
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিলপাবলা অঞ্চলের একমাত্র পানি নিষ্কাশনের মাধ্যম কালিতলা খাল এখন আবাসিক দখলদারদের কবলে। খাল দখল হয়ে যাওয়ায় প্রতি বর্ষায় জলাবদ্ধতার কবলে পড়ছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ। স্থানীয়দের ভাষায়, “এ যেন দেখার কেউ নেই।”
প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ কালিতলা খালটি রাজবাঁধ এলাকা থেকে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত বিস্তৃত। এক সময় ৩৫ থেকে ৪৫ ফুট প্রশস্ত এই খাল দিয়ে বিলপাবলা মৌজার পানি রায়েরমহল স্লুইজ গেট হয়ে ময়ুর নদীতে গিয়ে মিশত। বর্তমানে খালটি কোথাও ১০ ফুট, কোথাও ৭ ফুট প্রশস্ত হয়ে গেছে, আবার কোথাও তো খালের অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, খালটি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রাস্তা, বসতবাড়ি ও আবাসিক স্থাপনা। প্রভাবশালী জমি ব্যবসায়ীদের দখলে খালটি ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দখলদাররা এতটাই ক্ষমতাবান যে, সাধারণ মানুষ মুখ খুলতেও সাহস পায় না। কেউ প্রতিবাদ করলে তার উপর নেমে আসে চাপ ও হয়রানির আশঙ্কা।
বৃষ্টির মৌসুম এলেই বিলপাবলার খয়রাতলা, ভাঙ্গাড়িভিটা, মুসলমানপাড়া, ফলইমারি, রাজবাঁধ ও আলাইপুর এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বসতবাড়ি, রাস্তা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছু পানির নিচে চলে যায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের চলাচল ও কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
গুটুদিয়ার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শেখ তুহিনুল ইসলাম বলেন, “বিভিন্ন ল্যান্ড ব্যবসায়ীদের দখলে থাকার কারণে খালের কোথাও অস্তিত্ব আছে, কোথাও নেই। আমি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে বলায় হুমকির মুখে পড়েছি।”
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, “স্থানীয় প্রভাবশালী ও জমি ব্যবসায়ীদের খাল দখলের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।” তিনি আরও জানান, “জলাবদ্ধতা নিরসনে শোলুয়া এলাকার স্লুইজ গেট আংশিকভাবে খুলে দেয়া হয়েছে এবং পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।”
অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে দ্রুত কালিতলা খালের পূর্ণাঙ্গ পুনঃখননের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। তারা চান, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা পুনরায় সচল হলে কৃষি, বসবাস এবং জনজীবন স্বাভাবিক হবে।
ডুমুরিয়ায় কালিতলা খাল দখল হয়ে আবাসিক এলাকায় রূপ নেয়ার ফলে পুরো বিলপাবলা অঞ্চলে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সংকট তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও এলাকাবাসীর দাবি, এর বাস্তবায়ন যেন দ্রুত ও কার্যকর হয়।