
পটুয়াখালীর বাউফলে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কালাইয়া রব্বানিয়া কামিল মাদ্রাসা-র অধ্যক্ষ এ.এস.এম আবদুল হাই-এর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, পেশাগত অসদাচরণ এবং বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক মোঃ মহিবুল্লাহ শিক্ষকদের পক্ষে এসব অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ১৯৯৯ সালে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর থেকেই এ.এস.এম আবদুল হাই একক কর্তৃত্বে মাদ্রাসাটি পরিচালনা করে আসছেন। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ও পূর্ববর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাননি। অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ নিজের অনুগতদের দিয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠন করেছেন, যাতে তার কর্মকাণ্ডে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে।
প্রতিষ্ঠানটি কামিল মাদ্রাসা হওয়ায় প্রতিবছর বিভিন্ন উৎস থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হয়ে থাকে। কিন্তু এসব অর্থ ব্যবহারে নেই কোনো স্বচ্ছতা। অভিযোগ রয়েছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে শিক্ষকদের ২০% হারে বেতন বাবদ ১,১২,০৯০ টাকা বিতরণ করা হলেও, ভাউচারে দেখানো হয় ৬,৪২,৭৩০ টাকা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষিকা জানান, তাকে ৩,২০০ টাকা প্রদান করা হলেও ভাউচারে উল্লেখ করা হয়েছে ২৩,২০০ টাকা।
শিক্ষকরা আরও অভিযোগ করেন, প্রতি বছর সরকারি বরাদ্দকৃত টিউশন ফি দুবার করে আসলেও তার হিসাব নেই। কেউ এর ভাগ পান না এবং প্রতিষ্ঠানেও নেই কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন। ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নুরানি বিভাগের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব না থাকার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, সহকারী শিক্ষক মুহাম্মদ আতাউল্লাহ ও অধ্যক্ষ আবদুল হাই মিলে এইসব অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া, নতুন বেতনক্রম, টাইম স্কেল, বি.এড স্কেল ও এমপিও সংশোধনের নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় এবং প্রাথমিক শ্রেণির বই বিক্রির টাকাও আত্মসাতের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সভায় অধ্যক্ষ তার ‘ভুল স্বীকার’ করে কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে একটি লিখিত দলিলেও শিক্ষকদের স্বাক্ষর রয়েছে বলে জানানো হয়। শিক্ষকরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ এ.এস.এম আবদুল হাই বলেন, “সব অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন বলেন, “অভিযোগটি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মহসিন উদ্দীনকে তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখবেন।”