
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে (বেরোবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারী পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদানের দাবিতে উপাচার্যের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পরও নিজস্ব শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পদে নিয়োগে অবহেলিত ও বঞ্চিত। পূর্ববর্তী প্রশাসনের আমলে নিয়োগে পক্ষপাতিত্ব, প্রবেশপত্র ইস্যু না করা, কর্মরত শিক্ষার্থীদের চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং জীবননাশের হুমকি দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও স্মারকলিপিতে তুলে ধরা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বকীয়তা ও সংস্কৃতির বিকাশে নিজস্ব শিক্ষার্থীদের নিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে নিজ শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে, সেখানে বেরোবিতে কেন নয়?” এছাড়াও স্মারকলিপিতে শহীদ আবু সাঈদকে স্মরণ করে বলা হয়, “যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পদে যথার্থভাবে নিজস্ব শিক্ষার্থীরা নিযুক্ত থাকতেন, তবে হয়তো আবু সাঈদের নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটত না।”
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “শুধু অবকাঠামোগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন মানসিক ও প্রশাসনিক সংস্কার। আর তা সম্ভব নিজ ঘরের মেধাবীদের মাধ্যমে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শাহেদ বলেন, “আমরা যারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি বা করছি, তাদের অনেকেরই স্বপ্ন একদিন নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা কিংবা প্রশাসনিক কোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেরোবির অনেক বিভাগে আমাদের জন্য কোনো জায়গা নেই। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সহজেই নিয়োগ পাচ্ছে অথচ আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এটা খুবই দুঃখজনক ও হতাশার বিষয়। আমাদের দাবি, যোগ্যতা অনুযায়ী অন্তত কিছুসংখ্যক পদে নিজস্ব শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।”
সাবেক শিক্ষার্থী মুবিন বলেন, “বহু কষ্ট করে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করেছি। নিজের প্রতিষ্ঠানে কাজ করার স্বপ্ন ছিল সবসময়। কিন্তু বাস্তবতা খুবই হতাশাজনক। আমাদের কোনো মূল্যায়নই নেই। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করি, কিন্তু নির্বাচিত হই না। অথচ বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা সহজেই নিয়োগ পাচ্ছে। এতে আমাদের মাঝে চরম হতাশা তৈরি হচ্ছে। আমরা চাই, অন্তত ন্যায্য সুযোগ যেন আমাদেরও দেওয়া হয়। আমরাও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার সুযোগ পাই।”
স্মারকলিপিতে দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের মো. রাশেদ মিয়া ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ইমতিয়াজ আহম্মেদের নেতৃত্বে একাধিক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শওকাত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। মাত্র এক বাক্যে তিনি বলেন, “মিটিংয়ে আছি” এরপর ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।