
নরসিংদীতে প্রেমের প্রলোভন, বিয়ের নাটক ও মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে একের পর এক পুরুষকে নিঃস্ব করার অভিযোগে মোসাঃ হোসনা আক্তার (৩৫) নামে এক নারীর বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়ভাবে ‘মামলাবাজ নারী’ হিসেবে পরিচিত এই নারী ইতোমধ্যে একাধিক বিয়ে, অপহরণ মামলা ও সর্বশেষ ‘দর্শন মামলা’ দায়ের করে জনমনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার সর্বশেষ লক্ষ্য হয়েছেন নরসিংদী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী নাজির মো. ইকরাম হোসেন।
একই কৌশল বারবার: প্রেম, বিয়ে, মামলা, টাকা আদায়
তথ্যসূত্রে জানা গেছে, হোসনা আক্তার তার প্রথম স্বামীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের কাবিন আদায় করে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটান। দ্বিতীয় স্বামীর সঙ্গে প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে হলেও মামলার মাধ্যমে তা ভেঙে দেন এবং অর্থ আদায় করেন। ওই মামলায় তিনি অপহরণ মামলার আসামি হিসেবে দুই মাস কারাবরণ করেন।
পরবর্তীতে তৃতীয় বিয়েটি টিকেছিল মাত্র ৯ দিন। সামাজিক সালিশে ফের মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তিনি ডিভোর্স দেন। প্রতিটি বিয়ের পর একই ঘটনা—সন্তর্পণে প্রতারণার ফাঁদ, মামলা, এবং মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি।
গাজী হোটেল মামলা: তদন্তে বেরিয়ে এলো অজানা তথ্য
সবশেষ অভিযোগে হোসনা দাবি করেন, সহকারী নাজির ইকরাম হোসেন তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে মাধবদীর ‘গাজী হোটেল’-এ নিয়ে প্রতারণা করেন। এ অভিযোগে তিনি ‘দর্শন মামলা’ দায়ের করেন।
তবে গাজী হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মামলায় উল্লেখিত ‘AX’ নম্বরের কোনো রুমই তাদের হোটেলে নেই। সরেজমিনে পুলিশ তদন্তে গিয়ে মামলার বিবরণ ও হোটেলের বাস্তবতার মধ্যে স্পষ্ট অসঙ্গতি খুঁজে পায়। ২০৬ নম্বর রুম দেখিয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও হোসনার দাবি বিভ্রান্তিকর ও বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল বলে জানান তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
“পরিকল্পিত চক্রান্তের শিকার আমরা”—বলছেন কর্মকর্তার স্ত্রী
ভুক্তভোগী সরকারি কর্মকর্তা ইকরাম হোসেনের স্ত্রী রুপা বেগম বলেন, “আমার স্বামী সম্পূর্ণ নির্দোষ। হোসনা একটি পরিকল্পিত প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে আমাদের পরিবারকে হুমকি ও হয়রানি করছে। এমনকি সে আমার বাসায় এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।” তিনি জানান, বিষয়টি নরসিংদী সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরির (জিডি) মাধ্যমে জানানো হয়েছে।
আইনি বিশ্লেষণ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ যদি ধারাবাহিকভাবে বিয়ে ও মামলা ব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে, তা দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। এতে শুধু ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন না, সমাজে আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন হয়।
এ ঘটনায় হোসনার অতীত মামলার নথি, হোটেল কর্তৃপক্ষের বিবৃতি ও পুলিশের তদন্ত—সব মিলিয়ে তার অভিযোগের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, “এমন প্রতারণাকারীদের কঠোর শাস্তি না হলে আরও অনেক পরিবার এমন ফাঁদে পড়ে ধ্বংস হবে।”
প্রতারণা না নাটক?
একজন নারী যদি প্রেম, বিয়ে ও মামলার নামে একের পর এক পুরুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায়ের কৌশল চালিয়ে যান—তবে তার প্রতিরোধ কোথায়? রাষ্ট্র কি নিরীহ নাগরিকদের এমন প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে পারছে? প্রশ্ন রয়ে যায়—আইনের ফাঁক গলে অপরাধীরা কি বারবার পার পেয়ে যাবে?
এই প্রতিবেদন প্রস্তুতকালে উভয় পক্ষের বক্তব্য যাচাই ও প্রাসঙ্গিক তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেহেতু মামলার তদন্ত চলমান, তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ—নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।