
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মহাসড়কঘেঁষা বন বিভাগীয় চেকপোস্টগুলোতে কাঠ পাচার রোধের নামে চলছে লোকদেখানো কার্যক্রম। বনজ সম্পদ সুরক্ষার অজুহাতে স্থাপন করা এসব চেকপোস্ট কার্যত রূপ নিয়েছে নিরব চাঁদাবাজির কেন্দ্রে। ট্রানজিট পাসে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়েই যেন দায় সারা হচ্ছে কর্তব্য পালনের।
উপজেলার মাদাম বিবিরহাট বন চেকপোস্টে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০টি কাঠবাহী ট্রাক পার হয়ে যাচ্ছে যাচাই-বাছাই ছাড়াই। গাড়িগুলো চেকপোস্টে নিজ উদ্যোগে থামে, এরপর কাঠ সরবরাহকারী ঠিকাদারের কর্মীরা দৌড়ে গিয়ে মাত্র ৫-১০ মিনিটেই ট্রানজিট পাসে স্বাক্ষর করিয়ে গাড়ি ছাড়িয়ে নেন।
চালকদের ভাষ্যে, লাইসেন্স বা ক্যাশ মেমো থাকলেও চেকপোস্ট পার হতে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় ‘ট্রানজিট ফি’। নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়, কাঠ নামিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হয়।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, এসব চেকপোস্ট এখন ‘নিয়মিত আয়’ আদায়ের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। ট্রানজিট ফি আদায়ের পর কাঠের আকার, গুণগতমান কিংবা বৈধতা যাচাইয়ের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু স্বাক্ষর হলেই কাঠবাহী গাড়ির মুক্তি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেশনে কর্মরত এক বনকর্মী জানান, “চেকপোস্টগুলোই বন বিভাগের সবচেয়ে বড় দুর্নীতির আখড়া। এখানে পোস্টিং নিতে গেলে লক্ষ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দিতে হয়। যেখানে ৫ জনের পদ অনুমোদিত, সেখানে ২০-২৫ জন কাজ করছে—এবং সবাই বাশমতি চালের ভাত খায়।”
চেকপোস্টে দায়িত্বরত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের মধ্যে উপস্থিতির অভাবও রয়েছে প্রকটভাবে। অধিকাংশ সময়ই স্টেশন কর্মকর্তা অনুপস্থিত থাকেন, আর নিচের পর্যায়ের কর্মীরা ঢিলেঢালা মনোভাবেই কার্যক্রম চালিয়ে থাকেন।
সচেতন মহলের মতে, চেকপোস্টগুলোর কার্যক্রম যদি কেবল ট্রানজিট স্বাক্ষরে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বনজ সম্পদ রক্ষা নয় বরং পাচারই হবে এর মূল কাজ। সঠিক চেকিং ও কঠোর নজরদারি চালুর দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা, অন্যথায় সীতাকুণ্ড হবে কাঠ পাচারের আরও ‘নিরাপদ রুট’।