০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মতলব উত্তরের চরশিবপুরে জমি নিয়ে উত্তেজনা, প্রবাসীর পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা

মতলব উত্তর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামে জমি নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রবাসীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৪২) গত ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে মতলব উত্তর থানায় জমি দখলের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শারমিন আক্তার চরশিবপুর মৌজায় ক্রয়কৃত এবং বায়না সূত্রে পাওয়া ৬০ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন। তার স্বামী মো.সুমন ব্যাপারী একজন প্রবাসী। স্বামী প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে প্রতিবেশী মো. নাজমুল প্রধান, হারুন অর রশিদ প্রধান ও শাহিন প্রধান জমি দখলের চেষ্টা চালায়। অভিযোগে বলা হয়, তারা গাছপালা কেটে ফেলে, সীমানা পিলার উপড়ে জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং প্রতিবাদ করলে শারমিন আক্তারকে গালিগালাজ ও খুন-জখমের হুমকি দেয়। এমনকি লাঠি, দা ও ছেনা নিয়ে হামলার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, উক্ত জমি নন্দলালপুর মৌজার সাবেক খতিয়ান ১০৫৯ এবং বর্তমান ৪০৭৩, ৪০৮৬, ৪০৮৫ দাগভুক্ত, মোট ৬১ শতাংশ জমির মধ্যে ৪৮ শতাংশ জমি সাব কবলার মাধ্যমে এবং বাকি ১৩ শতাংশ ২৩ জন অংশীদারদের কাছ থেকে খরিদ করা হয়। এই জমির মধ্যে আ. রশিদ ব্যাপারী মালিক ২৩ শতাংশ, তার পুত্র মো. সুমন ব্যাপারী ১৭.৭৫ শতাংশ এবং শারমিন আক্তার ৫ শতাংশের মালিকানা দাবি করেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত হারুন রশিদ প্রধান ও শাহিন প্রধান, পিতা মৃত সায়েদ আলী প্রধান এবং নাজমুল হাসান, পিতা হারুন রশিদ প্রধান—তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র না দেখিয়েই জমির মালিকানা দাবি করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগকারীর দাবি।
শারমিন আক্তার বলেন, “আমি এবং আমার সন্তানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি, তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।”
প্রবাস ফেরত মো. সুমন ব্যাপারী বলেন,“আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এই জমি কিনেছি। জমির দলিলপত্র, রেজিস্ট্রি, খাজনা-খারিজ সবকিছু নিয়ম মাফিক করা আছে। আমার স্ত্রী ও পরিবার এই জমি ভোগদখল করে আসছিল। অথচ আমি দেশে ফিরে দেখি, কিছু মানুষ জোর করে আমাদের জমি দখল করতে চায়। তারা কোনো কাগজপত্র ছাড়াই আমাদের জমিতে হামলা চালিয়েছে, গাছপালা কেটে ফেলেছে, পিলার তুলে ফেলেছে। এমনকি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের হুমকি দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন,“আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি চাই প্রশাসন যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। একই সঙ্গে আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। কোনো প্রকার সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলা আমরা চাই না, তবে আমাদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ফয়েজ সরকার বলেন, “এই জমির পাশেই আমাদের সম্পত্তি রয়েছে। আমি জানি, আ. রশিদ গং ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক। হারুন রশিদ প্রধানের পক্ষ থেকে জমির মালিকানার কোনো প্রমাণপত্র দেখানো হয়নি। আমরা স্থানীয়ভাবে কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টা করলেও তারা দলিল দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল হক বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”মতলব উত্তরে তিল চাষে সোনালি সম্ভাবনা: কৃষকদের মুখে হাসি
