০৭:৫৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অচলাবস্থা

পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে শিক্ষক-কর্মচারীরা যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী যৌথভাবে এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ডা. মোঃ মোকাররম হোসেনকে বিদ্যালয়টির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন। যদিও বিদ্যালয় থেকে পাঠানো প্যানেল প্রস্তাবে তার নাম ছিল না। সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৫ মে কোন প্রকার এজেন্ডা ছাড়াই মিটিং ডাকেন। সেখানে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ২৩ জুন আবারও মিটিংয়ের উদ্যোগ নেন, কিন্তু অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় সভাটি বাতিল হয়।
পরবর্তীতে সভাপতি একক সিদ্ধান্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক প্রকাশ ঘোষ এবং অফিস সহকারী সুভাষ মন্ডলকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। পাশাপাশি শিক্ষক সুরঞ্জনা রায়, অনিশ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং সবুজ সরদারকে শোকজ নোটিশ প্রদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভঙ্গ করে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে ১৩তম অবস্থানে থাকা সহকারী শিক্ষিকা নাজমুন নাহারকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের নামে একটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা পরে শিক্ষকরা বন্ধ করে দেন। এসব কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা, নিয়মিত ক্লাস ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, সভাপতির সঙ্গে বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তার প্রভাবেই তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “তিনি যা ইচ্ছে তাই করছেন, বিদ্যালয় যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে উঠেছে।”
অন্যদিকে, সভাপতি ড. মোকাররম হোসেন বলেন, “আমি আইন অনুযায়ী কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে যদি বোর্ড ব্যবস্থা নেয়, আমি তা মেনে নেব। তবে শিক্ষকরা আমার নির্দেশ মানছেন না।”
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ শাহজাহান আলী জানান, “বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশাকরি দ্রুত সমাধান হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, “সভাপতির কার্যক্রম সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য জানা না গেলেও অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।”
প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযুক্ত বর্তমান সভাপতির কার্যক্রমে বিদ্যালয়ে অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে শিক্ষার পরিবেশ আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে অভিভাবক ও সচেতন মহল মনে করছেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মদন উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতির কমিটি ঘোষণা

পাইকগাছার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অচলাবস্থা

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:২২:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
পাইকগাছা উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সভাপতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে শিক্ষক-কর্মচারীরা যশোর শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের নিকট লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। বিদ্যালয়ের ২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী যৌথভাবে এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যশোর বোর্ড কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ডা. মোঃ মোকাররম হোসেনকে বিদ্যালয়টির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন। যদিও বিদ্যালয় থেকে পাঠানো প্যানেল প্রস্তাবে তার নাম ছিল না। সভাপতি দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ২৫ মে কোন প্রকার এজেন্ডা ছাড়াই মিটিং ডাকেন। সেখানে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ২৩ জুন আবারও মিটিংয়ের উদ্যোগ নেন, কিন্তু অধিকাংশ সদস্য অনুপস্থিত থাকায় সভাটি বাতিল হয়।
পরবর্তীতে সভাপতি একক সিদ্ধান্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান, সহকারী শিক্ষক প্রকাশ ঘোষ এবং অফিস সহকারী সুভাষ মন্ডলকে সাময়িক বহিষ্কার করেন। পাশাপাশি শিক্ষক সুরঞ্জনা রায়, অনিশ রঞ্জন চক্রবর্তী এবং সবুজ সরদারকে শোকজ নোটিশ প্রদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ভঙ্গ করে জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে ১৩তম অবস্থানে থাকা সহকারী শিক্ষিকা নাজমুন নাহারকে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ব্যবহার করে বিদ্যালয়ের নামে একটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, যা পরে শিক্ষকরা বন্ধ করে দেন। এসব কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা, নিয়মিত ক্লাস ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অংশগ্রহণে প্রতিবাদ, মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে।
সহকারী প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, সভাপতির সঙ্গে বোর্ডের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং তার প্রভাবেই তিনি দায়িত্ব পেয়েছেন। তিনি আরও বলেন, “তিনি যা ইচ্ছে তাই করছেন, বিদ্যালয় যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে উঠেছে।”
অন্যদিকে, সভাপতি ড. মোকাররম হোসেন বলেন, “আমি আইন অনুযায়ী কাজ করেছি। আমার বিরুদ্ধে যদি বোর্ড ব্যবস্থা নেয়, আমি তা মেনে নেব। তবে শিক্ষকরা আমার নির্দেশ মানছেন না।”
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ শাহজাহান আলী জানান, “বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আশাকরি দ্রুত সমাধান হবে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, “সভাপতির কার্যক্রম সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য জানা না গেলেও অচলাবস্থা দ্রুত নিরসন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা জরুরি।”
প্রসঙ্গত, বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ১৮ ফেব্রুয়ারি শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তার ঘনিষ্ঠ বলে অভিযুক্ত বর্তমান সভাপতির কার্যক্রমে বিদ্যালয়ে অস্থিরতা চরমে পৌঁছেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। অবিলম্বে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে শিক্ষার পরিবেশ আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে অভিভাবক ও সচেতন মহল মনে করছেন।