০৪:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

  • MD Tariqur Rahman Rezuan
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১২:৫৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • 144
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রণীত নিয়োগ নীতিমালা মানা হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে ড. মো. শফিউল্লাহর নিয়োগকে কেন্দ্র করে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় গত ২৯ জুন ড. মো. শফিউল্লাহকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. শফিউল্লাহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. মো. সোলাইমানের ছোট ভাই। এই পারিবারিক সম্পর্কের জেরে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির জমাকৃত তথ্য অনুযায়ী, ড. শফিউল্লাহ ১৯৯৮ সালে দাখিল, ২০০১ সালে আলিম পাশ করেন। এরপর ২০০৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে এল.এল.বি (অনার্স) সিজিপিএ ৩.২৮ এবং ২০০৯ সালে এল.এল.এম সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলো তাঁর পূর্ববর্তী পদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা।
অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে ‘সিনিয়র লেকচারার’ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ইউজিসি নিয়োগ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়াও, গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাধিকবার সংশোধন আনা হয়, যার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউজিসি’র নীতিমালা অনুযায়ী, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ এর মধ্যে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে (৪.০০ এর মধ্যে)। তবে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে প্রথম বিভাগ বা ৫৫% মার্কস যুক্ত করেছেন, অথচ সিজিপিএধারীদের জন্য এমন কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রত্যেক বিভাগে পরিকল্পনা কমিটি গঠনের সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও অভিযোগ রয়েছে অনেক বিভাগে এই কমিটি গঠনে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই আইন অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করায়।
উল্লেখ্য যে, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ইং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনা জারি করে যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে থাকতে পারবে না। অথচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সোলাইমান নোবিপ্রবি ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং নিজের ছোট ভাইকে ইউজিসির নিয়োগ নীতিমালা ও বিজ্ঞপ্তিতে চাহিত ফলাফলের চেয়ে কম (সিজিপিএ ৩.২৮) এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার পদকে সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। এইসব অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল অবিলম্বে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরিপ্রার্থী এক শিক্ষক বলেন, ভাইবা কার্ডটি দেরিতে রিসিভ করায় আমি বোর্ডে উপস্থিত হতে পারি নি। আমি উপস্থিত হতে না পারাটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষ দেয়ার সুযোগ নেই, তবে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি মোবাইলে কল বা ক্ষুদে বার্তা দিয়ে ইনফর্ম করলে মর্ডান যুগে তা বেশি কার্যকর হতো। আমার বিদেশি পিএইচডি এবং অনেক রিসার্চ পেপার ছিলো, আমি উপস্থিত হতে পারলে কর্তৃপক্ষ একজন ভালো প্রতিযোগি পেতে পারত। তবে যাকে নিয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে, উনি আগের প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি, উনি ছিলেন সিনিয়র লেকচারার। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে (পিএইচডি থাকলে) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৪ বছর সার্ভিস থাকতে হবে। একজন সিনিয়র লেকচারের অভিজ্ঞতাকে নিয়োগের আগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইন বিভাগে ড. শফিউল্লাহ এর নিয়োগের ব্যাপারে রিজেন্ট বোর্ডে একাধিক সদস্য আপত্তি জানালেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিনিয়র লেকচারার সমান সহকারী অধ্যাপক সারাবিশ্বে এটাই নিয়ম।
এ ছাড়া ৩.২৮ সিজিপিএ প্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে যে কোন একটি ফলাফল শিথিলযোগ্য এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন বিষয় ভেরিফাই করেই নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি।
কতজন চাকরি প্রার্থী নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, দুইজন উপস্থিত ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছিনা, কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে এমন হয়েছে যে দুইজন প্রার্থী নিয়ে নিয়োগ বোর্ড হয়েছে।
নিয়োগে স্বজনপ্রীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ পাওয়া সহযোগী অধ্যাপক ড. শফিউল্লাহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. মো. সোলাইমানের ছোট ভাই এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে রাষ্ট্রপতি ২ বছরের জন্য মনোনীত করেছেন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির পর এমন কেউ নির্দেশনা জারির পর এমন কেউ আর নিয়োগ প্রাপ্ত হয়নি। নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের না রাখাটাই উত্তম। এই নির্দেশনা জারির আগে যাদেরকে রাষ্ট্রপতি ২ বছরের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন তাদের ২ বছর না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত এটা ক্যান্সেল করা যায় না। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিলে সেটা রাষ্ট্রপতির চিঠিতেই ক্যান্সেল করতে হয়।
নোবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ তামজিদ হোসন চৌধুরীর এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
এসকল বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্য বলেন,
“আইনবহির্ভূতভাবে যদি নিয়োগ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মাদরাসাছাত্র সোহেল অপহরণের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে মানিকছড়িতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

নোবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ

পোস্ট হয়েছেঃ ১২:৫৮:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রণীত নিয়োগ নীতিমালা মানা হচ্ছে না এমন অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে ড. মো. শফিউল্লাহর নিয়োগকে কেন্দ্র করে এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় গত ২৯ জুন ড. মো. শফিউল্লাহকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি এর আগে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত ছিলেন। ড. শফিউল্লাহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. মো. সোলাইমানের ছোট ভাই। এই পারিবারিক সম্পর্কের জেরে নিয়োগে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির জমাকৃত তথ্য অনুযায়ী, ড. শফিউল্লাহ ১৯৯৮ সালে দাখিল, ২০০১ সালে আলিম পাশ করেন। এরপর ২০০৭ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে এল.এল.বি (অনার্স) সিজিপিএ ৩.২৮ এবং ২০০৯ সালে এল.এল.এম সিজিপিএ ৩.৫৮ পেয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০২০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তবে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হলো তাঁর পূর্ববর্তী পদ ও শিক্ষাগত যোগ্যতা।
অভিযোগ রয়েছে, তাঁকে ‘সিনিয়র লেকচারার’ হিসেবে অতীত অভিজ্ঞতা দেখিয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যা ইউজিসি নিয়োগ নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এছাড়াও, গত ১০ মার্চ ২০২৫ তারিখে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে একাধিকবার সংশোধন আনা হয়, যার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়োগ নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইউজিসি’র নীতিমালা অনুযায়ী, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ ৪.০০ (৫.০০ এর মধ্যে) এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে সিজিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে (৪.০০ এর মধ্যে)। তবে নোবিপ্রবি কর্তৃপক্ষ সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে সনাতন পদ্ধতিতে শিক্ষাগ্রহণকারী প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড় দিয়ে প্রথম বিভাগ বা ৫৫% মার্কস যুক্ত করেছেন, অথচ সিজিপিএধারীদের জন্য এমন কোনো ছাড় দেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে প্রত্যেক বিভাগে পরিকল্পনা কমিটি গঠনের সুস্পষ্ট বিধান থাকলেও অভিযোগ রয়েছে অনেক বিভাগে এই কমিটি গঠনে নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে নিয়োগের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিজেই আইন অনুষদের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পালন করায়।
উল্লেখ্য যে, ২২ এপ্রিল ২০২৫ ইং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক নির্দেশনা জারি করে যেখানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে থাকতে পারবে না। অথচ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. সোলাইমান নোবিপ্রবি ৬৬তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় উপস্থিত ছিলেন এবং নিজের ছোট ভাইকে ইউজিসির নিয়োগ নীতিমালা ও বিজ্ঞপ্তিতে চাহিত ফলাফলের চেয়ে কম (সিজিপিএ ৩.২৮) এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র লেকচারার পদকে সহকারী অধ্যাপক পদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদান করেন। এইসব অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির ঘটনায় শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহল অবিলম্বে তদন্ত ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আইন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক পদে চাকরিপ্রার্থী এক শিক্ষক বলেন, ভাইবা কার্ডটি দেরিতে রিসিভ করায় আমি বোর্ডে উপস্থিত হতে পারি নি। আমি উপস্থিত হতে না পারাটাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোষ দেয়ার সুযোগ নেই, তবে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি মোবাইলে কল বা ক্ষুদে বার্তা দিয়ে ইনফর্ম করলে মর্ডান যুগে তা বেশি কার্যকর হতো। আমার বিদেশি পিএইচডি এবং অনেক রিসার্চ পেপার ছিলো, আমি উপস্থিত হতে পারলে কর্তৃপক্ষ একজন ভালো প্রতিযোগি পেতে পারত। তবে যাকে নিয়েছেন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে, উনি আগের প্রতিষ্ঠানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেননি, উনি ছিলেন সিনিয়র লেকচারার। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে (পিএইচডি থাকলে) সহকারী অধ্যাপক হিসেবে ৪ বছর সার্ভিস থাকতে হবে। একজন সিনিয়র লেকচারের অভিজ্ঞতাকে নিয়োগের আগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিবেচনা করা যায় কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আইন বিভাগে ড. শফিউল্লাহ এর নিয়োগের ব্যাপারে রিজেন্ট বোর্ডে একাধিক সদস্য আপত্তি জানালেও তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সিনিয়র লেকচারার সমান সহকারী অধ্যাপক সারাবিশ্বে এটাই নিয়ম।
এ ছাড়া ৩.২৮ সিজিপিএ প্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, পিএইচডি ডিগ্রি থাকলে যে কোন একটি ফলাফল শিথিলযোগ্য এ ছাড়া আমরা বিভিন্ন বিষয় ভেরিফাই করেই নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্তে এসেছি।
কতজন চাকরি প্রার্থী নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, দুইজন উপস্থিত ছিলেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা যোগ্য প্রার্থী পাচ্ছিনা, কয়েকটি ডিপার্টমেন্টে এমন হয়েছে যে দুইজন প্রার্থী নিয়ে নিয়োগ বোর্ড হয়েছে।
নিয়োগে স্বজনপ্রীতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ পাওয়া সহযোগী অধ্যাপক ড. শফিউল্লাহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ এবং নোবিপ্রবির রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. মো. সোলাইমানের ছোট ভাই এ বিষয়ে তিনি অবগত নন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ অন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ড/সিলেকশন বোর্ডে থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে রাষ্ট্রপতি ২ বছরের জন্য মনোনীত করেছেন । শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা জারির পর এমন কেউ নির্দেশনা জারির পর এমন কেউ আর নিয়োগ প্রাপ্ত হয়নি। নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের না রাখাটাই উত্তম। এই নির্দেশনা জারির আগে যাদেরকে রাষ্ট্রপতি ২ বছরের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন তাদের ২ বছর না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত এটা ক্যান্সেল করা যায় না। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিলে সেটা রাষ্ট্রপতির চিঠিতেই ক্যান্সেল করতে হয়।
নোবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মোহাম্মদ তামজিদ হোসন চৌধুরীর এর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নীতিমালা অনুযায়ী উল্লেখিত নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।
এসকল বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) এক সদস্য বলেন,
“আইনবহির্ভূতভাবে যদি নিয়োগ হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।