০৯:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খালিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলে না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের খালিসা গ্রামের ৯২ নম্বর খালিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীমা নাছরিনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৬ এবং শিক্ষক রয়েছেন চারজন। শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হলো: প্রথম শ্রেণিতে ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৬, তৃতীয় শ্রেণিতে ২০, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১৩ জন। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, শামীমা নাছরিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। তাঁর কাছে বিদ্যালয়ের মূল ফটকের চাবি ও হাজিরা খাতাটি থাকে। তিনি সুবিধামতো সময়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। এমনকি বিদ্যালয় ছুটির সময়ও তাঁর স্বাক্ষর খাতায় পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ছুটি ছিল। এই সময়ের মধ্যেই ১৭ জুন শামীমা নাছরিন ছুটির আবেদন জমা দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে। সেখানে তিনি ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে ছুটি চেয়েছেন। তবে হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ২৪ ও ২৯ জুন এবং ৭ জুলাই তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ ওই সময় তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। হাজিরা খাতার পূর্বের স্বাক্ষরের সঙ্গে সদ্যকার স্বাক্ষরের গড়মিলও দেখা গেছে। এতে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘শামীমা নাছরিন সব সময় স্বামীর দাপট দেখান। শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁর জন্য অনেক শিক্ষক বদলি নিয়ে চলে গেছেন।’ ষাটোর্ধ্ব আরেক বাসিন্দা ফজর আলী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার স্বামী, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মানুষকে অপমান করে। এজন্য কেউ মুখ খুলতে চায় না।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামীমা নাছরিনের স্বামী জসিম উদ্দিন শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এবং শশুর আব্দুল মালেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। স্বামী ও শশুরের দাপটে তিনি যেমন খুশি তেমন চলেন।  গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে শামীমা নাছরিনকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। তবে ছুটির আবেদন বা অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি কেউই। বিদ্যালয়টিতে পাঁচটি শিক্ষক পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বাকি চারজনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় কার্যত তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষাদান। এর মধ্যে একজন শিক্ষক প্রশাসনিক কাজ সামলান, ফলে কেবল দুই শিক্ষক পাঠদান পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শামীমা নাছরিনকে কল করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।  শিবালয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুর রহমান বলেন, সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন।বিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী শিক্ষক ‎মো. নূর মোহাম্মদ, ‎ফেরদৌসী সুলতানা ও ‎লুবনা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তবে তাঁরা কেউই ছুটির বিষয়ে জানেন না। এমনকি তাদের কাছে ছুটির ১৭ জুন করা আবেদন ব্যতিত কোন আবেদন নেই বলে জানান তাঁরা।  বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের মতো গুরুতর অনিয়মের বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

হুজরাপুর মডেল একাডেমী প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা অতি বৃষ্টিতে হাঁটু পানি, ব্যাহত পাঠদান

খালিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্কুলে না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর

পোস্ট হয়েছেঃ ১০:৩২:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের খালিসা গ্রামের ৯২ নম্বর খালিসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত না গিয়েও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শামীমা নাছরিনের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরেই এভাবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা, অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। বিদ্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৮৬ এবং শিক্ষক রয়েছেন চারজন। শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হলো: প্রথম শ্রেণিতে ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৬, তৃতীয় শ্রেণিতে ২০, চতুর্থ শ্রেণিতে ২৫ এবং পঞ্চম শ্রেণিতে ১৩ জন। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, শামীমা নাছরিন নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকেন না। তাঁর কাছে বিদ্যালয়ের মূল ফটকের চাবি ও হাজিরা খাতাটি থাকে। তিনি সুবিধামতো সময়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। এমনকি বিদ্যালয় ছুটির সময়ও তাঁর স্বাক্ষর খাতায় পাওয়া গেছে। জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ২ জুন থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে ছুটি ছিল। এই সময়ের মধ্যেই ১৭ জুন শামীমা নাছরিন ছুটির আবেদন জমা দেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে। সেখানে তিনি ২৯ জুন থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত পারিবারিক সমস্যার কারণ দেখিয়ে ছুটি চেয়েছেন। তবে হাজিরা খাতায় দেখা যায়, ২৪ ও ২৯ জুন এবং ৭ জুলাই তাঁর স্বাক্ষর রয়েছে। অথচ ওই সময় তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না বলে জানান শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। হাজিরা খাতার পূর্বের স্বাক্ষরের সঙ্গে সদ্যকার স্বাক্ষরের গড়মিলও দেখা গেছে। এতে স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ আরও জোরালো হয়েছে। বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘শামীমা নাছরিন সব সময় স্বামীর দাপট দেখান। শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। তাঁর জন্য অনেক শিক্ষক বদলি নিয়ে চলে গেছেন।’ ষাটোর্ধ্ব আরেক বাসিন্দা ফজর আলী বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তার স্বামী, সাবেক চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মানুষকে অপমান করে। এজন্য কেউ মুখ খুলতে চায় না।’ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শামীমা নাছরিনের স্বামী জসিম উদ্দিন শিমুলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এবং শশুর আব্দুল মালেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। স্বামী ও শশুরের দাপটে তিনি যেমন খুশি তেমন চলেন।  গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে শামীমা নাছরিনকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য শিক্ষকরা বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। তবে ছুটির আবেদন বা অনুমোদনপত্র দেখাতে পারেননি কেউই। বিদ্যালয়টিতে পাঁচটি শিক্ষক পদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বাকি চারজনের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় কার্যত তিনজন শিক্ষক দিয়ে চলছে শিক্ষাদান। এর মধ্যে একজন শিক্ষক প্রশাসনিক কাজ সামলান, ফলে কেবল দুই শিক্ষক পাঠদান পরিচালনা করেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শামীমা নাছরিনকে কল করা হলে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।  শিবালয় উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সাইদুর রহমান বলেন, সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছুটির আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন।বিদ্যালয়ের তিনজন সহকারী শিক্ষক ‎মো. নূর মোহাম্মদ, ‎ফেরদৌসী সুলতানা ও ‎লুবনা খাতুনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তবে তাঁরা কেউই ছুটির বিষয়ে জানেন না। এমনকি তাদের কাছে ছুটির ১৭ জুন করা আবেদন ব্যতিত কোন আবেদন নেই বলে জানান তাঁরা।  বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষরের মতো গুরুতর অনিয়মের বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও এলাকাবাসী।