
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নওদাবস গ্রামে গড়ে উঠেছে বিতর্কিত ‘এস এস ফোর’ ইটভাটা, যা বর্তমানে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গোপনে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করেছে।
এই ভাটার প্রাথমিক মালিক ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য জাফর আলীর ছেলে দুলাল মিয়া। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এর পরিচালনার দায়িত্ব নেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো: এরশাদুল হক।
ভাটাটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ রয়েছে যে, এটি কোনো পরিবেশগত ছাড়পত্র বা বৈধ লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে উপজেলা প্রশাসনের এক অভিযানে এই ইটভাটাকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ভাটার চিমনি ভেঙে দেয় এবং কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ঘোষণা করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের নজরদারি কমে যাওয়ার সুযোগে ভাটাটির চিমনি পুনরায় নির্মাণ করে ইট পোড়ানো শুরু করেছে সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমান পরিচালক মো: এরশাদুল হক জানান, “আমার ভাটায় প্রায় তিনশত শ্রমিক কাজ করছে, যারা জীবিকা নির্বাহের জন্য সম্পূর্ণরূপে এই ভাটার উপর নির্ভরশীল। তাদের অনুরোধ এবং পরিবারের কথা বিবেচনায় নিয়েই পুনরায় ভাটা চালু করি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি ইউনিয়ন ট্যাক্স, ভূমি কর, ভ্যাট নিয়মিত প্রদান করি। আমরা চাই আইনি প্রক্রিয়ায় ভাটা চালাতে, সরকারের কাছে অনুরোধ করছি যেন আমাদের বৈধভাবে লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।”
অঞ্চলটির স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিমনি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার কারণে আশপাশের গ্রামগুলোতে বায়ু দূষণ বাড়ছে। এতে কৃষি জমির ক্ষতি ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বেড়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তারা দ্রুত প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হাসান বলেন, “ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে জরিমানা করা হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর মামলা করছে না। আমরা তাদের মামলা করার নির্দেশ দিয়েছি, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তারা সে নির্দেশ কার্যকর করছে না।
‘এস এস ফোর’ ইটভাটার ঘটনা প্রশাসনিক নজরদারির দুর্বলতা এবং আইনের প্রয়োগে ঘাটতির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। একদিকে শ্রমিকদের জীবিকার প্রশ্ন, অন্যদিকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা—এই দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করে স্থায়ী ও আইনি সমাধান খোঁজা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে এর ফলে কেবল পরিবেশ নয়, প্রশাসনিক বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নের মুখে পড়বে।