০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে, দুর্নীতি ও অমানবিক আচরণে—দুদকের অভিযান

  • শফিনুর আলম
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১০:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • 67
আজ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযানে বেড়িয়ে এলো আসল রহস্য ও দুর্নীতি
লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল—একটি জেলা পর্যায়ের প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এটি যেন আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অমানবিক আচরণের এক ভয়াবহ মঞ্চে পরিণত হয়েছে। সরকারি অর্থে পরিচালিত এ হাসপাতালে সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা, বরং প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার।
অপরিচ্ছন্নতা ও যন্ত্রপাতির সংকট:
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে, সেখানে রোগী থাকার পরিবর্তে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। রোগীদের বেডের নিচে ময়লা-আবর্জনা, স্যানিটারি ব্যবস্থার বেহাল দশা, অকেজো হয়ে পড়া যন্ত্রপাতি এবং জরুরি বিভাগে অপ্রতুল চিকিৎসা সামগ্রী—সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রলি দুর্নীতি ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ:
রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় অর্থের লেনদেন। ট্রলি নিতে গিয়েই পরিবারের সদস্যদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা। এমনকি রোগীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকলেও কিছু স্টাফ ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ‘খুশি করার নামে’ অর্থ আদায় করে থাকেন। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে একাধিক ভুক্তভোগীর মুখে।
ইমারজেন্সি বিভাগের করুণ দশা:
জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের একাংশ চিকিৎসার চেয়ে রোগী রেফার করতে বেশি আগ্রহী। অনেক সময় রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত রংপুর মেডিকেলে রেফার করে দেওয়া হয়। এতে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা পেলে যেসব রোগী বাঁচতে পারতেন, তারা প্রাণ হারান এই অবহেলার কারণে।
একজন ভুক্তভোগীর তিক্ত অভিজ্ঞতা:
একজন স্থানীয় বাসিন্দা তার কষ্টের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, “বাবাকে গুরুতর অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে শুরু থেকেই দেখতে পাই দায়িত্বহীনতা, অমানবিকতা এবং চরম অনিয়ম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা মেলেনি। শেষে বলল—‘রংপুরে নিয়ে যান’। বাবার জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা ছিল সেটা, কিন্তু সময়ের অপচয়ের কারণে তাকে আর বাঁচানো গেল না। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা।”
জনগণের প্রশ্ন: এত অনিয়ম দেখেও কর্তৃপক্ষ নীরব কেন?
জনগণের জিজ্ঞাসা—একটি সরকারি হাসপাতাল, যা মানুষের শেষ ভরসাস্থল, সেখানে এত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা কিভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে? কেন কর্তৃপক্ষ নীরব? কেন জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
চিকিৎসা নয়, যেন মৃত্যুর ফাঁদ!
বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গুরুতর রোগী নিয়ে যাওয়া মানেই বিপদের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে প্রথমেই রংপুর মেডিকেলে ছুটছেন, কারণ তারা জানেন—সদর হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা নয়, বরং সময় নষ্ট হচ্ছে
 এবং জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুড়ীতে নিসচা’র সড়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে, দুর্নীতি ও অমানবিক আচরণে—দুদকের অভিযান

পোস্ট হয়েছেঃ ১০:১৯:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
আজ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে দুদকের অভিযানে বেড়িয়ে এলো আসল রহস্য ও দুর্নীতি
লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল—একটি জেলা পর্যায়ের প্রধান চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও এটি যেন আজ দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অমানবিক আচরণের এক ভয়াবহ মঞ্চে পরিণত হয়েছে। সরকারি অর্থে পরিচালিত এ হাসপাতালে সাধারণ জনগণ পাচ্ছে না ন্যূনতম চিকিৎসাসেবা, বরং প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে মানসিক ও আর্থিক নির্যাতনের শিকার।
অপরিচ্ছন্নতা ও যন্ত্রপাতির সংকট:
হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশ এতটাই নোংরা যে, সেখানে রোগী থাকার পরিবর্তে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাই বেশি। রোগীদের বেডের নিচে ময়লা-আবর্জনা, স্যানিটারি ব্যবস্থার বেহাল দশা, অকেজো হয়ে পড়া যন্ত্রপাতি এবং জরুরি বিভাগে অপ্রতুল চিকিৎসা সামগ্রী—সব মিলিয়ে এক বিভীষিকাময় অবস্থা বিরাজ করছে।
ট্রলি দুর্নীতি ও অর্থ আদায়ের অভিযোগ:
রোগী আসার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় অর্থের লেনদেন। ট্রলি নিতে গিয়েই পরিবারের সদস্যদের গুণতে হয় বাড়তি টাকা। এমনকি রোগীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকলেও কিছু স্টাফ ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ‘খুশি করার নামে’ অর্থ আদায় করে থাকেন। এমন অভিযোগ উঠে এসেছে একাধিক ভুক্তভোগীর মুখে।
ইমারজেন্সি বিভাগের করুণ দশা:
জরুরি বিভাগে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের একাংশ চিকিৎসার চেয়ে রোগী রেফার করতে বেশি আগ্রহী। অনেক সময় রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে শেষ পর্যন্ত রংপুর মেডিকেলে রেফার করে দেওয়া হয়। এতে রোগীর অবস্থা আরও সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। সময়মতো চিকিৎসা পেলে যেসব রোগী বাঁচতে পারতেন, তারা প্রাণ হারান এই অবহেলার কারণে।
একজন ভুক্তভোগীর তিক্ত অভিজ্ঞতা:
একজন স্থানীয় বাসিন্দা তার কষ্টের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, “বাবাকে গুরুতর অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে শুরু থেকেই দেখতে পাই দায়িত্বহীনতা, অমানবিকতা এবং চরম অনিয়ম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসা মেলেনি। শেষে বলল—‘রংপুরে নিয়ে যান’। বাবার জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা ছিল সেটা, কিন্তু সময়ের অপচয়ের কারণে তাকে আর বাঁচানো গেল না। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা।”
জনগণের প্রশ্ন: এত অনিয়ম দেখেও কর্তৃপক্ষ নীরব কেন?
জনগণের জিজ্ঞাসা—একটি সরকারি হাসপাতাল, যা মানুষের শেষ ভরসাস্থল, সেখানে এত অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা কিভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে? কেন কর্তৃপক্ষ নীরব? কেন জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না?
চিকিৎসা নয়, যেন মৃত্যুর ফাঁদ!
বর্তমানে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গুরুতর রোগী নিয়ে যাওয়া মানেই বিপদের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে প্রথমেই রংপুর মেডিকেলে ছুটছেন, কারণ তারা জানেন—সদর হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা নয়, বরং সময় নষ্ট হচ্ছে
 এবং জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে।