০৮:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ২৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুন্দরগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা, নারী আটক এম মাহফুজার রহমান

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে মোছাঃ দুলালি বেগম (৪৩) নামের এক গৃহবধূকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার দুপুর ১ টার দিকে ওই গৃহবধূকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
এর আগে সকালের দিকে মো. আবদুস সালাম মিয়া (৫০) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
আটক মোছাঃ দুলালি বেগম উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের মো. আবদুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
নিহত মো. আবদুস সালাম মিয়া পার্শ্ববর্তী রামডাকুয়া গ্রামের মো. ওমেদ আলীর ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মো. আবদুল গণি মিয়ার গোয়াল ঘরে প্রবেশ করেন মো. আবদুস সালাম মিয়া। বিষয়টি টের পান মোছাঃ দুলালী বেগম।পরে স্বামীকে বললে তিনি গোয়ালঘরে গিয়ে মো. আবদুস সালামকে দেখতে পান। এরপর মোছাঃ দুলালী বেগম আশপাশ ও তার স্বজনদের খবর দেন। তারা এসে মো. আবদুস সালাম মিয়াকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করেন। এরইমধ্যে সালাম মিয়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে পুকুরে বেঁধে রাখা হয়। ভোরের দিকে আবারও তাকে পুকুর থেকে টেনে-হিঁচড়ে তোলা হয়। এরপরে মো. আবদুল গণি মিয়ার ভাই মো. আবদুল গফুর মিয়ার গোয়াল ঘরে তাকে নিয়ে গিয়ে আবারও নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মো. আবদুল গণি মিয়া বলেন, ‘আমার একটি শ্যালো মেশিন হারিয়েছে কয়েকদিন আগে। সেই থেকে টেনশনে আছি। রাতে গোয়ালঘরে ঢুকে দেখি সালাম গরুর দড়ি ধরে আছেন। পরে খবর দিলে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ছুটে আসেন। মারধর তারাই করেছেন।’
তার স্ত্রী মোছাঃ দুলালী বেগম বলেন, ‘সপ্তাহ আগে মেশিন হারাইছে। হামার দুইটা মানুষের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম নাই। রাইতে গোয়াল ঘরে শব্দ শুনি স্বামীক ওঠে পাঠে দেই, তাই যায়া দেখে চোর গরুর ধরি খুলছে। পরে মুই বাড়ির আশপাশের লোকজন আর ভাগিশরিকদের খবর দেই। ওমরাগুলে আসিয়ে কিল-ঘুষি দেয়। যাই আসছে তাই একটা করি মাইরছে। লোকটা সকালে ঠাণ্ডাত কাপতে কাপতে মরি গেইছে।’
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, মো. আবদুস সালাম মিয়া ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন ধরে তার এ অবস্থা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। মাঝেমধ্যে ভিক্ষাও করতেন তিনি হাট-বাজারে গিয়ে। তবে চুরির বিষয়টি শুনিনি আমরা। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানান অনেকে। নিহত সালাম মিয়ার ৩ টি ছোট ছেলে আছে। বাবাকে হারিয়ে তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ এবং বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে মোছাঃ দুলালি বেগম নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান ওসি।’
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

ভয়াল ১২ই নভেম্বর স্মরণে ভোলায় আলোচনা সভা ও র‌্যালি অনুষ্ঠিত

সুন্দরগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা, নারী আটক এম মাহফুজার রহমান

পোস্ট হয়েছেঃ ০১:১৭:৫০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে গরুচোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগে মোছাঃ দুলালি বেগম (৪৩) নামের এক গৃহবধূকে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল শনিবার দুপুর ১ টার দিকে ওই গৃহবধূকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
এর আগে সকালের দিকে মো. আবদুস সালাম মিয়া (৫০) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।
আটক মোছাঃ দুলালি বেগম উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ গ্রামের মো. আবদুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
নিহত মো. আবদুস সালাম মিয়া পার্শ্ববর্তী রামডাকুয়া গ্রামের মো. ওমেদ আলীর ছেলে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে মো. আবদুল গণি মিয়ার গোয়াল ঘরে প্রবেশ করেন মো. আবদুস সালাম মিয়া। বিষয়টি টের পান মোছাঃ দুলালী বেগম।পরে স্বামীকে বললে তিনি গোয়ালঘরে গিয়ে মো. আবদুস সালামকে দেখতে পান। এরপর মোছাঃ দুলালী বেগম আশপাশ ও তার স্বজনদের খবর দেন। তারা এসে মো. আবদুস সালাম মিয়াকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করেন। এরইমধ্যে সালাম মিয়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে পুকুরে বেঁধে রাখা হয়। ভোরের দিকে আবারও তাকে পুকুর থেকে টেনে-হিঁচড়ে তোলা হয়। এরপরে মো. আবদুল গণি মিয়ার ভাই মো. আবদুল গফুর মিয়ার গোয়াল ঘরে তাকে নিয়ে গিয়ে আবারও নির্মমভাবে নির্যাতন চালানো হয়। এতে সে ঘটনাস্থলেই মারা যান।
মো. আবদুল গণি মিয়া বলেন, ‘আমার একটি শ্যালো মেশিন হারিয়েছে কয়েকদিন আগে। সেই থেকে টেনশনে আছি। রাতে গোয়ালঘরে ঢুকে দেখি সালাম গরুর দড়ি ধরে আছেন। পরে খবর দিলে প্রতিবেশী ও স্বজনরা ছুটে আসেন। মারধর তারাই করেছেন।’
তার স্ত্রী মোছাঃ দুলালী বেগম বলেন, ‘সপ্তাহ আগে মেশিন হারাইছে। হামার দুইটা মানুষের খাওয়া-দাওয়া, ঘুম নাই। রাইতে গোয়াল ঘরে শব্দ শুনি স্বামীক ওঠে পাঠে দেই, তাই যায়া দেখে চোর গরুর ধরি খুলছে। পরে মুই বাড়ির আশপাশের লোকজন আর ভাগিশরিকদের খবর দেই। ওমরাগুলে আসিয়ে কিল-ঘুষি দেয়। যাই আসছে তাই একটা করি মাইরছে। লোকটা সকালে ঠাণ্ডাত কাপতে কাপতে মরি গেইছে।’
নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানান, মো. আবদুস সালাম মিয়া ছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তি। দীর্ঘদিন ধরে তার এ অবস্থা। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতেন তিনি। মাঝেমধ্যে ভিক্ষাও করতেন তিনি হাট-বাজারে গিয়ে। তবে চুরির বিষয়টি শুনিনি আমরা। তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলেও জানান অনেকে। নিহত সালাম মিয়ার ৩ টি ছোট ছেলে আছে। বাবাকে হারিয়ে তারা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুন্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ এবং বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে মোছাঃ দুলালি বেগম নামের এক নারীকে আটক করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করে আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে। মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে বলেও জানান ওসি।’