০৭:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আইনগত ও ধর্মীয় স্বীকৃতিতে জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদ

  • Miah Suleman
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:৪০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • 152
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হিসেবে বিবেচিত। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষা দেওয়া হয় এবং হাজারো সাধারণ বিষয়ের শিক্ষক (জেনারেল সাবজেক্ট টিচার) নিযুক্ত আছেন। কিন্তু বর্তমানে মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে যেতে এক ধরনের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আইন ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটা যৌক্তিক?
বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে:
২৮ ধারা: ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ বা জন্মস্থানভেদে কোনো নাগরিককে বৈষম্যের শিকার করা যাবে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে সবাই সমান অধিকার পাবে।
২৯ ধারা: সরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
➡️ এ ধারা অনুযায়ী, মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ না দেওয়া সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
ইসলাম স্পষ্টভাবে সমানাধিকার, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বৈষম্যহীনতা শিক্ষা দেয়:
সমান অধিকার: ইসলাম অনুযায়ী, প্রতিটি মুসলমান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সকল সমাজিক প্রতিষ্ঠানে সমানভাবে অংশ নিতে পারে।
বৈষম্যহীনতা: কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী, কোনো মুসলমানকে তার সামাজিক বা ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়।
ভ্রাতৃত্ববোধ: মুসলিম উম্মাহ পরস্পরের ভাই, তাই একজন মুসলমানের অন্য মুসলমানকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা পদ লাভে বাধা দেওয়া গর্হিত কাজ।
➡️ অতএব, মাদ্রাসায় সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে অগ্রসর হওয়া আটকানো ইসলামী মূল্যবোধ পরিপন্থী।
বর্তমানে বেশ কিছু হুজুর ও আলিয়া মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষক সংগঠন মাদ্রাসা টু স্কুল/কলেজ বদলি বা জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির বিরোধিতা করছেন। তাদের প্রধান যুক্তি:
মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক চলে গেলে ধর্মীয় শিক্ষা বিপন্ন হবে। প্রশাসনিক পদে সাধারণ শিক্ষক থাকলে ধর্মীয় গুরুত্ব কমে যাবে। কিন্তু এই যুক্তিগুলো আদতে একধরনের সংকীর্ণ মানসিকতা ও ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। যখন একজন জেনারেল শিক্ষক কেবল ধর্মীয় নয়, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যোগ্য, তখন তার অগ্রগতি আটকে দেওয়া অমানবিক ও ইসলামবিরোধী।
জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সাধারণ মানুষ, শিক্ষানুরাগী মহল ও জেনারেল শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন,
“মাদ্রাসা আজ কিছু মুনাফিক হুজুরদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে, যারা নিজেরা সব সুবিধা ভোগ করতে চায় কিন্তু অন্যদের অধিকার দেয় না।” একজন কবির ভাষা ধার করে বলা যায়, “সমাজ আজ নষ্টদের অধিকারে!”
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবি:
1. মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজ পারস্পরিক বদলি নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
2. মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে অগ্রসর হওয়ার আইনগত ও বাস্তব সুযোগ তৈরি করতে হবে।
3. মাদ্রাসার একটি অংশের পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
সমাজে ন্যায়বিচার, সমানাধিকার ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার জন্য মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে বিভাজন নয়, বরং সমন্বয় দরকার। ধর্মীয় শিক্ষকরা যদি সত্যিই ইসলামের কথা মেনে চলতেন, তাহলে অন্য শিক্ষকদের প্রতি এই বৈষম্য তারা করতেন না। তাই এখন সময় এসেছে একে বদলানোর।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাতের আমন্ত্রণ পেল জুলাই আন্দোলনে নিহত বিপ্লব হাসানের পরিবার

আইনগত ও ধর্মীয় স্বীকৃতিতে জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদ

পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:৪০:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় মাদ্রাসা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর হিসেবে বিবেচিত। এখানে ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়াও সাধারণ শিক্ষা দেওয়া হয় এবং হাজারো সাধারণ বিষয়ের শিক্ষক (জেনারেল সাবজেক্ট টিচার) নিযুক্ত আছেন। কিন্তু বর্তমানে মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে যেতে এক ধরনের বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আইন ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কতটা যৌক্তিক?
বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার কথা বলে:
২৮ ধারা: ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, লিঙ্গ বা জন্মস্থানভেদে কোনো নাগরিককে বৈষম্যের শিকার করা যাবে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ ও সুযোগের ক্ষেত্রে সবাই সমান অধিকার পাবে।
২৯ ধারা: সরকারি বা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
➡️ এ ধারা অনুযায়ী, মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ না দেওয়া সংবিধানের মূল চেতনাবিরোধী এবং মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
ইসলাম স্পষ্টভাবে সমানাধিকার, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং বৈষম্যহীনতা শিক্ষা দেয়:
সমান অধিকার: ইসলাম অনুযায়ী, প্রতিটি মুসলমান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ সকল সমাজিক প্রতিষ্ঠানে সমানভাবে অংশ নিতে পারে।
বৈষম্যহীনতা: কোরআন ও হাদীস অনুযায়ী, কোনো মুসলমানকে তার সামাজিক বা ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায়।
ভ্রাতৃত্ববোধ: মুসলিম উম্মাহ পরস্পরের ভাই, তাই একজন মুসলমানের অন্য মুসলমানকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ বা পদ লাভে বাধা দেওয়া গর্হিত কাজ।
➡️ অতএব, মাদ্রাসায় সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে অগ্রসর হওয়া আটকানো ইসলামী মূল্যবোধ পরিপন্থী।
বর্তমানে বেশ কিছু হুজুর ও আলিয়া মাদ্রাসার ধর্মীয় শিক্ষক সংগঠন মাদ্রাসা টু স্কুল/কলেজ বদলি বা জেনারেল শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে পদোন্নতির বিরোধিতা করছেন। তাদের প্রধান যুক্তি:
মাদ্রাসা থেকে শিক্ষক চলে গেলে ধর্মীয় শিক্ষা বিপন্ন হবে। প্রশাসনিক পদে সাধারণ শিক্ষক থাকলে ধর্মীয় গুরুত্ব কমে যাবে। কিন্তু এই যুক্তিগুলো আদতে একধরনের সংকীর্ণ মানসিকতা ও ক্ষমতা ধরে রাখার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। যখন একজন জেনারেল শিক্ষক কেবল ধর্মীয় নয়, প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যোগ্য, তখন তার অগ্রগতি আটকে দেওয়া অমানবিক ও ইসলামবিরোধী।
জনমত ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে, সাধারণ মানুষ, শিক্ষানুরাগী মহল ও জেনারেল শিক্ষকদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা মনে করেন,
“মাদ্রাসা আজ কিছু মুনাফিক হুজুরদের হাতে বন্দি হয়ে গেছে, যারা নিজেরা সব সুবিধা ভোগ করতে চায় কিন্তু অন্যদের অধিকার দেয় না।” একজন কবির ভাষা ধার করে বলা যায়, “সমাজ আজ নষ্টদের অধিকারে!”
বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবি:
1. মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজ পারস্পরিক বদলি নীতিমালা দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
2. মাদ্রাসার সাধারণ শিক্ষকদের প্রশাসনিক পদে অগ্রসর হওয়ার আইনগত ও বাস্তব সুযোগ তৈরি করতে হবে।
3. মাদ্রাসার একটি অংশের পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মানসিকতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
সমাজে ন্যায়বিচার, সমানাধিকার ও ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠার জন্য মাদ্রাসা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে বিভাজন নয়, বরং সমন্বয় দরকার। ধর্মীয় শিক্ষকরা যদি সত্যিই ইসলামের কথা মেনে চলতেন, তাহলে অন্য শিক্ষকদের প্রতি এই বৈষম্য তারা করতেন না। তাই এখন সময় এসেছে একে বদলানোর।