০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জয়পুরহাটে পুকুরের মাছ লুট করতে নেমে সবাই ফিরলেও, সন্ধ্যায় মিলল মনোয়ারের মরদেহ

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি সরকারি পুকুর থেকে মনোয়ার হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ১১ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পুনট পূর্ব পাড়া গ্রামের পুকুরের ঝোপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মনোয়ার হোসেন ওই গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুকুরটির মাছ লুট করা হয়।
থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পুনট এলাকার নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ‘সরিষাগাড়ী’ নামের এই সরকারি পুকুরটি তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। নাসির উদ্দিন কালাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান ও পুনট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ফকিরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী। গতকাল সকালে স্থানীয় লোকজন পুকুরপাড়ে এসে জড়ো হন। তাঁদের অধিকাংশই বিএনপি–সমর্থিত লোকজন। তাঁরা ওই পুকুরে নেমে মাছ লুট করতে শুরু করেন। মনোয়ার হোসেনও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
মাছ লুটের পর দুপুরের দিকে লোকজন চলে যান। তবে মনোয়ার হোসেন ‘বড় মাছ ধরার অপেক্ষায়’ পুকুরেই ছিলেন। সন্ধ্যা নেমে এলেও মনোয়ার বাড়িতে ফিরছিলেন না। তখন তাঁর মা মঞ্জুয়ারা বেগম মনোয়ারকে ডাকতে পুকুরে আসেন। পুকুরের ঝোপের মধ্যে ছেলের রদেহ দেখতে পেয়ে লোকজনকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। মনোয়ারের কপালে কাটা দাগ ছিল এবং তাঁর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নিতে চাইলে গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। পরিবার ও গ্রামবাসীর তোপের মুখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। রাতেই এরপর দ্রুত দাফন করা হয়।
নিহতের মা বলেন, মনোয়ারকে কেউ মারেননি। পুকুরে বড় মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছেন তিনি। ‘জিন-ভূতে মনোয়ারকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে’ বলে তাঁর মায়ের দাবি৷
ইজারাদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ইজারা নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করছিলাম। অনেক আগে থেকে পুকুরের মাছ লুটের চেষ্টা করা হচ্ছিল। শুক্রবার সকলে অনেক লোকজন জড়ো হয়ে মাছ লুট করেছে। প্রভাবশালী বিএনপির নেতার ছাত্র ছায়ায়৷ মাছ লুট করেছে, এলাকাবাসী সবাই দেখেছে। তাদের নাম বলতে চাই না।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, লোকজন দল বেঁধে সকালে ওই পুকুরের মাছ ধরেছেন। মনোয়ার হোসেনও মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় পুকুরের ঝোপে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজনের আপত্তির কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফারজানা খাতুন বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মহম্মদপুরে অলৌকিকভাবে প্রাণে বাঁচলো মাটি চাপা যুবক

জয়পুরহাটে পুকুরের মাছ লুট করতে নেমে সবাই ফিরলেও, সন্ধ্যায় মিলল মনোয়ারের মরদেহ

পোস্ট হয়েছেঃ ০৮:০০:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি সরকারি পুকুর থেকে মনোয়ার হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ১১ এপ্রিল সন্ধ্যার দিকে উপজেলার পুনট পূর্ব পাড়া গ্রামের পুকুরের ঝোপ থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মনোয়ার হোসেন ওই গ্রামের মৃত আফতাব আলীর ছেলে। শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুকুরটির মাছ লুট করা হয়।
থানা-পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পুনট এলাকার নাসির উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ‘সরিষাগাড়ী’ নামের এই সরকারি পুকুরটি তিন বছরের জন্য ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন। নাসির উদ্দিন কালাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান ও পুনট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস ফকিরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী। গতকাল সকালে স্থানীয় লোকজন পুকুরপাড়ে এসে জড়ো হন। তাঁদের অধিকাংশই বিএনপি–সমর্থিত লোকজন। তাঁরা ওই পুকুরে নেমে মাছ লুট করতে শুরু করেন। মনোয়ার হোসেনও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন।
মাছ লুটের পর দুপুরের দিকে লোকজন চলে যান। তবে মনোয়ার হোসেন ‘বড় মাছ ধরার অপেক্ষায়’ পুকুরেই ছিলেন। সন্ধ্যা নেমে এলেও মনোয়ার বাড়িতে ফিরছিলেন না। তখন তাঁর মা মঞ্জুয়ারা বেগম মনোয়ারকে ডাকতে পুকুরে আসেন। পুকুরের ঝোপের মধ্যে ছেলের রদেহ দেখতে পেয়ে লোকজনকে জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে। মনোয়ারের কপালে কাটা দাগ ছিল এবং তাঁর মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। পুলিশ মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য নিতে চাইলে গ্রামবাসী ও পরিবারের সদস্যরা বাধা দেন। পরিবার ও গ্রামবাসীর তোপের মুখে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। রাতেই এরপর দ্রুত দাফন করা হয়।
নিহতের মা বলেন, মনোয়ারকে কেউ মারেননি। পুকুরে বড় মাছ ধরতে গিয়ে মারা গেছেন তিনি। ‘জিন-ভূতে মনোয়ারকে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছে’ বলে তাঁর মায়ের দাবি৷
ইজারাদার নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ইজারা নিয়ে পুকুরে মাছ চাষ করছিলাম। অনেক আগে থেকে পুকুরের মাছ লুটের চেষ্টা করা হচ্ছিল। শুক্রবার সকলে অনেক লোকজন জড়ো হয়ে মাছ লুট করেছে। প্রভাবশালী বিএনপির নেতার ছাত্র ছায়ায়৷ মাছ লুট করেছে, এলাকাবাসী সবাই দেখেছে। তাদের নাম বলতে চাই না।’
কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন বলেন, লোকজন দল বেঁধে সকালে ওই পুকুরের মাছ ধরেছেন। মনোয়ার হোসেনও মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। গতকাল সন্ধ্যায় পুকুরের ঝোপে তাঁর মরদেহ পাওয়া যায়। উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজনের আপত্তির কারণে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ফারজানা খাতুন বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন।