০৮:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সৈকত দখল করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা

 পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে গড়ে ওঠা ‘সরদার মার্কেট’, যা স্থানীয়দের কাছে ‘টাইলস্ মার্কেট’ নামে পরিচিত। কাঠ, টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত এই স্থাপনাটি ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌর প্রশাসনের আশঙ্কা, এখানে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা সত্ত্বেও মার্কেটটির মালিক ঢাকা লালবাগের বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম হিরু স্থাপনাটি সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কাঠের মাচার ওপর ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে তৈরি হচ্ছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।
১৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৮ ফুট প্রস্থের এই মার্কেটের নিচতলায় প্রায় ৪০-৫০টি দোকান রয়েছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করেন। এতে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের মধ্যে সর্বক্ষণ বিরাজ করছে আতঙ্ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, ‘মার্কেটের কাঠামো এতটাই দুর্বল, যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। অথচ মালিক পক্ষ এই কাঠামোর উপরেই দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ করছেন। এতে আমরা দিন দিন আতঙ্কিত হচ্ছি। পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়েই এখানে ব্যবসা করছি।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা কুয়াকাটাবাসী’র সভাপতি হাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, ‘একদিকে কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চলছে, অন্যদিকে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এতে কুয়াকাটার সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা—ধরা’র সমন্বয়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘উচ্চ আদালত কুয়াকাটার খাজুরা থেকে কাউয়ার চর পর্যন্ত বেরিবাঁধের বাইরের সম্পূর্ণ এলাকাকে সমুদ্রসৈকত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই এখানে ব্যক্তিমালিকানা জমি থাকার সুযোগ নেই। কুয়াকাটার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটটি সরিয়ে না নিলে সৈকত তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারাবে, যা পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি।’
তবে মার্কেটের মালিক দাবি করা সাজেদুল ইসলাম হিরু’র দাবি, এটি তার নিজস্ব জমি এবং মার্কেটের স্থাপনার কাজ প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়ে করা হচ্ছে। এছাড়া এ জমির বিষয়ে প্রশাসনের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে আদালতের একটি রায়ের কপি পাঠিয়ে জানান, একটি পক্ষ জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলো। ওই মামলার রায়ে জেলা প্রশাসককে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দখলদারদের সাহস বেড়ে চলেছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ সৈকত নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

লাম্পিতে বিপর্যস্ত খামারিরা

সৈকত দখল করে ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ, সৌন্দর্য হারাচ্ছে কুয়াকাটা

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:৫৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
 পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে গড়ে ওঠা ‘সরদার মার্কেট’, যা স্থানীয়দের কাছে ‘টাইলস্ মার্কেট’ নামে পরিচিত। কাঠ, টিন ও লোহার অ্যাঙ্গেল দিয়ে নির্মিত এই স্থাপনাটি ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পৌর প্রশাসনের আশঙ্কা, এখানে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তা সত্ত্বেও মার্কেটটির মালিক ঢাকা লালবাগের বাসিন্দা সাজেদুল ইসলাম হিরু স্থাপনাটি সম্প্রসারণের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় কাঠের মাচার ওপর ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে তৈরি হচ্ছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।
১৯৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩৮ ফুট প্রস্থের এই মার্কেটের নিচতলায় প্রায় ৪০-৫০টি দোকান রয়েছে। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করেন। এতে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের মধ্যে সর্বক্ষণ বিরাজ করছে আতঙ্ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, ‘মার্কেটের কাঠামো এতটাই দুর্বল, যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। অথচ মালিক পক্ষ এই কাঠামোর উপরেই দ্বিতীয় তলার নির্মাণ কাজ করছেন। এতে আমরা দিন দিন আতঙ্কিত হচ্ছি। পরিবার-পরিজনের কথা চিন্তা করে ঝুঁকি নিয়েই এখানে ব্যবসা করছি।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা কুয়াকাটাবাসী’র সভাপতি হাফিজুর রহমান আকাশ বলেন, ‘একদিকে কুয়াকাটাকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চলছে, অন্যদিকে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনার কারণে পর্যটকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। এতে কুয়াকাটার সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ধরিত্রী রক্ষায় আমরা—ধরা’র সমন্বয়ক মেজবাহউদ্দিন মাননু উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘উচ্চ আদালত কুয়াকাটার খাজুরা থেকে কাউয়ার চর পর্যন্ত বেরিবাঁধের বাইরের সম্পূর্ণ এলাকাকে সমুদ্রসৈকত হিসেবে ঘোষণা করেছেন। তাই এখানে ব্যক্তিমালিকানা জমি থাকার সুযোগ নেই। কুয়াকাটার পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ এই মার্কেটটি সরিয়ে না নিলে সৈকত তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারাবে, যা পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি।’
তবে মার্কেটের মালিক দাবি করা সাজেদুল ইসলাম হিরু’র দাবি, এটি তার নিজস্ব জমি এবং মার্কেটের স্থাপনার কাজ প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়ে করা হচ্ছে। এছাড়া এ জমির বিষয়ে প্রশাসনের সাথে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসীন সাদেকের কাছে জানতে চাইলে তিনি হোয়াটসঅ্যাপে আদালতের একটি রায়ের কপি পাঠিয়ে জানান, একটি পক্ষ জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে আদালতে মামলা দায়ের করেছিলো। ওই মামলার রায়ে জেলা প্রশাসককে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়। এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, যথাসময়ে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দখলদারদের সাহস বেড়ে চলেছে। দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত নিরাপদ সৈকত নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।