
নরসিংদীতে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া একের পর এক চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য উদঘাটন করে অপরাধ দমনে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত ও পেশাদার অনুসন্ধানে পাঁচটি পৃথক হত্যাকাণ্ডের রহস্য ভেদ করে মোট ১৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যায় ব্যবহৃত আলামত, ছিনতাইকৃত টাকা ও মূল্যবান মালামাল।
ধর্ষণের পর বৃদ্ধা বিধবাকে হত্যা: ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর, রায়পুরার একটি বাড়িতে ৫৩ বছর বয়সী বিধবা রাবেয়া খাতুনকে সিঁধ কেটে ঘরে ঢুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
তদন্তে উঠে আসে—স্থানীয় স্বপন ও কামাল নামের দুই ব্যক্তি পূর্ববিরোধের জেরে দুই তরুণকে ভাড়া করে এ নৃশংস ঘটনা ঘটায়। গ্রেফতারকৃত হলেন সুমন (২০), জীবন (১৯) ও স্বপন (৫৫)।
উদ্ধার: শাবল, ছেনি, ওড়না ও ধর্ষণের আলামত।
অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য চালককে খুন: চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি, বেলাবায় ষাটোর্ধ্ব চালক কাঞ্চন মিয়াকে চায়ের সঙ্গে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গ্রেফতারকৃত হলেন ইয়াকিন খান, রাশিদা, কবির হোসেন ও ইমরান মিয়া।
উদ্ধার: ব্যাটারিচালিত রিকশা।
১৩ বছরের কিশোরী তিথিকে খুন করে ডাকাতি: শেখেরচরে শিশু তিথিকে হত্যা করে তার মাকে আহত করে ডাকাত দল। লুট হয় ১০ লাখ টাকার বেশি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন রমজান শেখ লিমন, হাসিবুর রহমান শান্ত, কাউছার মিয়া ও ইমন আলী।
উদ্ধার: নগদ টাকা, হাতুড়ি, দড়ি, গ্লাভস ও পাঁচটি মোবাইল।
মাত্র ৬,৫০০ টাকার জন্য শ্রমিককে হত্যা: ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে বন্ধুরা মিলে খুন করে শ্রমিক এরশাদ মিয়াকে। গ্রেফতারকৃত ফরহাদ ও বিল্লাল রনি।
উদ্ধার: ছুরি, সাইকেল ও বিকাশ লেনদেনের রেকর্ড।
বন্ধুত্বের ফাঁদে যুবক শুভর মৃত্যু: মাধবদীতে মাদক সেবনের সময় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে শুভ মিয়াকে হত্যা করে তার তিন বন্ধু। গ্রেফতারকৃতরা হলেন হাবিবুর রহমান, কবির হোসেন ও আহম্মাদ নাঈম।
উদ্ধার: ভিকটিমের মোবাইল ফোন।
নরসিংদী পিবিআই পুলিশ সুপার জানায়, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডেই প্রযুক্তি, সিসিটিভি বিশ্লেষণ, মোবাইল ট্র্যাকিং ও ডিজিটাল ফরেনসিক ব্যবহার করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হয়। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে।
পিবিআই ব্যাটারিচালিত যানবাহনের চালকদের উদ্দেশে সতর্কবার্তা দিয়েছে—অজানা যাত্রী বা সন্দেহজনক গন্তব্যে যাবার আগে যেন তারা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেন।
পিবিআই’র এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি—প্রযুক্তিনির্ভর ও পেশাদার তদন্তই অপরাধ দমনের মূল চাবিকাঠি। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সত্য উন্মোচন এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনাই আমাদের প্রতিশ্রুতি।”