১০:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গনকবলিত ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপুর এলাকা

  • শরীফ হোসাইন
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:৪১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫
  • 21

filter: 0; fileterIntensity: 0.0; filterMask: 0; brp_mask:0; brp_del_th:null; brp_del_sen:null; delta:null; module: video;hw-remosaic: false;touch: (-1.0, -1.0);sceneMode: null;cct_value: 0;AI_Scene: (-1, -1);aec_lux: 0.0;aec_lux_index: 0;HdrStatus: off;albedo: ;confidence: ;motionLevel: -1;weatherinfo: null;temperature: 41;

দ্বীপের মধ্যে আরেকটি দ্বীপ হলো সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪শ’ বছরের প্রাচীণ জনপদ রামদাসপুর। এ বিচ্ছিন্ন রামদাসপুর জনপদে জন্ম নেওয়া আলোকিত সন্তানরা দেশের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ পদে কমরর্ত আছেন। ভোলা সদর উপজেলার মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে ছিলেন রামদাসপুরের সন্তানরা। রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গণে আজ চারপাশে নদী আর নদী।  ঐতিহ্য হারিয়ে আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছেন এ দ্বীপের বাসিন্দারা। সরকারী কোন পদক্ষেপ না থাকায় রক্ষা করা যায়নি রামদাসপুরের মত প্রাচীণ এ জনপদ। ভোলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৪শ’ বছরের পুরানো রাজাপুরের ৭টি ওয়ার্ড। যা ছিল দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ও শস্য ভান্ডারে সমৃদ্ধ এলাকা।
হাজার হাজার পরিবার ভিটা হারা হয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু বিগত কোন সরকারই এই পুরানো রামদাসপুরকে রক্ষায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রাচীণ জনপদ বিলীন হয়ে এখনো এক টুকরো স্মৃতি রয়েছে। যে স্মৃতিতে প্রতি বছর দেশের প্রান্ত থেকে আসেন এ জনপদের সন্তানরা। গত বছরে আলোড়ন করে রামদাসপুরের বাসিন্দারা একটি মিলনমেলার আয়োজন করেছে। যেখানে ছোট-বড় সকলে অংশ নিয়ে অতীতের খোশ-গল্পে ফিরে গেছে শৈশবে। স্মৃতি মাখানো সে এক টুকরো রামদাসপুর আজ মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীনের পথে। কিছুদিন পূর্বে ভাঙ্গনরোধের একটি মানববন্ধন হলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
৩ আগষ্ট (রবিবার) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিচ্ছিন্ন এ রামদাসপুরে  এখনো প্রায় ৪ হাজারের মত মানুষ বসবাস করেন। রয়েছে ২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মসজিদ। আকাশে মেঘ আর বাতাস দেখলেই ভয়ে আতঙ্কে থাকেন রামদাসপুরের মানুষরা। চারপাশে রাক্ষুসী মেঘনা। অল্প জোয়ারেই পানি উঠে যায় বাসা বাড়ীতে। অতি জোয়ারে তো পানিতে থইথই করে পুরো গ্রাম। সম্প্রতি নি¤œচাঁপের প্রভাবে অতি জোয়ারে পুরো রামদাসের রাস্তাঘাট ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই।
অনেকের বাড়ী ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। কথা হয় সেখানকার মালেক মাঝি, নাছির উদ্দিন, সেরাজল হক, তছির মাঝি, মালেকা বেগম, মমতাজ বেগম, নার্গিস আক্তার, বিবি হাজেরাসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে। তারা বলেন, রাজাপুর এক সময়ে সমৃদ্ধশালী ছিল। কিন্তু রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গনে দিশেহারা এখানকার মানুষ। ভিটে-মাটি হারিয়েছে এখানকার মানুষ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করছে। এক সময়ে যে পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী ছিল, তারা আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে মেঘনার ভাঙ্গনে। এখন যারা রয়েছে তারা ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। আমরা এই রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রাজাপুরবাসীকে রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
রূপাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটি মেঘনায় বিলীনের পথে, অতিদ্রুত মেঘনার ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এ বর্ষাতেই বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বিএনপির নেতা মিরাজ হোসেন জানান, রামদাসপুরের মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে শেষ। চলাচলের অনুপযোগী এখন।
রাজাপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান জেলা কৃষকদল সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তসলিম বলেন,  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য চাল বরাদ্দ হয়েছে তবে আমরা টিন দাবী করেছি। এ ছাড়া নদী ভাঙ্গণরোধে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নিয়ে কয়েকবার পরিদর্শন করিয়েছি, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। রামদাসপুরবাসীর এ দূর্ভোগ কাটাতে রাস্তা সংস্কার ও স্থায়ী ভাবে ভাঙ্গণরোধ করার দাবী তুলেছেন তিনি।
বিচ্ছিন্ন রামদাসপুরকে রাক্ষুসী মেঘনার কবল থেকে বাঁচাতে আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ আসলে দ্রুতই কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন আরিফ।
এক সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াতে এগিয়ে থাকা এ জনপদে বর্তমানে বাস করা বাসিন্দারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতে মনে হয় আদিম যুগে রয়েছেন। রামদাসপুরবাসীর এ দূর্ভোগ কাটাতে সরকারের প্রতি রাস্তা সংস্কার ও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গণরোধ করার দাবী তুলেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মদন উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতির কমিটি ঘোষণা

রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গনকবলিত ভোলা সদর উপজেলার রামদাসপুর এলাকা

পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:৪১:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