কম খরচে বেশি লাভ, স্বাস্থ্যসম্মত তেলের চাহিদায় বাড়ছে উৎপাদন।
সফিকুল ইসলাম রানা, 
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় তিল চাষ কৃষকদের কাছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। উৎপাদন খরচ কম, পরিশ্রম কম, আর বাজারে ভালো দামের কারণে তিল চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। ভোজ্যতেল হিসেবে তিলের তেলের চাহিদা বাড়ায়, চাষিরা এই ফসলকেই দেখছেন আয়ের নতুন উৎস হিসেবে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) উপজেলার ষাটনল, বাগানবাড়ী ও জহিরাবাদ ইউনিয়নের মাঠঘাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক আমন ধান কাটার পর জমিতে তিলের চাষ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তারা এবার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশায় আছেন।
উপজেলার ষাটনল গ্রামের চাষি শাহীন আলম বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমি তিল চাষ করছি। এবার দুই বিঘা জমিতে করেছি। রাসায়নিক সার, কীটনাশক বা সেচ লাগে না। প্রতি বিঘা থেকে ৫-৬ মণ ফলন পাই, এতে আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। তিল চাষে ঝামেলা কম, লাভ বেশি।”
অন্যদিকে, জহিরাবাদ ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আগে তিল চাষ করতাম না। আলমগীর ভাইকে দেখে উৎসাহ পেয়েছি। এবার প্রথমবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এখন দেখছি, এই ফসলে খরচ কম, জমিও খালি পড়ে থাকে না। ফলনও আশানুরূপ হচ্ছে।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মতলব উত্তরে ২৩ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২৮০ জন কৃষককে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছেন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “তিল একটি লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব ফসল। কম খরচে উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিলের তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত, যার বাজার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা চাই তিল হোক মতলব উত্তরের কৃষকদের আর্থিক মুক্তির একটি পথ।”
তিনি আরও জানান, তিল চাষে যদি বাজার ব্যবস্থাপনা সহজ করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে এ অঞ্চলের কৃষির জন্য একটি নতুন দিগন্ত।
ছবি ক্যাপশন:
মতলব উত্তরের তিল ক্ষেতে কৃষক; কম খরচে লাভজনক তিল চাষে ফিরেছে কৃষকের মুখে হাসি।
মতলব উত্তরের প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য ডুমুর গাছ : স্মৃতি, সৌন্দর্য ও পরিবেশের ছোঁয়া
সফিকুল ইসলাম রানা,
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা যেন প্রকৃতির এক উন্মুক্ত গ্যালারি। গ্রামীণ পথ ধরে হাঁটলেই চোখে পড়ে নানা রকম গাছপালা, তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় হলো ডুমুর গাছ (Ficus racemosa)। এ গাছ শুধু ফলের বাহারেই নয়, শৈশবের স্মৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়—ঘনিয়ারপাড়, মোহনপুর, টরকী, ইসলামাবাদ, চরপাথালিয়া, লুধুয়া, ছেংগারচর, রুহিতারপার, এসব অঞ্চলে রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় বা পরিত্যক্ত স্থানে দেখা মেলে এই ডুমুর গাছের।
সম্প্রতি ঘনিয়ারপাড় গ্রামে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনের একটি ডুমুর গাছে থোকায় থোকায় ফল ধরেছে, যা পথচারীদের নজর কাড়ছে। কাণ্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ডুমুর যেন গাছটিকে পরিণত করেছে এক শিল্পকর্মে। এ রকম দৃশ্য কেবল ওই এলাকায় নয়, উপজেলার আরও নানা জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মনে নতুন করে উদ্দীপনা জাগাচ্ছে।
আমুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক ইসমাইল খান টিটু বলেন, “আমরা ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় এমন গাছ থেকে ডুমুর পেড়ে লবণ-মরিচের গুড়া মাখিয়ে খেতাম। আজও সেই স্বাদ ভুলতে পারিনি।”
কলেজপড়ুয়া ছাত্র ইমরান হোসেন বলেন, “এই গাছগুলো আমাদের এলাকাকে সাজিয়ে রেখেছে। শহরের মতো বিল্ডিং নয়, আমাদের সৌন্দর্য এই প্রকৃতির ভেতরে।”
পরিবেশকর্মী শামীম হোসেন বলেন, “এই গাছগুলো শুধু চোখের আনন্দই নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল করলে দেখা যাবে, পাখিরা এই গাছেই বেশি আসে, মৌমাছিরাও ভিড় করে।”
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সরকার বলেন, “আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকল্প নিচ্ছি যেখানে সরকারি রাস্তার পাশে ফলদ, ঔষধি ও ছায়াদানকারী গাছ লাগানো হবে। ডুমুর গাছ থাকবে বিশেষভাবে সংরক্ষণের আওতায়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “ডুমুর ফল ও ছাল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এটি পাখির খাদ্য ও বাসস্থান সরবরাহ করে। রাস্তার পাশে এ ধরনের গাছ সংরক্ষণে আমরা সচেষ্ট।”
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম বলেন, “এ ধরনের প্রাকৃতিক গাছ শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় ঐতিহ্য ও স্মৃতি বহন করে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ গাছগুলো সংরক্ষণ এবং আরও রোপণের জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছি।”
মতলব উত্তরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডুমুর গাছ যেন একেকটি জীবন্ত ইতিহাস, যেখানে মিশে আছে প্রকৃতি, মানুষ আর সময়ের গল্প। এই গাছগুলো শুধু পরিবেশ রক্ষা করে না, প্রজন্মের পর প্রজন্মের শৈশব স্মৃতি বহন করে। তাই আজ প্রয়োজন, এসব গাছকে কেবল দেখা নয়—সংরক্ষণ ও সম্মানের সাথে আগামীর জন্য রেখে যাওয়া।
ছবি ক্যাপশন:
মতলব উত্তরের ঘনিয়ারপাড়ে ডুমুর গাছে কাণ্ডজুড়ে থোকায় থোকায় ফল — প্রকৃতির এক অনন্য শোভা।
ছেংগারচর পৌরসভায় আবারও পাইপ ফেটে অপচয় হচ্ছে পানি, উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ
সফিকুল ইসলাম রানা,
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ পানির সরবরাহ লাইনের পাইপ ফেটে গিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় হচ্ছে। বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পৌর কর্তৃপক্ষের নিরবতা ও উদাসীনতায় হতাশ এলাকাবাসী। এতে একদিকে যেমন পানি সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি ও সড়কপথও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ঠাকুরচর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিল্লাল মেলাকারের জমির পার্শ্বের রাস্তা দিয়ে যাওয়া পানি সরবরাহ লাইনের মূল পাইপ ফেটে পানি টানা ভাবে বের হয়ে জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিদিন এভাবে পানি বের হতে থাকলে তাদের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
অন্যদিকে, ৫নং ওয়ার্ডের দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর আ. ওয়াদুদ মাষ্টারের বাড়ির সামনে সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া পাইপ ফেটে গিয়ে পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই অবস্থা প্রায় দুই মাস ধরে চললেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সফিকুল ইসলাম, সুমন আহম্মেদ, ইমরান হোসেন’সহ একাধিক বাসিন্দা জানান, “প্রায় দুই মাস ধরে পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। পানির চাপে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সড়কে কাদা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।”
