০৯:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঘাইছড়িতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ উদযাপনঃ আলোচনা সভা ও প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

“মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি”-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন মিলনায়তনে উপজেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতের সুন্দর লেখা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে (১ম-২য় শ্রেণি) প্রথম হয় ইয়াছিন আরাফাত (শিজকমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), দ্বিতীয় ধরিত্রী চাকমা (বাঘাইছড়ি মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং তৃতীয় জান্নাতুল (কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। ‘খ’ গ্রুপে (৩য়-৫ম শ্রেণি) প্রথম তানসীন হোসেন (কাচালং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), দ্বিতীয় জান্নাতুল সুবর্ণা (মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), তৃতীয় প্রসুক্তা চাকমা (নিউ লাল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।

চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে (১ম-২য় শ্রেণি) প্রথম ও দ্বিতীয় হয় আয়নামতি আজিজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও নুসরাত জাহান ফারিয়া এবং তৃতীয় হয় ইয়াছিন আরাফাত (শিজকমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। ‘খ’ গ্রুপে (৩য়-৫ম শ্রেণি) প্রথম ও তৃতীয় হয় প্রসুক্তা চাকমা ও নিশান চাকমা (নিউ লাল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং দ্বিতীয় হয় হালিমা আক্তার আঁখি (আয়নামতি আজিজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান এবং সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহীন আল মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাচালং সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মোঃ কামাল হোসেন মীর ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মোঃ আব্দুল হালিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ কিতাব আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাহিল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ।

বক্তব্য পর্বে বক্তারা বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ নির্মাতা। একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থার উপর। তাই সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকলে তা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

তারা বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন নয়, বরং সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে একজন সুসন্তান, সুনাগরিক এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা। শুধু এ+ বা বড় ডিগ্রি পেলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না; প্রকৃত শিক্ষার জন্য দরকার নিরন্তর জ্ঞানের সাধনা, চিন্তাশীলতা ও মানসিক বিকাশ।

বক্তারা আরও বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে তিনটি প্রধান উপাদান অপরিহার্য—শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এই তিন পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ থাকলে একটি কার্যকর ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এবং শিক্ষানীতির যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি।

তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং পুঁথিগত শিক্ষার গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

সবশেষে বক্তারা জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণের মনোভাব তৈরি হয়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে।

আলোচনা পর্ব শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

নাাটোরে ছাত্রদলের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

বাঘাইছড়িতে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ উদযাপনঃ আলোচনা সভা ও প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

“মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করি, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি”-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রশাসন মিলনায়তনে উপজেলা শিক্ষা অফিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতের সুন্দর লেখা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। হাতের লেখা প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে (১ম-২য় শ্রেণি) প্রথম হয় ইয়াছিন আরাফাত (শিজকমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), দ্বিতীয় ধরিত্রী চাকমা (বাঘাইছড়ি মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং তৃতীয় জান্নাতুল (কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। ‘খ’ গ্রুপে (৩য়-৫ম শ্রেণি) প্রথম তানসীন হোসেন (কাচালং মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), দ্বিতীয় জান্নাতুল সুবর্ণা (মুসলিম ব্লক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়), তৃতীয় প্রসুক্তা চাকমা (নিউ লাল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।

চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্রুপে (১ম-২য় শ্রেণি) প্রথম ও দ্বিতীয় হয় আয়নামতি আজিজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস ও নুসরাত জাহান ফারিয়া এবং তৃতীয় হয় ইয়াছিন আরাফাত (শিজকমুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। ‘খ’ গ্রুপে (৩য়-৫ম শ্রেণি) প্রথম ও তৃতীয় হয় প্রসুক্তা চাকমা ও নিশান চাকমা (নিউ লাল্যাঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) এবং দ্বিতীয় হয় হালিমা আক্তার আঁখি (আয়নামতি আজিজ পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মেহেদী হাসান এবং সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহীন আল মামুন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কাচালং সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান মোঃ কামাল হোসেন মীর ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর মোঃ আব্দুল হালিম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বটতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মুহাম্মদ কিতাব আলী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মাহিল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল কালাম আজাদ।

বক্তব্য পর্বে বক্তারা বলেন, আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যৎ নির্মাতা। একটি জাতির উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষাব্যবস্থার উপর। তাই সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বৈষম্য থাকলে তা দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে।

তারা বলেন, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল অর্জন নয়, বরং সত্যিকারের জ্ঞান অর্জন ও নৈতিকতা বিকাশের মাধ্যমে একজন সুসন্তান, সুনাগরিক এবং দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা। শুধু এ+ বা বড় ডিগ্রি পেলেই শিক্ষিত হওয়া যায় না; প্রকৃত শিক্ষার জন্য দরকার নিরন্তর জ্ঞানের সাধনা, চিন্তাশীলতা ও মানসিক বিকাশ।

বক্তারা আরও বলেন, মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করতে তিনটি প্রধান উপাদান অপরিহার্য—শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। এই তিন পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতা, বোঝাপড়া ও দায়িত্ববোধ থাকলে একটি কার্যকর ও সমতাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। পাশাপাশি সরকারের সক্রিয় ভূমিকা এবং শিক্ষানীতির যথাযথ বাস্তবায়নও জরুরি।

তারা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে জ্ঞানার্জনে মনোনিবেশ করতে হবে। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং পুঁথিগত শিক্ষার গণ্ডি ছাড়িয়ে বাস্তবমুখী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

সবশেষে বক্তারা জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ উদযাপনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা ও অংশগ্রহণের মনোভাব তৈরি হয়, যা তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সহায়তা করে।

আলোচনা পর্ব শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিবৃন্দ। সভাপতির বক্তব্যে মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।