
শীতকাল শেষ না হতেই রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় আমবাগানগুলোতে এবার আগাম মুকুল আসতে শুরু করেছে। বাগানগুলোতে পাতার ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে আমের মুকুল। অনেক আমবাগান মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে। তবে অতি শীতল আবহওয়া ও শৈত্যপ্রবাহের পাশাপাশি যদিও উৎকণ্ঠিত চাষিরা শীতের আবহাওয়া থেকে মুকুল বাঁচাতে বাগানগুলোতে বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেছেন। নিয়মিতভাবে আমবাগানগুলোতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। ক্ষেত্র বিশেষে ছিটানো হচ্ছে পানি। আমগাছের গোড়াতেও পানি দিচ্ছেন চাষিরা। আমচাষিরা বলছেন, গত মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের চাপাইনবাবগন্জের শিবগন্জ উপজেলাগুলে আমের ফলন আশানুরূপ। প্রকৃতির নিয়মানুযায়ী এক মৌসুমে ভালো ফলন হলে পরেরবার আমের ফলন কম হয়। এবার তারা আমের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেঁধে আছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার রাজশাহী অঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বাগানগুলোতে কিছু সময় আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। তবে রাজশাহীর বাগানগুলো মুকুলিত হলেও পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর বাগানগুলোতে ভরপুরনকরে মুকুল ফুটতে শুরু করেছে। রাজশাহীর উপকণ্ঠের কয়েকটি আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, বাগানগুলোতে অধিকাংশ গাছেই মুকুল এসেছে। কোথাও কোথাও ইতোমধ্যে ৮০ শতাংশ আমগাছ মুকুলিত হয়েছে। আবার কোথাও ৭০শতাংশ গাছে মুকুল ফুটেছে। কয়েকজন বাগান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমগাছে মুকুল আসা শুরু হতেই মৌসুমি বাগান ব্যবসায়ী ও ফড়িয়ারা মাঠে নেমে পড়েছে। তারা মুকুল দেখে বাগান কেনার জন্য মালিকদের কাছে যাচ্ছেন। তবে এখনো বাগান কেনাবেচা জমে উঠেনি। রাজশাহীর বিভাগের শিবগঞ্জ উপজেলার এলাকার বাগান রাইহান আলী বলেন, এখনো চাপাইনবাবগন্জে শীতের তীব্রতা ও কম ঠাণ্ডার প্রকোপ কমায়। সূর্যের তাপ প্রায় নেই বললেই চলে। এসব কারণে আগাম মুকুল নিয়ে চাষিদের শঙ্কা কিছুটা বেড়েছে। রোদের তাপ না পেলে এবং বেশি সময় ধরে প্রকৃতি কুয়াশায় ঢেকে থাকলে মুকুল ঝরে পড়ার ব্যাপক আশঙ্কা থাকে। এতে আমের ফলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই শীতের মধ্যে আবার বৃষ্টি হলে দ্রুত কুয়াশা কেটে যাবে। তাতে বরং আমচাষিদের জন্য আশীর্বাদ হবে, এবার বাগানগুলোতে কিছুটা আগে আগেই মুকুল আসতে শুরু করেছে। অনেক বাগানে আমগাছগুলোর অধিকাংশই মুকুলিত হয়েছে।আবহাওয়ার পরিবর্তনের থাকলে মুকুলের ক্ষতির শঙ্কা আছে। শঙ্কার কারণ নয় তবে আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলের কারণে মুকুলের ক্ষতি হয়। আমগাছে ছত্রাকের সংক্রমণ বাড়ে। মুকুলের ক্ষতি যাতে না হয় সেজন্য চাষিদের ছত্রাকনাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহী অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় ৯৬ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আনুমানিক প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টন। অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। গত বছর রাজশাহী অঞ্চলে মোট ১২ লাখ ৭ হাজার ২৬৩ টন আম উৎপাদন হয়। এবার আমের ফলন কিছুটা বাড়বে বলে আশা কৃষি বিভাগের। চাপাইনবাবগন্জ শিবগন্জ উপজেলা আমের রাজধানী বলে আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন, বাগানগুলোতে গাছে গাছে মুকুল আসা শুরু হয়েছে। গত মৌসুমে বাগানগুলোতে ভালো মুকুল এলেও তা ঝরে পড়ায় আম উৎপাদন হ্রাস পায়। এবার ভালো ফলনের আশা করছি। কুয়াশা ছাড়াও ঝড় বৃষ্টিতে মুকুলের ক্ষতি হয়। বাকিটা আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। আর সামনে কিছুদিনের মধ্যে বাগান কেনাবেচা শুরু হয়েছে এবার বাগানগুলোতে আগাম মুকুল এসেছে। গত বছর মুকুল এলেও কুয়াশার কারণে মুকুলের বেশি ক্ষতি হয়েছিল। ফলে ফলনও কম হয়েছিল। এবার বেশি মুকুল হবে বলে আশা করছি। আর চাষিদের গাছের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শও দিচ্ছে ।