তারা আরও বলেন, “শুকনো মৌসুমে এমনিতেই পানি সংকট দেখা দেয়। এভাবে পাইপ ফেটে প্রতিনিয়ত পানি অপচয় হলে পুরো পৌরসভায় পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।”
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সমাজকর্মীরা জানান, ছেংগারচর পৌরসভায় পুরনো ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে প্রায়ই পানি সরবরাহ লাইনে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই সমাধান দেরি হওয়ায় সমস্যার গভীরতা বাড়ে।
তারা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু মেরামত করলেই চলবে না, বরং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত ও কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত হেল্পলাইন চালু করে জনগণের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পৌরবাসীরা মনে করছেন, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পৌরসভার জনগণকে মারাত্মক পানি সংকটের মুখে পড়তে হবে। তাই তারা দ্রুত কার্যকর ও টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা অপারেটর মো. মিরাজ হোসেন বলেন, “মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশের জটিলতার কারণে পাইপ মেরামতের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে। আশা করছি, অল্পকিছু দিনের মধ্যেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।”
এদিকে পৌর প্রশাসক মাহমুদা কুলসুম বলেন, “নতুন করে কয়েকটি স্থানে পাইপ ফেটে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পাইপ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।”
ছবি ক্যাপশন:
ছেংগারচর পৌরসভায় পাইপ ফেটে বের হওয়া পানিতে গোসল করছেন এক ব্যক্তি—অবহেলায় অপচয় হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

শ্রীনগরে জোর পূর্বক অন্যের জমির ধান কেটে নিলেন এক প্রভাবশালী বি এন পি নেতা

মতলব উত্তরের চরশিবপুরে জমি নিয়ে উত্তেজনা, প্রবাসীর পরিবারের নিরাপত্তাহীনতা

পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:০৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
মতলব উত্তর উপজেলার ইসলামাবাদ ইউনিয়নের চরশিবপুর গ্রামে জমি নিয়ে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। প্রবাসীর স্ত্রী শারমিন আক্তার (৪২) গত ১৫ মার্চ ২০২৫ তারিখে মতলব উত্তর থানায় জমি দখলের অভিযোগ এনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শারমিন আক্তার চরশিবপুর মৌজায় ক্রয়কৃত এবং বায়না সূত্রে পাওয়া ৬০ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে ভোগদখল করে আসছেন। তার স্বামী মো.সুমন ব্যাপারী একজন প্রবাসী। স্বামী প্রবাসে থাকাকালীন সময়ে প্রতিবেশী মো. নাজমুল প্রধান, হারুন অর রশিদ প্রধান ও শাহিন প্রধান জমি দখলের চেষ্টা চালায়। অভিযোগে বলা হয়, তারা গাছপালা কেটে ফেলে, সীমানা পিলার উপড়ে জমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং প্রতিবাদ করলে শারমিন আক্তারকে গালিগালাজ ও খুন-জখমের হুমকি দেয়। এমনকি লাঠি, দা ও ছেনা নিয়ে হামলার চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, উক্ত জমি নন্দলালপুর মৌজার সাবেক খতিয়ান ১০৫৯ এবং বর্তমান ৪০৭৩, ৪০৮৬, ৪০৮৫ দাগভুক্ত, মোট ৬১ শতাংশ জমির মধ্যে ৪৮ শতাংশ জমি সাব কবলার মাধ্যমে এবং বাকি ১৩ শতাংশ ২৩ জন অংশীদারদের কাছ থেকে খরিদ করা হয়। এই জমির মধ্যে আ. রশিদ ব্যাপারী মালিক ২৩ শতাংশ, তার পুত্র মো. সুমন ব্যাপারী ১৭.৭৫ শতাংশ এবং শারমিন আক্তার ৫ শতাংশের মালিকানা দাবি করেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত হারুন রশিদ প্রধান ও শাহিন প্রধান, পিতা মৃত সায়েদ আলী প্রধান এবং নাজমুল হাসান, পিতা হারুন রশিদ প্রধান—তারা কোনো বৈধ কাগজপত্র না দেখিয়েই জমির মালিকানা দাবি করে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগকারীর দাবি।
শারমিন আক্তার বলেন, “আমি এবং আমার সন্তানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছি। স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোন প্রতিকার পাইনি, তাই বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।”
প্রবাস ফেরত মো. সুমন ব্যাপারী বলেন,“আমি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে এই জমি কিনেছি। জমির দলিলপত্র, রেজিস্ট্রি, খাজনা-খারিজ সবকিছু নিয়ম মাফিক করা আছে। আমার স্ত্রী ও পরিবার এই জমি ভোগদখল করে আসছিল। অথচ আমি দেশে ফিরে দেখি, কিছু মানুষ জোর করে আমাদের জমি দখল করতে চায়। তারা কোনো কাগজপত্র ছাড়াই আমাদের জমিতে হামলা চালিয়েছে, গাছপালা কেটে ফেলেছে, পিলার তুলে ফেলেছে। এমনকি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের হুমকি দিয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন,“আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি চাই প্রশাসন যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। একই সঙ্গে আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। কোনো প্রকার সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলা আমরা চাই না, তবে আমাদের অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।”
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড সদস্য মো. ফয়েজ সরকার বলেন, “এই জমির পাশেই আমাদের সম্পত্তি রয়েছে। আমি জানি, আ. রশিদ গং ক্রয় সূত্রে এই জমির মালিক। হারুন রশিদ প্রধানের পক্ষ থেকে জমির মালিকানার কোনো প্রমাণপত্র দেখানো হয়নি। আমরা স্থানীয়ভাবে কয়েকবার মীমাংসার চেষ্টা করলেও তারা দলিল দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।”
এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল হক বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”মতলব উত্তরে তিল চাষে সোনালি সম্ভাবনা: কৃষকদের মুখে হাসি
কম খরচে বেশি লাভ, স্বাস্থ্যসম্মত তেলের চাহিদায় বাড়ছে উৎপাদন।
সফিকুল ইসলাম রানা, 
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় তিল চাষ কৃষকদের কাছে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। উৎপাদন খরচ কম, পরিশ্রম কম, আর বাজারে ভালো দামের কারণে তিল চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। ভোজ্যতেল হিসেবে তিলের তেলের চাহিদা বাড়ায়, চাষিরা এই ফসলকেই দেখছেন আয়ের নতুন উৎস হিসেবে।
মঙ্গলবার (১৩ মে) উপজেলার ষাটনল, বাগানবাড়ী ও জহিরাবাদ ইউনিয়নের মাঠঘাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক আমন ধান কাটার পর জমিতে তিলের চাষ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় তারা এবার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশায় আছেন।
উপজেলার ষাটনল গ্রামের চাষি শাহীন আলম বলেন, “গত তিন বছর ধরে আমি তিল চাষ করছি। এবার দুই বিঘা জমিতে করেছি। রাসায়নিক সার, কীটনাশক বা সেচ লাগে না। প্রতি বিঘা থেকে ৫-৬ মণ ফলন পাই, এতে আয় হয় ১০-১২ হাজার টাকা। তিল চাষে ঝামেলা কম, লাভ বেশি।”
অন্যদিকে, জহিরাবাদ ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “আগে তিল চাষ করতাম না। আলমগীর ভাইকে দেখে উৎসাহ পেয়েছি। এবার প্রথমবার এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি। এখন দেখছি, এই ফসলে খরচ কম, জমিও খালি পড়ে থাকে না। ফলনও আশানুরূপ হচ্ছে।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মতলব উত্তরে ২৩ হেক্টর জমিতে তিলের আবাদ হয়েছে। বীজ সহায়তা দেওয়া হয়েছে ২৮০ জন কৃষককে। কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছেন ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “তিল একটি লাভজনক এবং পরিবেশবান্ধব ফসল। কম খরচে উৎপাদন সম্ভব হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তিলের তেল অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত, যার বাজার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আমরা চাই তিল হোক মতলব উত্তরের কৃষকদের আর্থিক মুক্তির একটি পথ।”
তিনি আরও জানান, তিল চাষে যদি বাজার ব্যবস্থাপনা সহজ করা যায়, তাহলে এটি হতে পারে এ অঞ্চলের কৃষির জন্য একটি নতুন দিগন্ত।
ছবি ক্যাপশন:
মতলব উত্তরের তিল ক্ষেতে কৃষক; কম খরচে লাভজনক তিল চাষে ফিরেছে কৃষকের মুখে হাসি।
মতলব উত্তরের প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য ডুমুর গাছ : স্মৃতি, সৌন্দর্য ও পরিবেশের ছোঁয়া
সফিকুল ইসলাম রানা,
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলা যেন প্রকৃতির এক উন্মুক্ত গ্যালারি। গ্রামীণ পথ ধরে হাঁটলেই চোখে পড়ে নানা রকম গাছপালা, তার মধ্যে সবচেয়ে ব্যতিক্রমী ও আকর্ষণীয় হলো ডুমুর গাছ (Ficus racemosa)। এ গাছ শুধু ফলের বাহারেই নয়, শৈশবের স্মৃতি, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্যও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়—ঘনিয়ারপাড়, মোহনপুর, টরকী, ইসলামাবাদ, চরপাথালিয়া, লুধুয়া, ছেংগারচর, রুহিতারপার, এসব অঞ্চলে রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙিনায় বা পরিত্যক্ত স্থানে দেখা মেলে এই ডুমুর গাছের।
সম্প্রতি ঘনিয়ারপাড় গ্রামে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের সামনের একটি ডুমুর গাছে থোকায় থোকায় ফল ধরেছে, যা পথচারীদের নজর কাড়ছে। কাণ্ডজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সবুজ ডুমুর যেন গাছটিকে পরিণত করেছে এক শিল্পকর্মে। এ রকম দৃশ্য কেবল ওই এলাকায় নয়, উপজেলার আরও নানা জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের মনে নতুন করে উদ্দীপনা জাগাচ্ছে।
আমুয়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সাংবাদিক ইসমাইল খান টিটু বলেন, “আমরা ছোটবেলায় স্কুলে যাওয়ার সময় এমন গাছ থেকে ডুমুর পেড়ে লবণ-মরিচের গুড়া মাখিয়ে খেতাম। আজও সেই স্বাদ ভুলতে পারিনি।”
কলেজপড়ুয়া ছাত্র ইমরান হোসেন বলেন, “এই গাছগুলো আমাদের এলাকাকে সাজিয়ে রেখেছে। শহরের মতো বিল্ডিং নয়, আমাদের সৌন্দর্য এই প্রকৃতির ভেতরে।”
পরিবেশকর্মী শামীম হোসেন বলেন, “এই গাছগুলো শুধু চোখের আনন্দই নয়, জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। খেয়াল করলে দেখা যাবে, পাখিরা এই গাছেই বেশি আসে, মৌমাছিরাও ভিড় করে।”
ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদৌস আলম সরকার বলেন, “আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রকল্প নিচ্ছি যেখানে সরকারি রাস্তার পাশে ফলদ, ঔষধি ও ছায়াদানকারী গাছ লাগানো হবে। ডুমুর গাছ থাকবে বিশেষভাবে সংরক্ষণের আওতায়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফয়সাল মোহাম্মদ আলী বলেন, “ডুমুর ফল ও ছাল আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এটি পাখির খাদ্য ও বাসস্থান সরবরাহ করে। রাস্তার পাশে এ ধরনের গাছ সংরক্ষণে আমরা সচেষ্ট।”
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা বেগম বলেন, “এ ধরনের প্রাকৃতিক গাছ শুধু পরিবেশ নয়, স্থানীয় ঐতিহ্য ও স্মৃতি বহন করে। আমরা গুরুত্বপূর্ণ গাছগুলো সংরক্ষণ এবং আরও রোপণের জন্য পরিকল্পনা নিচ্ছি।”
মতলব উত্তরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ডুমুর গাছ যেন একেকটি জীবন্ত ইতিহাস, যেখানে মিশে আছে প্রকৃতি, মানুষ আর সময়ের গল্প। এই গাছগুলো শুধু পরিবেশ রক্ষা করে না, প্রজন্মের পর প্রজন্মের শৈশব স্মৃতি বহন করে। তাই আজ প্রয়োজন, এসব গাছকে কেবল দেখা নয়—সংরক্ষণ ও সম্মানের সাথে আগামীর জন্য রেখে যাওয়া।
ছবি ক্যাপশন:
