমা সার্কেল চীফ। বিশেষ অতিথি ও বিশেষ পূণ্যার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৯৯ নং রাঙামাটি সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট দীপেন দেওয়ান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাবু দেবপ্রসাদ দেওয়ান, সদস্য, জেলা পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের, সভাপতি—পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

বক্তারা তাঁর জীবন ও কর্ম তুলে ধরে বলেন, ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথের ছিলেন সম্যক কর্মে বিশ্বাসী এক মহান মানবতাবাদী। বুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আজীবন “বহুজন সুখায়, বহুজন হিতায়” নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। যেখানে অন্ধকার ছিল, সেখানে আলোর মশাল জ্বালানোই ছিল তাঁর ব্রত। শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ বিস্তারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং ধর্মান্ধতার বিপরীতে অহিংসা ও সদ্ধর্মের বাণী প্রচার করেছেন দৃঢ় প্রত্যয়ে।

 

বক্তারা আরও বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে দানশীল—দান করতেন, দান গ্রহণ করতেন না। কেউ শ্রদ্ধাবশত তাঁকে দান করলে তা অকাতরে বিলিয়ে দিতেন অনাথ শিশুদের মাঝে। তাঁর এই মানবিক চেতনাশক্তি থেকেই গড়ে ওঠে কাচালং শিশু সদন, যা আজ অসংখ্য আলোকিত মানুষের জন্ম দিয়েছে। এই শিশু সদন থেকে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ডাক্তার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। বক্তারা বলেন, তাঁর মহাপ্রয়াণ সত্য হলেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ, দর্শন ও মানবিক কর্মধারা তাঁকে চিরঅমর করে রাখবে।

 

প্রথমদিকে তাঁর সমাজসেবামূলক চিন্তাধারা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেননি। তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়, অপপ্রচারের শিকারও হতে হয়। কিন্তু এসব বাধা উপেক্ষা করে তিনি তাঁর মহৎ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় তাঁর মানবিক দর্শন এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৭ সালে এটিএন বাংলা ও ইউনিভার্সাল বাংলাদেশ-এর যৌথ জরিপে তাঁর মহৎ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি “সাদা মনের মানুষ” উপাধিতে ভূষিত হন।

 

কর্মজীবনে তিনি বহু ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো- মগবান শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, কাচালং শিশু সদন, কদমতলী নবরত্ন বৌদ্ধ বিহার, মগবান সদ্ধর্ম পালি টোল, বালুখালী নন্দসার পালি টোল, জীবঙ্গাছড়া পালি টোল প্রভৃতি।

 

তিনি ২০০৭ সালে “সাদা মনের মানুষ”, ২০১০ সালে উপসংঘরাজ পদ, ২০১৯ সালে ৪র্থ সংঘরাজ পদ এবং ২০২৩ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার কর্তৃক “অগ্রমহাপণ্ডিত” উপাধি লাভ করেন।

 

দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগার পর ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর তিনি মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

পিপলায় দাওয়াতুল কুরআন মডেল একাডেমির শিক্ষা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

শ্রদ্ধা ও প্রার্থনায় সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরোর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার প্রথম দিন

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:০০:৩৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

 

পার্বত্য বৌদ্ধ সমাজের অবিসংবাদিত ধর্মগুরু মহামান্য ৪র্থ সংঘরাজ ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথেরোর জাতীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর)  প্রথম দিনে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার মগবান শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহারে গভীর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়, চাকমা সার্কেল চীফ। বিশেষ অতিথি ও বিশেষ পূণ্যার্থী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২৯৯ নং রাঙামাটি সংসদীয় আসনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী এবং বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট দীপেন দেওয়ান। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাবু দেবপ্রসাদ দেওয়ান, সদস্য, জেলা পরিষদ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।

 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভদন্ত প্রজ্ঞাজ্যোতি মহাথের, সভাপতি—পার্বত্য ভিক্ষু সংঘ বাংলাদেশ, কেন্দ্রীয় কমিটি।

 

বক্তারা তাঁর জীবন ও কর্ম তুলে ধরে বলেন, ভদন্ত তিলোকানন্দ মহাথের ছিলেন সম্যক কর্মে বিশ্বাসী এক মহান মানবতাবাদী। বুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি আজীবন “বহুজন সুখায়, বহুজন হিতায়” নিজেকে নিবেদিত রেখেছিলেন। যেখানে অন্ধকার ছিল, সেখানে আলোর মশাল জ্বালানোই ছিল তাঁর ব্রত। শিক্ষা ও মানবিক মূল্যবোধ বিস্তারে তিনি নিরলসভাবে কাজ করেছেন এবং ধর্মান্ধতার বিপরীতে অহিংসা ও সদ্ধর্মের বাণী প্রচার করেছেন দৃঢ় প্রত্যয়ে।

 

বক্তারা আরও বলেন, তিনি ছিলেন প্রকৃত অর্থে দানশীল—দান করতেন, দান গ্রহণ করতেন না। কেউ শ্রদ্ধাবশত তাঁকে দান করলে তা অকাতরে বিলিয়ে দিতেন অনাথ শিশুদের মাঝে। তাঁর এই মানবিক চেতনাশক্তি থেকেই গড়ে ওঠে কাচালং শিশু সদন, যা আজ অসংখ্য আলোকিত মানুষের জন্ম দিয়েছে। এই শিশু সদন থেকে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ডাক্তার, শিক্ষক, রাজনীতিবিদসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। বক্তারা বলেন, তাঁর মহাপ্রয়াণ সত্য হলেও তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ, দর্শন ও মানবিক কর্মধারা তাঁকে চিরঅমর করে রাখবে।

 

প্রথমদিকে তাঁর সমাজসেবামূলক চিন্তাধারা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারেননি। তাঁকে নিয়ে কুৎসা রটানো হয়, অপপ্রচারের শিকারও হতে হয়। কিন্তু এসব বাধা উপেক্ষা করে তিনি তাঁর মহৎ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় তাঁর মানবিক দর্শন এলাকার গণ্ডি পেরিয়ে দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি লাভ করে। ২০০৭ সালে এটিএন বাংলা ও ইউনিভার্সাল বাংলাদেশ-এর যৌথ জরিপে তাঁর মহৎ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি “সাদা মনের মানুষ” উপাধিতে ভূষিত হন।

 

কর্মজীবনে তিনি বহু ধর্মীয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানসমূহ হলো- মগবান শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, কাচালং শিশু সদন, কদমতলী নবরত্ন বৌদ্ধ বিহার, মগবান সদ্ধর্ম পালি টোল, বালুখালী নন্দসার পালি টোল, জীবঙ্গাছড়া পালি টোল প্রভৃতি।

 

তিনি ২০০৭ সালে “সাদা মনের মানুষ”, ২০১০ সালে উপসংঘরাজ পদ, ২০১৯ সালে ৪র্থ সংঘরাজ পদ এবং ২০২৩ সালে প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার কর্তৃক “অগ্রমহাপণ্ডিত” উপাধি লাভ করেন।

 

দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভোগার পর ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর তিনি মহাপ্রয়াণ লাভ করেন। আগামীকাল ২০ ডিসেম্বর বিকাল ৪টায় তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।