০৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কি?? হবে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে

পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা বুঝতে গেলে ৮০ বছর পেছনে তাকাতে হয়। ইতিহাসে মাত্র দু’বার যুদ্ধের জন্য এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে—হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে। মাত্র দু’টি বোমায় ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বেঁচে যাওয়া হাজারো মানুষ আজীবন শরীর ও মনের ক্ষত নিয়ে বেঁচেছেন।
২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এখনো পৃথিবীতে ১২ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। অর্থাৎ, এর ব্যবহারের সম্ভাবনা থেকেই যায়। সুতরাং, যদি কখনো সত্যি এমন কিছু ঘটে, তাহলে কী হতে পারে—তা জানা জরুরি।
ধরা যাক, একটি ১ মেগাটন ক্ষমতার বোমা বিস্ফোরিত হলো। হিরোশিমার লিটল বয় এর তুলনায় এটা প্রায় ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। আবার আধুনিক কিছু বো’মার তুলনায় এটা মাঝারি মাত্রার।
বিস্ফোরণ হতেই যেটা প্রথম ধাক্কা দেবে তা হলো তাপ আর আলো। আলো ও তাপ এতটাই তীব্র হবে যে, যারা বিস্ফোরণের ২০ কিমি দূরেও থাকবে, তারা কয়েক মিনিটের জন্য চোখে অন্ধকার দেখতে পাবে। আর যদি রাত হয়, তবে সেই দূরত্ব বেড়ে ৮৫ কিমি পর্যন্তও যেতে পারে।
১১ কিমি পর্যন্ত হালকা পোড়া, ৮ কিমির মধ্যে ত্বক গলে যাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে। তবে এসব নির্ভর করে আবহাওয়া কেমন, আপনি কী রঙের কাপড় পরেছেন, এমনকি আশপাশে কী ধরণের ভবন বা গাছপালা রয়েছে। যদিও যারা বিস্ফোরণের একেবারে কাছাকাছি, তাদের জন্য এসব কিছুই কাজে আসবে না।
কারণ বিস্ফোরণের কেন্দ্রে তাপমাত্রা এতটাই ভয়াবহ—প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপ সূর্যের কেন্দ্র থেকেও ৫ গুণ বেশি। এতো তাপ একজন মানুষকে এক নিমিষে গলিয়ে দিয়ে কার্বন বা মৌলিক কণায় পরিণত করে দিতে পারে।
তাপের পরে আসে দ্বিতীয় ধাক্কা—ব্লাস্ট ওয়েভ। এই বিস্ফোরণ বাতাসকে চারদিক থেকে ধাক্কা দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। হঠাৎ চাপের এই পরিবর্তনে ৬ কিমির মধ্যে ভবন ভেঙে পড়বে, বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ২৫৫ কিমি।
যদি কেউ এসব কিছু পেরিয়েও বেঁচে যায়, তখন সামনে আসে তেজস্ক্রিয়তার বিপদ। হিরোশিমা আর নাগাসাকির বোমাগুলো ভূমির উপর ফাটানো হয়েছিল, ফলে তেমন ফলআউট হয়নি। কিন্তু যদি বিস্ফোরণ ভূমিতে হয়, তার ফলাফল হবে আরো ভয়াবহ। বিকিরণে দূষিত ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে। শরীরে ঢুকলে ক্যান্সার, শারীরিক ক্ষতি, এমনকি প্রজন্মগত সমস্যা হতে হবে।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধ হলে পৃথিবী ঢুকে যাবে ‘নিউ’ক্লিয়ার উইন্টার’ এ। ধোঁয়া ও ছাই বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ায় সূর্যের আলো আটকে যাবে, খাদ্য সংকট হবে, শুরু হবে বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ। সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিউ’ক্লিয়ার টেস্ট থেকে সৃষ্ট রেডিওঅ্যাকটিভ কার্বনের চিহ্ন পাওয়া গেছে পৃথিবীর গভীরতম খাদ মারিয়ানা ট্রেঞ্চে।
পরমাণু বোমা মানুষের জীবন ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর প্রভাবে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট শক ওয়েভ, তাপ এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘরবাড়ি, অবকাঠামো ধ্বংস করে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন কেড়ে নেয়। তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ফলে পরিবেশেও দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

ডাক্তারের অনুপস্থিতে নার্স দিয়ে প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতকের মৃত্যু, নার্স ও আয়া আটক

কি?? হবে পারমাণবিক যুদ্ধ হলে

পোস্ট হয়েছেঃ ০৭:০৮:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা বুঝতে গেলে ৮০ বছর পেছনে তাকাতে হয়। ইতিহাসে মাত্র দু’বার যুদ্ধের জন্য এই অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে—হিরোশিমা আর নাগাসাকিতে। মাত্র দু’টি বোমায় ২ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বেঁচে যাওয়া হাজারো মানুষ আজীবন শরীর ও মনের ক্ষত নিয়ে বেঁচেছেন।
২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে এখনো পৃথিবীতে ১২ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। অর্থাৎ, এর ব্যবহারের সম্ভাবনা থেকেই যায়। সুতরাং, যদি কখনো সত্যি এমন কিছু ঘটে, তাহলে কী হতে পারে—তা জানা জরুরি।
ধরা যাক, একটি ১ মেগাটন ক্ষমতার বোমা বিস্ফোরিত হলো। হিরোশিমার লিটল বয় এর তুলনায় এটা প্রায় ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী। আবার আধুনিক কিছু বো’মার তুলনায় এটা মাঝারি মাত্রার।
বিস্ফোরণ হতেই যেটা প্রথম ধাক্কা দেবে তা হলো তাপ আর আলো। আলো ও তাপ এতটাই তীব্র হবে যে, যারা বিস্ফোরণের ২০ কিমি দূরেও থাকবে, তারা কয়েক মিনিটের জন্য চোখে অন্ধকার দেখতে পাবে। আর যদি রাত হয়, তবে সেই দূরত্ব বেড়ে ৮৫ কিমি পর্যন্তও যেতে পারে।
১১ কিমি পর্যন্ত হালকা পোড়া, ৮ কিমির মধ্যে ত্বক গলে যাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে। তবে এসব নির্ভর করে আবহাওয়া কেমন, আপনি কী রঙের কাপড় পরেছেন, এমনকি আশপাশে কী ধরণের ভবন বা গাছপালা রয়েছে। যদিও যারা বিস্ফোরণের একেবারে কাছাকাছি, তাদের জন্য এসব কিছুই কাজে আসবে না।
কারণ বিস্ফোরণের কেন্দ্রে তাপমাত্রা এতটাই ভয়াবহ—প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপ সূর্যের কেন্দ্র থেকেও ৫ গুণ বেশি। এতো তাপ একজন মানুষকে এক নিমিষে গলিয়ে দিয়ে কার্বন বা মৌলিক কণায় পরিণত করে দিতে পারে।
তাপের পরে আসে দ্বিতীয় ধাক্কা—ব্লাস্ট ওয়েভ। এই বিস্ফোরণ বাতাসকে চারদিক থেকে ধাক্কা দিয়ে ছড়িয়ে দেয়। হঠাৎ চাপের এই পরিবর্তনে ৬ কিমির মধ্যে ভবন ভেঙে পড়বে, বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ২৫৫ কিমি।
যদি কেউ এসব কিছু পেরিয়েও বেঁচে যায়, তখন সামনে আসে তেজস্ক্রিয়তার বিপদ। হিরোশিমা আর নাগাসাকির বোমাগুলো ভূমির উপর ফাটানো হয়েছিল, ফলে তেমন ফলআউট হয়নি। কিন্তু যদি বিস্ফোরণ ভূমিতে হয়, তার ফলাফল হবে আরো ভয়াবহ। বিকিরণে দূষিত ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়বে। শরীরে ঢুকলে ক্যান্সার, শারীরিক ক্ষতি, এমনকি প্রজন্মগত সমস্যা হতে হবে।
২০১৯ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়—যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ পারমাণবিক যুদ্ধ হলে পৃথিবী ঢুকে যাবে ‘নিউ’ক্লিয়ার উইন্টার’ এ। ধোঁয়া ও ছাই বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ায় সূর্যের আলো আটকে যাবে, খাদ্য সংকট হবে, শুরু হবে বৈশ্বিক দুর্ভিক্ষ। সম্প্রতি আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, নিউ’ক্লিয়ার টেস্ট থেকে সৃষ্ট রেডিওঅ্যাকটিভ কার্বনের চিহ্ন পাওয়া গেছে পৃথিবীর গভীরতম খাদ মারিয়ানা ট্রেঞ্চে।
পরমাণু বোমা মানুষের জীবন ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এর প্রভাবে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদী উভয় ধরনের ক্ষতি হতে পারে। বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট শক ওয়েভ, তাপ এবং তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘরবাড়ি, অবকাঠামো ধ্বংস করে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জীবন কেড়ে নেয়। তেজস্ক্রিয়তার কারণে ক্যান্সার, জন্মগত ত্রুটি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, পারমাণবিক বোমা ব্যবহারের ফলে পরিবেশেও দীর্ঘস্থায়ী বিরূপ প্রভাব ফেলে।