
সরকারের এনটিআরসিএ প্রকাশিত ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি ইতোমধ্যেই ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে মোট ১,০০,৮২২টি এমপিওভুক্ত শূন্য পদে নিয়োগের ঘোষণা আসে, যা দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক সংকট নিরসনে একটি বড় পদক্ষেপ।
আবেদন শুরু হয় ২২ জুন ২০২৫, এবং শেষ হয় ১০ জুলাই মধ্যরাতে। আবেদন ফি জমা দেওয়ার শেষ সময় নির্ধারিত ১৩ জুলাই রাত ১১:৫৯ পর্যন্ত। এনটিআরসিএ কর্তৃক জানা যায়, সুপারিশ প্রক্রিয়া খুব দ্রুত শুরু হবে, তবে নির্দিষ্ট তারিখ এখনও নির্ধারিত হয়নি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ২০ জুলাইয়ের সম্ভাব্য সুপারিশ তারিখ সম্পর্কে উঠে আসে—“এটির কোনো ভিত্তি নেই, তবে আমরা খুব বেশি সময় নেব না।” এ পর্যন্ত সবই স্বাভাবিক মনে হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে একটি সূক্ষ্ম ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ চোখে পড়ে—যা মূলত কর্মরত ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের ক্ষেত্রে মরার উপর খাড়ার গাঁ!
কর্মরত শিক্ষক: সুবিধাবঞ্চিত অথচ নিবন্ধিত
এনটিআরসিএর নিয়ম অনুযায়ী, যেসব শিক্ষক ইতোমধ্যে ইনডেক্সধারী হিসেবে কর্মরত, তারা নিজের সমপদের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অথচ তারাই এক সময় এনটিআরসিএর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজ শিক্ষার মাঠে কাজ করছেন। নীতিমালার এ ব্যাখ্যা হয়তো প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণ থেকে যৌক্তিক মনে হতে পারে, কিন্তু মানবিক বা সাংবিধানিক দিক থেকে এটি বৈষম্যপূর্ণ ও প্রশ্নবিদ্ধ।
যেখানে, সংবিধানের ১৯(১) অনুচ্ছেদ বলছে—
“সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের মধ্যে সমতা বিধানের জন্য রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।” কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, কর্মরত শিক্ষক সমপদে আবেদন করতে পারছেন না, যেখানে নতুন প্রার্থী সেই সুযোগ পাচ্ছেন। এতে সমতার নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এতে “পুনরাবৃত্তি” বা “ডাবল নিয়োগ” হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে একজন নাগরিকের ন্যায্য অধিকারকেই খর্ব করা হচ্ছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কর্মরত শিক্ষকগণ উচ্চতর বা নিম্নতর পদে আবেদন করতে পারেন। এটি সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে বলা হয়েছে—
“প্রজাতন্ত্রের কোন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।”
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—যদি ভিন্ন পদের জন্য আবেদন বৈধ হয়, তাহলে বয়সসীমা কেন অপরিবর্তিত থাকবে?
একজন ইনডেক্সধারী শিক্ষক যখন পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালন করছেন, তখন তার পেশাগত অভিজ্ঞতা কোনো মূল্য পাচ্ছে না বরং তাকে বয়সের সীমা পেরিয়ে বাদ পড়তে হচ্ছে। এমন অবস্থায় বয়সসীমা শিথিল করার দাবি এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান পরিপত্রে উল্লেখ রয়েছে—মাধ্যমিক, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সংঘর্ষপূর্ণ বিধি-বিধান তিন মাসের মধ্যে সংশোধনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে বাস্তবে তা যেন কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেদিকে দৃষ্টি রাখা জরুরি।

কথিত ন্যায্যতার আড়ালে যেন বাস্তবের বঞ্চনা ঢাকা না পড়ে—এই প্রত্যাশাই শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি ন্যায়বোধসম্পন্ন নাগরিকদের ন্যূনতম চাওয়া।