দ্বীপের মধ্যে আরেকটি দ্বীপ হলো সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৪শ’ বছরের প্রাচীণ জনপদ রামদাসপুর। এ বিচ্ছিন্ন রামদাসপুর জনপদে জন্ম নেওয়া আলোকিত সন্তানরা দেশের বিভিন্ন দপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে শীর্ষ পদে কমরর্ত আছেন। ভোলা সদর উপজেলার মধ্যে শিক্ষায় এগিয়ে ছিলেন রামদাসপুরের সন্তানরা। রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গণে আজ চারপাশে নদী আর নদী।  ঐতিহ্য হারিয়ে আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করছেন এ দ্বীপের বাসিন্দারা। সরকারী কোন পদক্ষেপ না থাকায় রক্ষা করা যায়নি রামদাসপুরের মত প্রাচীণ এ জনপদ। ভোলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে ৪শ’ বছরের পুরানো রাজাপুরের ৭টি ওয়ার্ড। যা ছিল দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি ও শস্য ভান্ডারে সমৃদ্ধ এলাকা।
হাজার হাজার পরিবার ভিটা হারা হয়ে অন্যত্র বসবাস করছে। অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কিন্তু বিগত কোন সরকারই এই পুরানো রামদাসপুরকে রক্ষায় কোন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। প্রাচীণ জনপদ বিলীন হয়ে এখনো এক টুকরো স্মৃতি রয়েছে। যে স্মৃতিতে প্রতি বছর দেশের প্রান্ত থেকে আসেন এ জনপদের সন্তানরা। গত বছরে আলোড়ন করে রামদাসপুরের বাসিন্দারা একটি মিলনমেলার আয়োজন করেছে। যেখানে ছোট-বড় সকলে অংশ নিয়ে অতীতের খোশ-গল্পে ফিরে গেছে শৈশবে। স্মৃতি মাখানো সে এক টুকরো রামদাসপুর আজ মেঘনার ভাঙ্গনে বিলীনের পথে। কিছুদিন পূর্বে ভাঙ্গনরোধের একটি মানববন্ধন হলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
৩ আগষ্ট (রবিবার) সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিচ্ছিন্ন এ রামদাসপুরে  এখনো প্রায় ৪ হাজারের মত মানুষ বসবাস করেন। রয়েছে ২টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কয়েকটি মসজিদ। আকাশে মেঘ আর বাতাস দেখলেই ভয়ে আতঙ্কে থাকেন রামদাসপুরের মানুষরা। চারপাশে রাক্ষুসী মেঘনা। অল্প জোয়ারেই পানি উঠে যায় বাসা বাড়ীতে। অতি জোয়ারে তো পানিতে থইথই করে পুরো গ্রাম। সম্প্রতি নি¤œচাঁপের প্রভাবে অতি জোয়ারে পুরো রামদাসের রাস্তাঘাট ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে গেছে। মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই।
অনেকের বাড়ী ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। মানবেতর জীবন যাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। কথা হয় সেখানকার মালেক মাঝি, নাছির উদ্দিন, সেরাজল হক, তছির মাঝি, মালেকা বেগম, মমতাজ বেগম, নার্গিস আক্তার, বিবি হাজেরাসহ একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে। তারা বলেন, রাজাপুর এক সময়ে সমৃদ্ধশালী ছিল। কিন্তু রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গনে দিশেহারা এখানকার মানুষ। ভিটে-মাটি হারিয়েছে এখানকার মানুষ এখন দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে বসবাস করছে। এক সময়ে যে পরিবারগুলো ঐতিহ্যবাহী ছিল, তারা আজ নিঃস্ব হয়ে গেছে মেঘনার ভাঙ্গনে। এখন যারা রয়েছে তারা ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে। আমরা এই রাক্ষুসী মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রাজাপুরবাসীকে রক্ষার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাচ্ছি।
রূপাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন বলেন, আমাদের স্কুলটি মেঘনায় বিলীনের পথে, অতিদ্রুত মেঘনার ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এ বর্ষাতেই বিলীন হয়ে যাবে।
স্থানীয় বিএনপির নেতা মিরাজ হোসেন জানান, রামদাসপুরের মানুষের দূর্ভোগের শেষ নেই। পানিতে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে শেষ। চলাচলের অনুপযোগী এখন।
রাজাপুর ইউনিয়নের কৃতি সন্তান জেলা কৃষকদল সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসনাত তসলিম বলেন,  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা দেওয়া হয়েছে, তাদের জন্য চাল বরাদ্দ হয়েছে তবে আমরা টিন দাবী করেছি। এ ছাড়া নদী ভাঙ্গণরোধে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি নিয়ে কয়েকবার পরিদর্শন করিয়েছি, তারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। রামদাসপুরবাসীর এ দূর্ভোগ কাটাতে রাস্তা সংস্কার ও স্থায়ী ভাবে ভাঙ্গণরোধ করার দাবী তুলেছেন তিনি।
বিচ্ছিন্ন রামদাসপুরকে রাক্ষুসী মেঘনার কবল থেকে বাঁচাতে আমরা ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। বরাদ্দ আসলে দ্রুতই কাজ করার আশ্বাস দিয়েছেন ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়া উদ্দিন আরিফ।
এক সময়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াতে এগিয়ে থাকা এ জনপদে বর্তমানে বাস করা বাসিন্দারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যাতায়াতে মনে হয় আদিম যুগে রয়েছেন। রামদাসপুরবাসীর এ দূর্ভোগ কাটাতে সরকারের প্রতি রাস্তা সংস্কার ও স্থায়ীভাবে ভাঙ্গণরোধ করার দাবী তুলেছেন সেখানকার বাসিন্দারা।