১২:৪২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীর শিলমান্দীতে দেয়াল তোলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ভাঙচুর! জমি বিরোধে উত্তপ্ত এলাকা

  • Mehedi Hasan
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • 15
নরসিংদীর সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নে আধা শতাংশ জমিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের তীব্র বিরোধ, দেয়াল নির্মাণ ও পরবর্তী ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সামাজিক বিভাজনে এখন প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও হস্তক্ষেপ দাবি করছে স্থানীয়রা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ জুলাই (মঙ্গলবার)। শিলমান্দী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন দাবি করেন, তার দোকানের পাশের আধা শতাংশ জমি তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। এ জমির মালিকানা দাবি করে তিনি বেশ কয়েকবার সিরাজুল ইসলাম নামে এক কারখানা মালিককে নোটিশ পাঠান এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদেও অভিযোগ করেন।
আলমগীরের ভাষ্যমতে, “ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম ও স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিনই আমি বৈধভাবে ইটের দেয়াল নির্মাণ করি।”
কিন্তু দেয়াল নির্মাণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি মোড় নেয় নাটকীয়ভাবে। ২৩ জুলাই (বুধবার) স্থানীয় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে কিছু লোক এসে দেয়াল ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ আলমগীরের।
তিনি বলেন, “চেয়ারম্যানসহ অনেকের সামনে জায়গা বুঝে পাওয়ার পরই দেয়াল তুলি। কিন্তু পরদিন হারুনুর রশিদ সাহেব দলবল নিয়ে এসে তা ভেঙে দেন। এটা সম্পূর্ণ অবিচার।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম পরিস্থিতি জানার জন্য। কাউকে হুমকি বা দেয়াল ভাঙার মতো কোনো কাজ করিনি। বরং উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। যদি দেয়াল ভাঙা হয়, তাহলে সিসিটিভি ফুটেজে থাকবেই।”
অন্যদিকে, জমির দাবিদার ও আবদুল্লাহ ড্রাইংয়ের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, “আলমগীর আগে আমার কারখানায় কাজ করত। সে কোনোভাবেই জমির মালিক নয়। আমি বৈধভাবে জমি কিনেছি এবং এর যাবতীয় কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে।”
ইউনিয়ন পরিষদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে বিভ্রান্তির ইঙ্গিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম বলেন, “এর আগেও কয়েকবার উভয় পক্ষকে নোটিশ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত বৈঠকে এক পক্ষ অনুপস্থিত ছিল, ফলে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি এখন শুধুমাত্র জমির বিরোধ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক দখল-বিরোধের প্রতিচ্ছবি। এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “দুই পক্ষের বক্তব্য না শুনে কেউ একতরফাভাবে দেয়াল তুললে, সে দায় নিয়েই কাজ করতে হবে। আর যদি দেয়াল ভাঙা হয়, তাহলে সেটা প্রমাণের দায়িত্বও তার।”
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, “ঘটনার দিন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন সভাপতি ও সেক্রেটারিও ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারা আলমগীরকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পরই সে দেয়াল তোলে এবং পরে নিজেরাই তা ভেঙে নাটক সাজায়।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুই পক্ষই জমির ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই চূড়ান্ত রায় কিংবা আদালতের নির্দেশ দেখাতে পারেনি। ফলে বিরোধ স্পষ্টভাবে অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, বিষয়টি যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়। তারা দ্রুত প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

ছাদ ধসে আহত ১০ শ্রমিক, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন হল ভবনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা

নরসিংদীর শিলমান্দীতে দেয়াল তোলার ২৪ ঘণ্টার মাথায় ভাঙচুর! জমি বিরোধে উত্তপ্ত এলাকা

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১৬:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
নরসিংদীর সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নে আধা শতাংশ জমিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের তীব্র বিরোধ, দেয়াল নির্মাণ ও পরবর্তী ভাঙচুরের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব এবং সামাজিক বিভাজনে এখন প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও হস্তক্ষেপ দাবি করছে স্থানীয়রা।
ঘটনার সূত্রপাত গত ২২ জুলাই (মঙ্গলবার)। শিলমান্দী ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন দাবি করেন, তার দোকানের পাশের আধা শতাংশ জমি তিনি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। এ জমির মালিকানা দাবি করে তিনি বেশ কয়েকবার সিরাজুল ইসলাম নামে এক কারখানা মালিককে নোটিশ পাঠান এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদেও অভিযোগ করেন।
আলমগীরের ভাষ্যমতে, “ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম ও স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার উপস্থিতিতে এক বৈঠকে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দিনই আমি বৈধভাবে ইটের দেয়াল নির্মাণ করি।”
কিন্তু দেয়াল নির্মাণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পরিস্থিতি মোড় নেয় নাটকীয়ভাবে। ২৩ জুলাই (বুধবার) স্থানীয় বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে কিছু লোক এসে দেয়াল ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ আলমগীরের।
তিনি বলেন, “চেয়ারম্যানসহ অনেকের সামনে জায়গা বুঝে পাওয়ার পরই দেয়াল তুলি। কিন্তু পরদিন হারুনুর রশিদ সাহেব দলবল নিয়ে এসে তা ভেঙে দেন। এটা সম্পূর্ণ অবিচার।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম পরিস্থিতি জানার জন্য। কাউকে হুমকি বা দেয়াল ভাঙার মতো কোনো কাজ করিনি। বরং উভয় পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছি। যদি দেয়াল ভাঙা হয়, তাহলে সিসিটিভি ফুটেজে থাকবেই।”
অন্যদিকে, জমির দাবিদার ও আবদুল্লাহ ড্রাইংয়ের মালিক সিরাজুল ইসলাম জানান, “আলমগীর আগে আমার কারখানায় কাজ করত। সে কোনোভাবেই জমির মালিক নয়। আমি বৈধভাবে জমি কিনেছি এবং এর যাবতীয় কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে।”
ইউনিয়ন পরিষদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে বিভ্রান্তির ইঙ্গিত। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেলিনা বেগম বলেন, “এর আগেও কয়েকবার উভয় পক্ষকে নোটিশ করা হয়েছিল। চূড়ান্ত বৈঠকে এক পক্ষ অনুপস্থিত ছিল, ফলে কোনো নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।”
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এটি এখন শুধুমাত্র জমির বিরোধ নয়, বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক দখল-বিরোধের প্রতিচ্ছবি। এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “দুই পক্ষের বক্তব্য না শুনে কেউ একতরফাভাবে দেয়াল তুললে, সে দায় নিয়েই কাজ করতে হবে। আর যদি দেয়াল ভাঙা হয়, তাহলে সেটা প্রমাণের দায়িত্বও তার।”
এদিকে, স্থানীয় বাসিন্দা কামরুজ্জামান পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেন, “ঘটনার দিন চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন সভাপতি ও সেক্রেটারিও ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারা আলমগীরকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা চলে যাওয়ার পরই সে দেয়াল তোলে এবং পরে নিজেরাই তা ভেঙে নাটক সাজায়।”
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দুই পক্ষই জমির ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই চূড়ান্ত রায় কিংবা আদালতের নির্দেশ দেখাতে পারেনি। ফলে বিরোধ স্পষ্টভাবে অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এলাকাবাসীর দাবি, বিষয়টি যেন আর দীর্ঘায়িত না হয়। তারা দ্রুত প্রশাসনের নিরপেক্ষ তদন্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।