০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় ওভারলোড ট্রাকে সড়ক বিপর্যস্ত, চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালুসহ ভারি মালামাল বহন করছে ১০ চাকার ওভারলোড ট্রাক। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কে দেখা দিয়েছে দেবে যাওয়া ও ফাটলের মতো সমস্যা, যা দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খুলনা সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আঠারো মাইল-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১৫ টন। এ সীমা লঙ্ঘন করে নিয়মিত ৪০-৫০ টন ওজনের মালবাহী ট্রাক চলাচল করছে, যা সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ভয়াবহ হুমকি। সড়কের প্রবেশ মুখে ওভারলোড বন্ধে বড় সাইনবোর্ড লাগানো হলেও তা মানছে না কেউ। বিশেষ করে বালুমহাল থেকে রাতের আঁধারে ভারী ট্রাকে বালু বহনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী জানান, “কুষ্টিয়া ও সিলেট থেকে ছোট ট্রাকে পাথুরে বালু আনা সম্ভব হয় না, তাই বাধ্য হয়েই বড় ট্রাক ব্যবহার করছি।”
পাইকগাছার বাইনতলায় চলমান ব্রিজ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অতিরিক্ত ওজনের ট্রাকের কারণে ভিলেজ পাইকগাছা এলাকার পিচঢালা গ্রামীণ সড়ক সম্পূর্ণরূপে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, “লস্কর, পারশেমারী ও পাইকগাছার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে। এখন রাস্তায় ধুলা ও কাদা, দুর্ঘটনা লেগেই আছে।” স্থানীয় সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান বলেন, “কিছু লোভী ব্যবসায়ী সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ধ্বংস করছে, আর সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। এটা চরম অন্যায়।” পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, “সড়কে কোথাও ট্রাফিক পুলিশ বা চেকপোস্ট নেই, যার ফলে ভারি যান অবাধে প্রবেশ করছে। জনগণকেই সচেতন হতে হবে নিজেদের রক্ষায়।”অভিযোগের বিষয়ে পাইকগাছা ঢাকা পরিবহন স্ট্যান্ড কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, “বৃষ্টির মৌসুমে সড়কের পাশে পানি জমে থাকে, যার ফলে ভারি যানবাহনের চাপে রাস্তা সহজেই দেবে যাচ্ছে।” এ বিষয়ে খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অমরেশ কুমার মন্ডল জানান, “আমরা ইতিমধ্যে ওভারলোড ট্রাক বন্ধে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, “আমি বিষয়টির অনুলিপি পেয়েছি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।” ওভারলোড ট্রাক চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পাইকগাছা ও কয়রার জনগণের চলাচলের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সড়কগুলো সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়বে। প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতাই পারে এ বিপর্যয় ঠেকাতে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

খুলনার পাইকগাছা ও কয়রায় ওভারলোড ট্রাকে সড়ক বিপর্যস্ত, চরম ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:০৬:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালুসহ ভারি মালামাল বহন করছে ১০ চাকার ওভারলোড ট্রাক। এতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সড়কে দেখা দিয়েছে দেবে যাওয়া ও ফাটলের মতো সমস্যা, যা দিন দিন আরো ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। খুলনা সড়ক ও জনপদ (সওজ) অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আঠারো মাইল-তালা-পাইকগাছা-কয়রা সড়কটির সর্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা ১৫ টন। এ সীমা লঙ্ঘন করে নিয়মিত ৪০-৫০ টন ওজনের মালবাহী ট্রাক চলাচল করছে, যা সড়কের স্থায়িত্বের জন্য ভয়াবহ হুমকি। সড়কের প্রবেশ মুখে ওভারলোড বন্ধে বড় সাইনবোর্ড লাগানো হলেও তা মানছে না কেউ। বিশেষ করে বালুমহাল থেকে রাতের আঁধারে ভারী ট্রাকে বালু বহনের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী জানান, “কুষ্টিয়া ও সিলেট থেকে ছোট ট্রাকে পাথুরে বালু আনা সম্ভব হয় না, তাই বাধ্য হয়েই বড় ট্রাক ব্যবহার করছি।”
পাইকগাছার বাইনতলায় চলমান ব্রিজ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত অতিরিক্ত ওজনের ট্রাকের কারণে ভিলেজ পাইকগাছা এলাকার পিচঢালা গ্রামীণ সড়ক সম্পূর্ণরূপে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, “লস্কর, পারশেমারী ও পাইকগাছার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন এই রাস্তায় চলাচল করে। এখন রাস্তায় ধুলা ও কাদা, দুর্ঘটনা লেগেই আছে।” স্থানীয় সাংবাদিক ফসিয়ার রহমান বলেন, “কিছু লোভী ব্যবসায়ী সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক ধ্বংস করছে, আর সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। এটা চরম অন্যায়।” পাইকগাছা নাগরিক কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামাল জাহাঙ্গীর বলেন, “সড়কে কোথাও ট্রাফিক পুলিশ বা চেকপোস্ট নেই, যার ফলে ভারি যান অবাধে প্রবেশ করছে। জনগণকেই সচেতন হতে হবে নিজেদের রক্ষায়।”অভিযোগের বিষয়ে পাইকগাছা ঢাকা পরিবহন স্ট্যান্ড কমিটির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, “বৃষ্টির মৌসুমে সড়কের পাশে পানি জমে থাকে, যার ফলে ভারি যানবাহনের চাপে রাস্তা সহজেই দেবে যাচ্ছে।” এ বিষয়ে খুলনা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অমরেশ কুমার মন্ডল জানান, “আমরা ইতিমধ্যে ওভারলোড ট্রাক বন্ধে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন জানান, “আমি বিষয়টির অনুলিপি পেয়েছি। সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।” ওভারলোড ট্রাক চলাচল বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে পাইকগাছা ও কয়রার জনগণের চলাচলের একমাত্র নির্ভরযোগ্য সড়কগুলো সম্পূর্ণরূপে অচল হয়ে পড়বে। প্রশাসনের তৎপরতা এবং জনগণের সচেতনতাই পারে এ বিপর্যয় ঠেকাতে।