০২:১৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উত্তাল সমুদ্রে থমকে যাওয়া বোট, তলায় ফাটল—বেঁচে ফিরলেন ২৭ যাত্রী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সন্দ্বীপগামী একটি স্পিডবোট অদ্য সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে।  সন্দ্বীপ চ্যানেলে মাঝপথে বোটটির তলায় হঠাৎ ফাটল দেখা দিলে পানি ঢুকতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায় ইঞ্জিন—কারণ ইন্ধন শেষ। তবে শেষ মুহূর্তে চালকের চেষ্টায় উপকূল ঘেঁষে নিরাপদে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ২৭ যাত্রীবাহী বোটটি।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা

কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস-এর স্পিডবোটটি। যাত্রা শুরুর কিছু পরেই, এক কিলোমিটার পেরোতেই বোটের নিচে ফাটল ধরে। দ্রুতগতিতে পানি ঢুকতে থাকে বোটের ভেতর। উত্তাল সাগরে বোট দুলতে থাকে, যেকোনো মুহূর্তে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ অবস্থায় বোট চালক উপকূলের দিকে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, বোটের তেল শেষ হয়ে গেছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে চালকসহ সবাই কোনোরকমে বাঁশবাড়িয়া উপকূল ঘেঁষে বোটটিকে টেনে আনেন।

“আল্লাহর উপরই ভরসা করেছিলাম”—যাত্রী ফুহাদের অভিজ্ঞতা

বোটের যাত্রী ফুহাদ বলেন,

“আমরা ২৭ জন যাত্রী ছিলাম, তার মধ্যে তিনজন শিশু। হঠাৎ দেখি পানি উঠছে, সবাই আতঙ্কে চিৎকার করছি। চালক জানায় তেলও শেষ হয়ে গেছে। মালিকপক্ষের নম্বরে ফোন দিচ্ছি—কেউ ধরছে না। তখন শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম। ভাগ্য ভালো, শেষ পর্যন্ত উপকূল ধরেই চলে আসতে পেরেছি।”

অভিযোগ: মালিকপক্ষের গাফিলতি

ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, বোটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত পরীক্ষা না করায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।
একজন যাত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,

“জীবন হাতে নিয়ে যাই, আর ফিরে আসি মৃত্যুভয়ে। সন্দ্বীপ চ্যানেলে নৌযাত্রা যেন প্রতিদিন এক ভয়ংকর সমুদ্র-রুলেট খেলা।”

মালিকপক্ষ যা বলছে-

মালিক পক্ষ থেকে দায় অস্বীকার করা হয়েছে।
সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার জানান,

“তেলের সমস্যা হয়নি।  বরং খারাপ আবহাওয়ার কারণেই চলতে সমস্যা হচ্ছিল।  যাত্রীদের নিরাপদে তোলার সময় বোটের সামনের বাম্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।  কেউ কেউ মন্তব্য করেন—“এই অঞ্চলে প্রতিদিনই মানুষ যেন এক অদৃশ্য ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করছে। প্রশাসনের নজরদারি আরেকটু শক্ত হলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতো না।”

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

নালিতাবাড়ীতে ঐতিহ্যবাহী মহা পবিত্র ঈদে গাদীরে খুম উৎযাপন

উত্তাল সমুদ্রে থমকে যাওয়া বোট, তলায় ফাটল—বেঁচে ফিরলেন ২৭ যাত্রী

পোস্ট হয়েছেঃ ১২:০৮:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে ছেড়ে আসা সন্দ্বীপগামী একটি স্পিডবোট অদ্য সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে।  সন্দ্বীপ চ্যানেলে মাঝপথে বোটটির তলায় হঠাৎ ফাটল দেখা দিলে পানি ঢুকতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায় ইঞ্জিন—কারণ ইন্ধন শেষ। তবে শেষ মুহূর্তে চালকের চেষ্টায় উপকূল ঘেঁষে নিরাপদে পৌঁছাতে সক্ষম হয় ২৭ যাত্রীবাহী বোটটি।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা

কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস-এর স্পিডবোটটি। যাত্রা শুরুর কিছু পরেই, এক কিলোমিটার পেরোতেই বোটের নিচে ফাটল ধরে। দ্রুতগতিতে পানি ঢুকতে থাকে বোটের ভেতর। উত্তাল সাগরে বোট দুলতে থাকে, যেকোনো মুহূর্তে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়।

এ অবস্থায় বোট চালক উপকূলের দিকে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে যখন জানা যায়, বোটের তেল শেষ হয়ে গেছে। যাত্রীরা চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করলে চালকসহ সবাই কোনোরকমে বাঁশবাড়িয়া উপকূল ঘেঁষে বোটটিকে টেনে আনেন।

“আল্লাহর উপরই ভরসা করেছিলাম”—যাত্রী ফুহাদের অভিজ্ঞতা

বোটের যাত্রী ফুহাদ বলেন,

“আমরা ২৭ জন যাত্রী ছিলাম, তার মধ্যে তিনজন শিশু। হঠাৎ দেখি পানি উঠছে, সবাই আতঙ্কে চিৎকার করছি। চালক জানায় তেলও শেষ হয়ে গেছে। মালিকপক্ষের নম্বরে ফোন দিচ্ছি—কেউ ধরছে না। তখন শুধু আল্লাহকে ডাকছিলাম। ভাগ্য ভালো, শেষ পর্যন্ত উপকূল ধরেই চলে আসতে পেরেছি।”

অভিযোগ: মালিকপক্ষের গাফিলতি

ঘটনার জন্য মালিকপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, বোটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও নিয়মিত পরীক্ষা না করায় এমন ঘটনা বারবার ঘটছে।
একজন যাত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,

“জীবন হাতে নিয়ে যাই, আর ফিরে আসি মৃত্যুভয়ে। সন্দ্বীপ চ্যানেলে নৌযাত্রা যেন প্রতিদিন এক ভয়ংকর সমুদ্র-রুলেট খেলা।”

মালিকপক্ষ যা বলছে-

মালিক পক্ষ থেকে দায় অস্বীকার করা হয়েছে।
সন্দ্বীপ মেরিন সার্ভিস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার জানান,

“তেলের সমস্যা হয়নি।  বরং খারাপ আবহাওয়ার কারণেই চলতে সমস্যা হচ্ছিল।  যাত্রীদের নিরাপদে তোলার সময় বোটের সামনের বাম্পার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সন্দ্বীপের বাসিন্দারা।  কেউ কেউ মন্তব্য করেন—“এই অঞ্চলে প্রতিদিনই মানুষ যেন এক অদৃশ্য ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত করছে। প্রশাসনের নজরদারি আরেকটু শক্ত হলে এমন ঘটনা বারবার ঘটতো না।”