০৭:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরাজগঞ্জে ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপ প্রকল্পের কাজ না পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা

সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, রুটিন মেরামত, প্লেইং এক্সেসেরিয়েজ এর কাজ করে আসছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শান্তা এন্টারপ্রাইজ। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ এবং মেরামত কাজ করার অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
চলতি বছর ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকেই দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা অফিস। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারি শিক্ষা অফিসারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে শান্তা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম শামীম। অভিযোগ রয়েছে, এস, এম, শামীম সামান্য দর্জি থেকে অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করে একটি চারতলা বিলাসবহুল ভবনসহ তিনটি বাড়ির মালিক।
কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল উত্তর সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, বয়ড়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেংলাহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এস এম শামীম দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক পর্যায়ে জোর করেই ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, রুটিন মেরামত, প্লেইং এক্সেসেরিয়েজ এর কাজ বাগিয়ে নিত। নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করতো। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তার সরবরাহ করা মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
হারুন-অর-রশিদ নামে এক শিক্ষক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বয়রাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ মেরামত করে শান্তা এন্টারপ্রাইজ। তিন বছেরের মধ্যে ওই কক্ষের সবগুলো দেয়ায় ফেঁটে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই কক্ষটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আলমপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন,  এই শান্তা এন্টারপ্রাইজ
আমার প্রতিষ্ঠানে খেল্লা সামগ্রি দিয়েছিল খুবই নিম্ন মানের যা পাঁচ মাস ও ব্যাবহার করতে পারে নাই বাচ্চারা।
আব্দুল আলীম নামে অপর এক শিক্ষক বলেন, গান্ধাইল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোলনা সরবরাহ করেছিল শান্তা এন্টারপ্রাইজ। সবগুলো দোলনা নষ্ট হয়ে গেছ।
এদিকে শামীম চলতি অর্থবছরেও এসব প্রকল্পের কাজ নিতে শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে চলতি বছর নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন শামীম। তিনি সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদের নামে ঘুষ গ্রহণের মিথ্যা অভিযোগও করেন বলে জানান একাধিক শিক্ষক।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ বলেন, বিধি অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসি’ বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু বিগত সময়ে তিনি এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে শান্তা এন্টারপ্রাইজ এসব কাজ করে। তার কাজগুলো বেশিরভাগই ছিল নিম্নমানের। তারপরও আমরা বাধ্য ছিলাম তাদের বিল দিতে। আমরা এবার নীতিমালা মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটিকেই কাজ দিচ্ছি। এতে শামীম সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নান ষড়যন্ত্র ও শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে আসছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর আমরা বিধিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। শান্তা এন্টারপ্রাইজের আগের কাজগুলোর মান ছিল অত্যন্ত খারাপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এস এম শামীম ২০১২ সাল পিপুলবাড়িয়া বাজারে দর্জির কাজ করতো। এরপর একটি এনজিওতে চাকরী নেয়। তিন বছর এনজিওতে চাকরী করার পর ২০১৫ সালে শান্তা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেয়। লাইসেন্স নিয়েই শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নেন তিনি। এসব কাজে ব্যাপক নয়ছয় করে অল্পদিনেই বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। বর্তমানে পিপুলবাড়িয়া বাজারে তার তিনটি জমি রয়েছে। যার মোট পরিমাণ ১৬ শতক। মূল্য আনুমানিক এক কোটি ২৮ লাখ টাকা। সীমান্ত বাজার এলাকায় ৫ শতক জমি র উপর বিলাসবহুল চারতলা ভবন যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা, এছাড়াও ভেন্নাবাড়ি ৭ শতক জমি বাউন্ডারি করা। শোনা যায় ঢাকাতেও তার ফ্ল্যাট রয়েছে। তার ভবন ভাড়া নিয়েই চলছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এস এম শামীম মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে দর্জি থেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
এসব বিষয় অস্বীকার করে এস এম শামীম বলেন, আমি বৈধভাবেই কাজ করেছি। কোন দুই নম্বরি কাজ করি নাই। পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেছি।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

নরসিংদীতে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু

সিরাজগঞ্জে ক্ষুদ্র মেরামত ও স্লিপ প্রকল্পের কাজ না পেয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:২০:৪৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, রুটিন মেরামত, প্লেইং এক্সেসেরিয়েজ এর কাজ করে আসছিল ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শান্তা এন্টারপ্রাইজ। দীর্ঘদিন ধরেই এসব প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ এবং মেরামত কাজ করার অভিযোগ রয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।
চলতি বছর ওই প্রতিষ্ঠানকে কাজ না দিয়ে নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিকেই দায়িত্ব দিয়েছে শিক্ষা অফিস। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে সহকারি শিক্ষা অফিসারকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে শান্তা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এস এম শামীম। অভিযোগ রয়েছে, এস, এম, শামীম সামান্য দর্জি থেকে অবৈধ উপায়ে টাকা উপার্জন করে একটি চারতলা বিলাসবহুল ভবনসহ তিনটি বাড়ির মালিক।
কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল উত্তর সরকারি প্রাথামিক বিদ্যালয়, বয়ড়াবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টেংলাহাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এস এম শামীম দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক পর্যায়ে জোর করেই ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, রুটিন মেরামত, প্লেইং এক্সেসেরিয়েজ এর কাজ বাগিয়ে নিত। নিম্নমানের সামগ্রী সরবরাহ করতো। ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই তার সরবরাহ করা মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।
হারুন-অর-রশিদ নামে এক শিক্ষক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বয়রাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ মেরামত করে শান্তা এন্টারপ্রাইজ। তিন বছেরের মধ্যে ওই কক্ষের সবগুলো দেয়ায় ফেঁটে গেছে। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ওই কক্ষটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আলমপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান বলেন,  এই শান্তা এন্টারপ্রাইজ
আমার প্রতিষ্ঠানে খেল্লা সামগ্রি দিয়েছিল খুবই নিম্ন মানের যা পাঁচ মাস ও ব্যাবহার করতে পারে নাই বাচ্চারা।
আব্দুল আলীম নামে অপর এক শিক্ষক বলেন, গান্ধাইল উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দোলনা সরবরাহ করেছিল শান্তা এন্টারপ্রাইজ। সবগুলো দোলনা নষ্ট হয়ে গেছ।
এদিকে শামীম চলতি অর্থবছরেও এসব প্রকল্পের কাজ নিতে শিক্ষা অফিস ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে যোগাযোগ করছেন। তবে চলতি বছর নীতিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যবস্থাপনা কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছে। এতে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন শামীম। তিনি সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা আবু সাঈদের নামে ঘুষ গ্রহণের মিথ্যা অভিযোগও করেন বলে জানান একাধিক শিক্ষক।
এ বিষয়ে কাজিপুর উপজেলার সহকারি শিক্ষা অফিসার আবু সাঈদ বলেন, বিধি অনুযায়ী এই প্রকল্পের কাজ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসএমসি’ বাস্তবায়ন করার কথা। কিন্তু বিগত সময়ে তিনি এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে শান্তা এন্টারপ্রাইজ এসব কাজ করে। তার কাজগুলো বেশিরভাগই ছিল নিম্নমানের। তারপরও আমরা বাধ্য ছিলাম তাদের বিল দিতে। আমরা এবার নীতিমালা মোতাবেক ম্যানেজিং কমিটিকেই কাজ দিচ্ছি। এতে শামীম সাহেব ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে নান ষড়যন্ত্র ও শিক্ষকদের হুমকি দিয়ে আসছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, এ বছর আমরা বিধিমালা অনুযায়ী এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। শান্তা এন্টারপ্রাইজের আগের কাজগুলোর মান ছিল অত্যন্ত খারাপ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এস এম শামীম ২০১২ সাল পিপুলবাড়িয়া বাজারে দর্জির কাজ করতো। এরপর একটি এনজিওতে চাকরী নেয়। তিন বছর এনজিওতে চাকরী করার পর ২০১৫ সালে শান্তা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নেয়। লাইসেন্স নিয়েই শিক্ষা অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নেন তিনি। এসব কাজে ব্যাপক নয়ছয় করে অল্পদিনেই বিপুল অর্থের মালিক বনে যান। বর্তমানে পিপুলবাড়িয়া বাজারে তার তিনটি জমি রয়েছে। যার মোট পরিমাণ ১৬ শতক। মূল্য আনুমানিক এক কোটি ২৮ লাখ টাকা। সীমান্ত বাজার এলাকায় ৫ শতক জমি র উপর বিলাসবহুল চারতলা ভবন যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা, এছাড়াও ভেন্নাবাড়ি ৭ শতক জমি বাউন্ডারি করা। শোনা যায় ঢাকাতেও তার ফ্ল্যাট রয়েছে। তার ভবন ভাড়া নিয়েই চলছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
এস এম শামীম মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে দর্জি থেকে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হওয়া নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
এসব বিষয় অস্বীকার করে এস এম শামীম বলেন, আমি বৈধভাবেই কাজ করেছি। কোন দুই নম্বরি কাজ করি নাই। পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করেছি।