
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চল টেকনাফ যেন মাদক চোরাচালানের এক ঘূর্ণাবর্তে আটকে পড়েছে। প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিয়ানমার থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে প্রবেশ করছে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কঠোর নজরদারি ও তৎপরতা সত্ত্বেও পাচারকারীরা বারবার কৌশল পরিবর্তন করে নতুনভাবে চোরাপথ বেছে নিচ্ছে।২ জুলাই ২০২৫ তারিখে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) পরিচালিত দুটি পৃথক অভিযানে এই বাস্তবতার একটি প্রমাণ মিলেছে। প্রথম অভিযানে খুরেরমুখ এলাকার এক নারীর বাড়ির মুরগির খামার থেকে গোপনে রাখা ২৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। একইদিন ভোরে সাবরাং ইউনিয়নের আলীর ডেইল এলাকায় ৯০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই পাচারকারীকে আটক করা হয়। উভয় ক্ষেত্রেই মাদক লুকিয়ে রাখা হয়েছিল বসতবাড়ির অভ্যন্তরে—যা সমাজের অভ্যন্তরীণ বিপদ সংকেতকেই ইঙ্গিত করে।এমন ঘটনা শুধু বিচ্ছিন্ন অপরাধ নয়, বরং এটি একটি বৃহৎ চক্রের চিহ্ন। স্থানীয় মানুষদের অভিযোগ—যদিও মাঝে মাঝে কিছু চালান ধরা পড়ে, অনেক সময় বড় চালান গা ঢাকা দেয়। সীমান্তের জটিল ভৌগোলিক অবস্থান ও সামুদ্রিক পথের ব্যবহারে এই চোরাচালান দমন করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিজিবি নিয়মিতভাবে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের জিরো টলারেন্স নীতির কথা পুনরায় উল্লেখ করছে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচেষ্টায় নয়—এই সমস্যার সমাধান সম্ভব সম্মিলিত সামাজিক সচেতনতা, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের দক্ষতা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সীমান্তবর্তী জনগণের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে।মাদক শুধু সীমান্তে আটকে নেই; এটি ঢুকে পড়ছে শহর, পাড়া, মহল্লায়, ধ্বংস করছে তরুণ প্রজন্মকে। তাই টেকনাফে চলমান এই ‘নীরব যুদ্ধ’—দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য লড়াইও বটে।