মতলব উত্তরের ঘনিয়ারপাড়ে ডুমুর গাছে কাণ্ডজুড়ে থোকায় থোকায় ফল — প্রকৃতির এক অনন্য শোভা।
ছেংগারচর পৌরসভায় আবারও পাইপ ফেটে অপচয় হচ্ছে পানি, উদাসীন পৌর কর্তৃপক্ষ
সফিকুল ইসলাম রানা,
চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ পানির সরবরাহ লাইনের পাইপ ফেটে গিয়ে বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় হচ্ছে। বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পৌর কর্তৃপক্ষের নিরবতা ও উদাসীনতায় হতাশ এলাকাবাসী। এতে একদিকে যেমন পানি সংকটের আশঙ্কা বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি ও সড়কপথও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ঠাকুরচর গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের বিল্লাল মেলাকারের জমির পার্শ্বের রাস্তা দিয়ে যাওয়া পানি সরবরাহ লাইনের মূল পাইপ ফেটে পানি টানা ভাবে বের হয়ে জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিদিন এভাবে পানি বের হতে থাকলে তাদের কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
অন্যদিকে, ৫নং ওয়ার্ডের দেওয়ানজীকান্দি গ্রামের সাবেক কাউন্সিলর আ. ওয়াদুদ মাষ্টারের বাড়ির সামনে সড়কের নিচ দিয়ে যাওয়া পাইপ ফেটে গিয়ে পুরো রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে পথচারী ও যানবাহনের চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই অবস্থা প্রায় দুই মাস ধরে চললেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
সফিকুল ইসলাম, সুমন আহম্মেদ, ইমরান হোসেন’সহ একাধিক বাসিন্দা জানান, “প্রায় দুই মাস ধরে পাইপ ফেটে পানি বের হচ্ছে। বারবার অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। পানির চাপে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সড়কে কাদা ও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে।”
তারা আরও বলেন, “শুকনো মৌসুমে এমনিতেই পানি সংকট দেখা দেয়। এভাবে পাইপ ফেটে প্রতিনিয়ত পানি অপচয় হলে পুরো পৌরসভায় পানির ঘাটতি দেখা দিতে পারে।”
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও সমাজকর্মীরা জানান, ছেংগারচর পৌরসভায় পুরনো ও দুর্বল অবকাঠামোর কারণে প্রায়ই পানি সরবরাহ লাইনে ফাটল দেখা দেয়। কিন্তু প্রতিবারই সমাধান দেরি হওয়ায় সমস্যার গভীরতা বাড়ে।
তারা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু মেরামত করলেই চলবে না, বরং পানি সরবরাহ ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণ নিয়মিত ও কাঠামোগত সংস্কার করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত হেল্পলাইন চালু করে জনগণের অভিযোগ দ্রুত গ্রহণ ও সমাধানের ব্যবস্থা করতে হবে।
পৌরবাসীরা মনে করছেন, যদি সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে পৌরসভার জনগণকে মারাত্মক পানি সংকটের মুখে পড়তে হবে। তাই তারা দ্রুত কার্যকর ও টেকসই সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ছেংগারচর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা অপারেটর মো. মিরাজ হোসেন বলেন, “মেশিনারিজ ও যন্ত্রাংশের জটিলতার কারণে পাইপ মেরামতের কাজ বিলম্বিত হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে। আশা করছি, অল্পকিছু দিনের মধ্যেই এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।”
এদিকে পৌর প্রশাসক মাহমুদা কুলসুম বলেন, “নতুন করে কয়েকটি স্থানে পাইপ ফেটে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব পাইপ মেরামতের কাজ সম্পন্ন করে স্বাভাবিক পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।”
ছবি ক্যাপশন:
ছেংগারচর পৌরসভায় পাইপ ফেটে বের হওয়া পানিতে গোসল করছেন এক ব্যক্তি—অবহেলায় অপচয় হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি।