০৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত, মাথাচাড়া দিচ্ছে পুরোনো চরমপন্থি গ্রুপ

খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনার দুই দিনের মাথায় সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় সংশ্লিষ্টদের শনাক্তের তথ্য দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে সজল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি হত্যার আগে খুনিদের কাছে মাহবুবের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুরের পশ্চিম মহেশ্বরপাশায় নিজ বাড়ির সামনে প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন দুর্বৃত্ত এসে তাকে গুলি করে এবং দুই পায়ের রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা তেলিগাতি এলাকা হয়ে পালিয়ে যায়। খুনিদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল বলে জানা গেছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, মাহবুবকে হত্যা করে ফের মাথাচাড়া দিতে চাইছে পুরোনো চরমপন্থি গ্রুপ। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকা অনেক চরমপন্থি নেতা এলাকায় ফিরতে শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহবুব হত্যার পেছনে থাকা গ্রুপ হিসেবে হুমায়ুন কবীর (হুমা) ও আরমানের মধ্যে বিভক্ত দুটি চরমপন্থি চক্রের নাম উঠে আসছে। স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলের অনেক নেতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন মাহবুব। পাশাপাশি জমি বিক্রির সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির দখল নিয়েও তার সঙ্গে একাধিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষে রামদা হাতে তার উপস্থিতি এবং ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। মাহবুবের স্ত্রী এরিন সুলতানা অভিযোগ করেন, ‘ওর বন্ধু জাকির মামলা করার পর থেকেই মাহবুব হুমকি পেয়ে আসছিল। ও আমাকে বলেছিল, ওদের (হুমা গ্রুপ) গ্রেপ্তারে তার কোনো ভূমিকা নেই। তবুও ওরা বিশ্বাস করেনি।’ মাহবুবের শ্বশুর আজাদ বেগ বাবু বলেন, ‘যারা মাহবুবকে হত্যা করেছে, তারা চরমপন্থি হলেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার আত্মীয়। এর আগেও তারা হত্যাকাণ্ড ও গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত ছিল।’ মাহবুব হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার রাজনৈতিক সহকর্মীরাও হুমকির মুখে। একজন তাঁতী দলের নেতা জানান, ‘আমাকে আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এখন এলাকার বাইরে গেলেও ভয় লাগে।’ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ জানান, ‘তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে হত্যাকাণ্ডে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করেছি, খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করতে পারব।’ দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, ‘সজল হত্যাকারীদের তথ্য দিয়েছিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।’ মাহবুবুর রহমান মোল্লার হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হত্যাই নয়; এটি খুলনার অপরাধচক্র, চরমপন্থি রাজনীতি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রতিচ্ছবি। তদন্তে নতুন তথ্য উঠে আসছে প্রতিদিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মাগুরাতে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন

খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুর রহমান হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত, মাথাচাড়া দিচ্ছে পুরোনো চরমপন্থি গ্রুপ

পোস্ট হয়েছেঃ ০৯:১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫
খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতা মাহবুবুর রহমান মোল্লা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করেছে পুলিশ। ঘটনার দুই দিনের মাথায় সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যায় সংশ্লিষ্টদের শনাক্তের তথ্য দিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। প্রাথমিকভাবে সজল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি হত্যার আগে খুনিদের কাছে মাহবুবের অবস্থান জানিয়ে দিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানায়, গত শুক্রবার দুপুরে দৌলতপুরের পশ্চিম মহেশ্বরপাশায় নিজ বাড়ির সামনে প্রাইভেট কার পরিষ্কার করছিলেন মাহবুব। এ সময় একটি মোটরসাইকেলে করে তিনজন দুর্বৃত্ত এসে তাকে গুলি করে এবং দুই পায়ের রগ কেটে নির্মমভাবে হত্যা করে। তারা তেলিগাতি এলাকা হয়ে পালিয়ে যায়। খুনিদের একজনের মাথায় হেলমেট ছিল বলে জানা গেছে। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ চলছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, মাহবুবকে হত্যা করে ফের মাথাচাড়া দিতে চাইছে পুরোনো চরমপন্থি গ্রুপ। ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আত্মগোপনে থাকা অনেক চরমপন্থি নেতা এলাকায় ফিরতে শুরু করেন। এই প্রেক্ষাপটে দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মাহবুব হত্যার পেছনে থাকা গ্রুপ হিসেবে হুমায়ুন কবীর (হুমা) ও আরমানের মধ্যে বিভক্ত দুটি চরমপন্থি চক্রের নাম উঠে আসছে। স্থানীয় বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার ঘনিষ্ঠ হওয়ায় দলের অনেক নেতার সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন মাহবুব। পাশাপাশি জমি বিক্রির সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির দখল নিয়েও তার সঙ্গে একাধিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল। খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রশিবির-ছাত্রদলের সংঘর্ষে রামদা হাতে তার উপস্থিতি এবং ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাও এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে উঠে এসেছে। মাহবুবের স্ত্রী এরিন সুলতানা অভিযোগ করেন, ‘ওর বন্ধু জাকির মামলা করার পর থেকেই মাহবুব হুমকি পেয়ে আসছিল। ও আমাকে বলেছিল, ওদের (হুমা গ্রুপ) গ্রেপ্তারে তার কোনো ভূমিকা নেই। তবুও ওরা বিশ্বাস করেনি।’ মাহবুবের শ্বশুর আজাদ বেগ বাবু বলেন, ‘যারা মাহবুবকে হত্যা করেছে, তারা চরমপন্থি হলেও আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার আত্মীয়। এর আগেও তারা হত্যাকাণ্ড ও গুলি চালানোর ঘটনায় জড়িত ছিল।’ মাহবুব হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার রাজনৈতিক সহকর্মীরাও হুমকির মুখে। একজন তাঁতী দলের নেতা জানান, ‘আমাকে আগেই হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এখন এলাকার বাইরে গেলেও ভয় লাগে।’ খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মুহাম্মদ সালেহ জানান, ‘তদন্তের স্বার্থে সবকিছু বলা যাচ্ছে না। তবে হত্যাকাণ্ডে একাধিক অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করেছি, খুব শিগগিরই গ্রেপ্তার করতে পারব।’ দৌলতপুর থানার ওসি মীর আতাহার আলী বলেন, ‘সজল হত্যাকারীদের তথ্য দিয়েছিল। আমরা নিশ্চিত হয়েছি, এটি একটি সংঘবদ্ধ হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনে পুরোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে।’ মাহবুবুর রহমান মোল্লার হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হত্যাই নয়; এটি খুলনার অপরাধচক্র, চরমপন্থি রাজনীতি, আধিপত্য বিস্তার এবং দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের প্রতিচ্ছবি। তদন্তে নতুন তথ্য উঠে আসছে প্রতিদিন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।