১১:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কবে কেন মাধ্যমিকে পদবি বৈষম্য?

  • Miah Suleman
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
  • 93
“শিক্ষক” শব্দটি আমাদের সমাজে এক অনন্য মর্যাদার প্রতীক। জাতি গঠনের অন্যতম কারিগর হিসেবে শিক্ষকগণ সর্বদা সম্মানিত। কিন্তু আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি শব্দ বারবার আলোচনার কেন্দ্রে আসছে “সহকারী শিক্ষক”। অনেকেই বলছেন, এই পদবির মধ্যেই লুকিয়ে আছে একধরনের মানসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের ইঙ্গিত। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কর্মরতদের পদবি সংশোধন, যা বৈষম্যহীন ও মর্যাদাকর বলে প্রতীয়মান।  একজন শিক্ষক যখন “সহকারী” পরিচয়ে পরিচিত হন, তখন অনেক সময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি সহকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গিও তাঁর প্রতি ভিন্ন হয়ে ওঠে। তাঁকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক মনে না করা, কর্তৃত্ব বা দক্ষতায় সন্দেহ প্রকাশ করা, অথবা ক্লাসরুমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেওয়া এসবই বাস্তবতার চিত্র।
শুধু শ্রদ্ধার জায়গাতেই নয়, “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি শিক্ষক সমাজের আত্মপরিচয়েও এক ধরনের সংকট তৈরি করে। অনেকেই এটিকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণির’ পরিচয় হিসেবে দেখে থাকেন। এতে করে আত্মসম্মানে আঘাত লাগে এবং পেশার প্রতি ভালোবাসাও ক্ষয়ে যেতে থাকে। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, “ক্লাসে আমি প্রধান শিক্ষকের মতোই পড়াই, দাপ্তরিক দায়িত্বও পালন করি। অথচ শুধু একটি ‘সহকারী’ শব্দের কারণে আমার প্রতি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হয়ে যায়।”- কথাগুলো বলছেন মাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ  যদিও প্রশাসনিক কাঠামোয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পৃথক, বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ কাজই সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বর্তায়। তবু পদমর্যাদায় তারা পিছিয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদোন্নতির সুযোগ সীমিত, কিংবা তা আসে অনেক দেরিতে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের মনেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তারা মনে করে, সহকারী শিক্ষক মানে হয়তো কম অভিজ্ঞ কেউ, যাঁর শেখানোর গুণাগুণেও সন্দেহ থাকতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে সমান মনোযোগী থাকে না, যা পাঠদানের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গিও গড়ে তোলে। তাই “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশোধনিটা দেরিতে আসলেও মর্যাদাকর হয়েছে।  আশা করি, মাধ্যমিকের সহকারী বাদ দিয়ে পদবি সংশোধন সময়ের দাবি এবং বৈষম্যহীন শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করতে কর্তাব্যক্তিগণ ভাববেন। পদবি শুধু একটি পরিচয়ের অংশ নয় এটি একজন ব্যক্তির আত্মমর্যাদা, সমাজে তাঁর অবস্থান এবং পেশাগত দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি। তাই “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি যেহেতু নেতিবাচক সামাজিক বা মানসিক প্রভাব সৃষ্টি করে আসছে, তাই প্রাথমিকের ন্যায় মাধ্যমিকেও পরিবর্তন জরুরি।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

হুজরাপুর মডেল একাডেমী প্রাঙ্গণে জলাবদ্ধতা অতি বৃষ্টিতে হাঁটু পানি, ব্যাহত পাঠদান

কবে কেন মাধ্যমিকে পদবি বৈষম্য?

পোস্ট হয়েছেঃ ১১:১০:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫
“শিক্ষক” শব্দটি আমাদের সমাজে এক অনন্য মর্যাদার প্রতীক। জাতি গঠনের অন্যতম কারিগর হিসেবে শিক্ষকগণ সর্বদা সম্মানিত। কিন্তু আজকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি শব্দ বারবার আলোচনার কেন্দ্রে আসছে “সহকারী শিক্ষক”। অনেকেই বলছেন, এই পদবির মধ্যেই লুকিয়ে আছে একধরনের মানসিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের ইঙ্গিত। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে কর্মরতদের পদবি সংশোধন, যা বৈষম্যহীন ও মর্যাদাকর বলে প্রতীয়মান।  একজন শিক্ষক যখন “সহকারী” পরিচয়ে পরিচিত হন, তখন অনেক সময় শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি সহকর্মীদের দৃষ্টিভঙ্গিও তাঁর প্রতি ভিন্ন হয়ে ওঠে। তাঁকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষক মনে না করা, কর্তৃত্ব বা দক্ষতায় সন্দেহ প্রকাশ করা, অথবা ক্লাসরুমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার ঘাটতি দেখা দেওয়া এসবই বাস্তবতার চিত্র।
শুধু শ্রদ্ধার জায়গাতেই নয়, “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি শিক্ষক সমাজের আত্মপরিচয়েও এক ধরনের সংকট তৈরি করে। অনেকেই এটিকে ‘দ্বিতীয় শ্রেণির’ পরিচয় হিসেবে দেখে থাকেন। এতে করে আত্মসম্মানে আঘাত লাগে এবং পেশার প্রতি ভালোবাসাও ক্ষয়ে যেতে থাকে। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, “ক্লাসে আমি প্রধান শিক্ষকের মতোই পড়াই, দাপ্তরিক দায়িত্বও পালন করি। অথচ শুধু একটি ‘সহকারী’ শব্দের কারণে আমার প্রতি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা হয়ে যায়।”- কথাগুলো বলছেন মাধ্যমিক পর্যায়ে কর্মরত সহকারী শিক্ষক/শিক্ষিকাবৃন্দ  যদিও প্রশাসনিক কাঠামোয় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের দায়িত্ব পৃথক, বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায়, অধিকাংশ কাজই সহকারী শিক্ষকদের কাঁধে বর্তায়। তবু পদমর্যাদায় তারা পিছিয়ে থাকেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদোন্নতির সুযোগ সীমিত, কিংবা তা আসে অনেক দেরিতে। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের মনেও বিভ্রান্তি তৈরি হয়। তারা মনে করে, সহকারী শিক্ষক মানে হয়তো কম অভিজ্ঞ কেউ, যাঁর শেখানোর গুণাগুণেও সন্দেহ থাকতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরাও ক্লাসে সমান মনোযোগী থাকে না, যা পাঠদানের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গিও গড়ে তোলে। তাই “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশোধনিটা দেরিতে আসলেও মর্যাদাকর হয়েছে।  আশা করি, মাধ্যমিকের সহকারী বাদ দিয়ে পদবি সংশোধন সময়ের দাবি এবং বৈষম্যহীন শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করতে কর্তাব্যক্তিগণ ভাববেন। পদবি শুধু একটি পরিচয়ের অংশ নয় এটি একজন ব্যক্তির আত্মমর্যাদা, সমাজে তাঁর অবস্থান এবং পেশাগত দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি। তাই “সহকারী শিক্ষক” শব্দটি যেহেতু নেতিবাচক সামাজিক বা মানসিক প্রভাব সৃষ্টি করে আসছে, তাই প্রাথমিকের ন্যায় মাধ্যমিকেও পরিবর্তন জরুরি।