০২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শরীয়তপুরে ধনিয়া চাষের সাফল্যের সুবাস ছড়িয়েছে সারা দেশে

  • প্রতিনিধির নাম
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৫৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • 154

শরীয়তপুর জেলায় বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসলের চাষ হয়ে থাকে।তাদের মধ্যে সরিষা, কালোজিরা, কালো ও সাদা তিল, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি অন্যতম কিন্তু ধনিয়ার চাষে দীর্ঘদিন ধরে সুনাম কুড়িয়ে আসছে শরীয়তপুর জেলার কৃষকরা। বাজারে ধনিয়ার চাহিদা ও লাভজনক দামের কারণে প্রায় ৫০ বছর ধরে শরীয়তপুর জেলার কৃষকদের মধ্যে ধনিয়া চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ কম, আবহাওয়ার অনুকূলতা এবং পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা ধনিয়া চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উৎপাদন বাড়াতে এবং চাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কৃষি বিভাগও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করে জানা যায় শরীয়তপুরে রবি মৌসুমে ধনিয়া চাষে ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বাজারে ধনিয়ার উচ্চমূল্যের কারণে এই ফসলটি কৃষকদের কাছে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৬৭৫ হেক্টরে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় ধনিয়ার সাদা ফুলের মনোরম দৃশ্যে দিগন্ত জোরে যেন সাদা মেঘ আপন খেলায় মেতে উঠেছে। সাদা ফুলের মিষ্টি সুবাসে মৌমাছি, প্রজাপতি ছুটে আসছে আর কৃষকেরা ব্যস্ত ফসলের পরিচর্যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধনিয়ার ফলন খুব ভালো হবে আশা করা যায়। বাজারে ভালো দামের আশায় কৃষকদের মনে আনন্দের রং লেগেছে এবং বাড়িতে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। তবে কৃষকরা বর্তমান সরকারের কাছে সার, বীজ ও কীটনাশকের মতো প্রয়োজনীয় উপকরণের সহায়তার প্রত্যাশা করছেন। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর মাদবরকান্দি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম মাদবর এবার ২০ শতক জমিতে ধনিয়া চাষ করেছেন। গত বছর ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় এবার তিনি চাষের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। তিনি দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, ধনিয়া চাষে ব্যাপক লাভ থাকায় আমরা ধনিয়া চাষে উৎসাহ পেয়েছি এবং এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করা যায় এবার ধনিয়া থেকে ভালো লাভ পাওয়া যাবে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।” অপর কৃষক লালু মোল্লা দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, “বাজারে ধনিয়ার দাম মণ প্রতি ৫৫০০ থেকে ৬৫০০ হাজার টাকা। অন্য ফসলের তুলনায় এটি বেশি লাভজনক। তাই আমাদের এলাকায় ধনিয়া চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে।” মজিদ গাজী নামে আরেক চাষি বলেন, “ধনিয়ার বাজার চাহিদা বেশি, উৎপাদনও ভালো হয়। সরকার যদি সার ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমাদের লাভ আরও বাড়বে।” জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, “ধনিয়া এখন শরীয়তপুরের একটি আলোচিত পণ্য। এই ফসল চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিচ্ছি এবং বাজারে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নজরদারি করছি। কোনভাবেই যেন কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হতে না পারে। ধনিয়া চাষের সৌরভে শরীয়তপুরের কৃষকেরা শুধু ফসলই ফলাচ্ছেন না, বুনছেন আগামীর সমৃদ্ধির স্বপ্ন। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই ধনিয়া বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভব হবে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুড়ীতে নিসচা’র সড়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

শরীয়তপুরে ধনিয়া চাষের সাফল্যের সুবাস ছড়িয়েছে সারা দেশে

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৫৩:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

শরীয়তপুর জেলায় বিভিন্ন মসলা জাতীয় ফসলের চাষ হয়ে থাকে।তাদের মধ্যে সরিষা, কালোজিরা, কালো ও সাদা তিল, হলুদ, মরিচ ইত্যাদি অন্যতম কিন্তু ধনিয়ার চাষে দীর্ঘদিন ধরে সুনাম কুড়িয়ে আসছে শরীয়তপুর জেলার কৃষকরা। বাজারে ধনিয়ার চাহিদা ও লাভজনক দামের কারণে প্রায় ৫০ বছর ধরে শরীয়তপুর জেলার কৃষকদের মধ্যে ধনিয়া চাষের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। উৎপাদন খরচ কম, আবহাওয়ার অনুকূলতা এবং পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকেরা ধনিয়া চাষের দিকে ঝুঁকছেন। উৎপাদন বাড়াতে এবং চাষিদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে কৃষি বিভাগও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে আলাপ করে জানা যায় শরীয়তপুরে রবি মৌসুমে ধনিয়া চাষে ব্যাপক হারে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এবং বাজারে ধনিয়ার উচ্চমূল্যের কারণে এই ফসলটি কৃষকদের কাছে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় ৬ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৬৭৫ হেক্টরে। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে দেখা যায় ধনিয়ার সাদা ফুলের মনোরম দৃশ্যে দিগন্ত জোরে যেন সাদা মেঘ আপন খেলায় মেতে উঠেছে। সাদা ফুলের মিষ্টি সুবাসে মৌমাছি, প্রজাপতি ছুটে আসছে আর কৃষকেরা ব্যস্ত ফসলের পরিচর্যায়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ধনিয়ার ফলন খুব ভালো হবে আশা করা যায়। বাজারে ভালো দামের আশায় কৃষকদের মনে আনন্দের রং লেগেছে এবং বাড়িতে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। তবে কৃষকরা বর্তমান সরকারের কাছে সার, বীজ ও কীটনাশকের মতো প্রয়োজনীয় উপকরণের সহায়তার প্রত্যাশা করছেন। শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর মাদবরকান্দি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম মাদবর এবার ২০ শতক জমিতে ধনিয়া চাষ করেছেন। গত বছর ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় এবার তিনি চাষের পরিমাণ বাড়িয়েছেন। তিনি দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, ধনিয়া চাষে ব্যাপক লাভ থাকায় আমরা ধনিয়া চাষে উৎসাহ পেয়েছি এবং এবার ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করা যায় এবার ধনিয়া থেকে ভালো লাভ পাওয়া যাবে। আগামীতে আরও বড় পরিসরে চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।” অপর কৃষক লালু মোল্লা দৈনিক বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, “বাজারে ধনিয়ার দাম মণ প্রতি ৫৫০০ থেকে ৬৫০০ হাজার টাকা। অন্য ফসলের তুলনায় এটি বেশি লাভজনক। তাই আমাদের এলাকায় ধনিয়া চাষের পরিধি দিন দিন বাড়ছে।” মজিদ গাজী নামে আরেক চাষি বলেন, “ধনিয়ার বাজার চাহিদা বেশি, উৎপাদনও ভালো হয়। সরকার যদি সার ও কীটনাশকের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমাদের লাভ আরও বাড়বে।” জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বাণিজ্য প্রতিদিনকে বলেন, “ধনিয়া এখন শরীয়তপুরের একটি আলোচিত পণ্য। এই ফসল চাষে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিচ্ছি এবং বাজারে ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে নজরদারি করছি। কোনভাবেই যেন কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হতে না পারে। ধনিয়া চাষের সৌরভে শরীয়তপুরের কৃষকেরা শুধু ফসলই ফলাচ্ছেন না, বুনছেন আগামীর সমৃদ্ধির স্বপ্ন। আশা করা যায় খুব শীঘ্রই ধনিয়া বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভব হবে।