০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিলুপ্তির পথে গাজীপুরের মৃৎ শিল্প

  • অরবিন্দ রায়
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৫১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
  • 24

গাজীপুরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা না পাবার কারনে  দিনে দিনে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, রুচি, আধুনিকতা ও বাজার বিশ্বায়নের ফলে বাঙালির সংস্কৃতির অংশ মৃৎশিল্প এখন  হারিয়ে যাচ্ছে।  প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া মৃৎ শিল্প পেশা ছেড়ে অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায়  চলে যাচ্ছেন  । গাজীপুর জেলার  সদর উপজেলার  কাশেমপুর,  ইছর, নারগানা, রয়েন, বইন্য, নাওয়ান, গোপিনপুর, বেগুন, কামরা, কারখানা, কাপাসিয়া উপজেলার নাওয়ান, করিহাতা, আড়াল, কুড়িহাটা, শ্রীপুর উপজেলার বরমী কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর,  কালিয়াকৈর উপজেলার পালপাড়া, রঘুনাথপুর,  চাপাইর, বেনুপুর, উল্টা পাড়া, বলিয়াদি, বাসাকৈর সহ বিভিন্ন এলাকায় যারা এখনো এই পেশায় টিকে রয়েছেন সব মিলিয়ে ভালো নেই মৃৎ শিল্পীরা । তবুও শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে এই ক্ষুদ্র শিল্পকে ধরে রেখেছেন তারা। মাটির জিনিসপত্র কতটুকু কাটবে তা নিয়েও মৃৎশিল্পীরা বেশ শংকায় রয়েছেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়া গিয়ে দেখা যায় , বিভিন্ন স্থানের  বিক্রির জন্য মৃৎশিল্পীরা তাদের নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, চায়ের কাপ  থালা, বাটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়িভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন মাটির জিনিসপত্র। গাজীপুর জেলায় মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে  কয়েক হাজার পরিবার।  বিভিন্ন উৎসবে মাটির তৈরির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়ার ভীম পাল, গোপাল পাল সহ বিভিন্ন মৃৎশিল্পীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ  নিজেরাই করে থাকে। খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, সাঁচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো, রং করাসহ প্রায় সব কাজই এখানকার নারীরা করেন। বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান জানান,
আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের  সাথে যোগাযোগ করে মৃৎশিল্পীদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্হা করার চেষ্টা করছি। মৃৎশিল্পীরা  খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন ।  রঙের কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে এসব খেলনা কিনে নিয়ে যায়। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের একসময় বিপুল কদর থাকলেও  দিনে দিনে মৃৎশিল্পীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে চিরচেনা ঐতিহ্যময় প্রাচীন এই মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ পাল পাড়া গ্রাম। পহেলা বৈশাখের, মেলা, পূজা আসলে  খানিকটা সময়ের জন্য হলেও মৃৎশিল্প তার হৃতগৌরব ফিরে পায়। এ সময় মৃৎশিল্পীরাও ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানা সামগ্রী তৈরিতে। কিন্তু বছরের অন্যান্য দিন গুলো মানবেতর জীবন-যাপন করেন  মৃৎশিল্পীরা। এ সময়  বেশি মূল্যে এসব জিনিস কিনতে আগ্রহ দেখান না ক্রেতারা। এতে মৃৎশিল্পীদের লোকসান গুনতে হয়। বাংলা নববর্ষ, পূজা, মেলায়  বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের বিপুল কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূর অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়ার ভীম  পাল, গোপাল পাল জানান,   পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। এখন আর আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা মাটির কাজ শিখতে চায় না। তারা অনেকেই অন্য পেশায় ঝুকছেন। আবার অনেকেই অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে এই পেশায়  লেগে আছেন। বর্তমানে মৃৎশিল্পীরা  অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। এরপরও কেউ তাদের  খোঁজ-খবর নেন না। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন মৃৎশিল্পীরা। অনগ্রসর  মৃৎশিল্পীদের জনগোষ্ঠীদের সাহায্যের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেন নি।  ।  মৃৎশিল্পীরা হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। । তাদের মাধ্যমেই অতীত ঐতিহ্য আজও টিকে রয়েছে। মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মহম্মদপুরে অলৌকিকভাবে প্রাণে বাঁচলো মাটি চাপা যুবক

বিলুপ্তির পথে গাজীপুরের মৃৎ শিল্প

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:৫১:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

গাজীপুরে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎ শিল্প বিলুপ্তির পথে। সরকারি সাহায্য সহযোগিতা না পাবার কারনে  দিনে দিনে মৃৎশিল্প বিলুপ্তির পথে চলে যাচ্ছে। প্রযুক্তি, রুচি, আধুনিকতা ও বাজার বিশ্বায়নের ফলে বাঙালির সংস্কৃতির অংশ মৃৎশিল্প এখন  হারিয়ে যাচ্ছে।  প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে পূর্ব পুরুষের কাছ থেকে পাওয়া মৃৎ শিল্প পেশা ছেড়ে অনেকেই পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায়  চলে যাচ্ছেন  । গাজীপুর জেলার  সদর উপজেলার  কাশেমপুর,  ইছর, নারগানা, রয়েন, বইন্য, নাওয়ান, গোপিনপুর, বেগুন, কামরা, কারখানা, কাপাসিয়া উপজেলার নাওয়ান, করিহাতা, আড়াল, কুড়িহাটা, শ্রীপুর উপজেলার বরমী কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর,  কালিয়াকৈর উপজেলার পালপাড়া, রঘুনাথপুর,  চাপাইর, বেনুপুর, উল্টা পাড়া, বলিয়াদি, বাসাকৈর সহ বিভিন্ন এলাকায় যারা এখনো এই পেশায় টিকে রয়েছেন সব মিলিয়ে ভালো নেই মৃৎ শিল্পীরা । তবুও শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে এই ক্ষুদ্র শিল্পকে ধরে রেখেছেন তারা। মাটির জিনিসপত্র কতটুকু কাটবে তা নিয়েও মৃৎশিল্পীরা বেশ শংকায় রয়েছেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়া গিয়ে দেখা যায় , বিভিন্ন স্থানের  বিক্রির জন্য মৃৎশিল্পীরা তাদের নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, চায়ের কাপ  থালা, বাটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, মুড়িভাজার ঝাঞ্জুর, চুলা ও ফুলের টবসহ বিভিন্ন মাটির জিনিসপত্র। গাজীপুর জেলায় মৃৎশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে  কয়েক হাজার পরিবার।  বিভিন্ন উৎসবে মাটির তৈরির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়ার ভীম পাল, গোপাল পাল সহ বিভিন্ন মৃৎশিল্পীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ  নিজেরাই করে থাকে। খেলনা তৈরির জন্য মাঠ থেকে মাটি আনা, মাটি নরম করা, সাঁচ বসানো, চুলায় পোড়ানো, রোদে শুকানো, রং করাসহ প্রায় সব কাজই এখানকার নারীরা করেন। বোয়ালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান জানান,
আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের  সাথে যোগাযোগ করে মৃৎশিল্পীদের জন্য বিশেষ অনুদানের ব্যবস্হা করার চেষ্টা করছি। মৃৎশিল্পীরা  খেলনাসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করেছেন ।  রঙের কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। মেলায় বিক্রির জন্য পাইকাররা এসে এসব খেলনা কিনে নিয়ে যায়। বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের একসময় বিপুল কদর থাকলেও  দিনে দিনে মৃৎশিল্পীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।  শুধু মেলা এলেই কেবল কর্মমুখর হয়ে ওঠে চিরচেনা ঐতিহ্যময় প্রাচীন এই মৃৎ শিল্পীসমৃদ্ধ পাল পাড়া গ্রাম। পহেলা বৈশাখের, মেলা, পূজা আসলে  খানিকটা সময়ের জন্য হলেও মৃৎশিল্প তার হৃতগৌরব ফিরে পায়। এ সময় মৃৎশিল্পীরাও ব্যস্ত হয়ে ওঠেন নানা সামগ্রী তৈরিতে। কিন্তু বছরের অন্যান্য দিন গুলো মানবেতর জীবন-যাপন করেন  মৃৎশিল্পীরা। এ সময়  বেশি মূল্যে এসব জিনিস কিনতে আগ্রহ দেখান না ক্রেতারা। এতে মৃৎশিল্পীদের লোকসান গুনতে হয়। বাংলা নববর্ষ, পূজা, মেলায়  বাঙালির ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পের বিপুল কদর থাকলেও বছরের অন্যান্য দিনে তারা বেশ দূর অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করেন। রঘুনাথপুর পাল পাড়ার ভীম  পাল, গোপাল পাল জানান,   পারিবারিকভাবেই তারা পৈত্রিক পেশা হিসেবে এই মাটির কাজ ধরে রেখেছে। পণ্যের রং ও নকশার কাজ নিজেরাই করে থাকে। এখন আর আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যরা মাটির কাজ শিখতে চায় না। তারা অনেকেই অন্য পেশায় ঝুকছেন। আবার অনেকেই অন্য কোনো কাজ না জানার কারণে এই পেশায়  লেগে আছেন। বর্তমানে মৃৎশিল্পীরা  অনেক কষ্টের মধ্যে দিয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। এরপরও কেউ তাদের  খোঁজ-খবর নেন না। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা পেলে মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন মৃৎশিল্পীরা। অনগ্রসর  মৃৎশিল্পীদের জনগোষ্ঠীদের সাহায্যের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ এগিয়ে আসেন নি।  ।  মৃৎশিল্পীরা হারিয়ে যাওয়া শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। । তাদের মাধ্যমেই অতীত ঐতিহ্য আজও টিকে রয়েছে। মৃৎশিল্পীদের উন্নয়নে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল।