
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে বিএনপি এখন রাজনীতির চেয়েও বেশি আলোচিত চাঁদাবাজি ও দখলবাজির জন্য! বিশেষ করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিল-কারখানা দখল, চোরাই তেল ব্যবসা এবং নদীপথে চাঁদাবাজির ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠে এসেছে যা রীতিমতো রাজনৈতিক অপরাধ সিন্ডিকেটের রূপ নিয়েছে।
সম্প্রতি ৩০ জুলাই মেঘনা নিউ টাউনে এক সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ প্রধান নিজেই এমনসব বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করেন যা সাধারণ জনগণের পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও হতবাক করেছে। অথচ চাঞ্চল্যকর বিষয় হলো-এই অভিযোগে নিজেরাও বাদ পড়েননি আশরাফ প্রধান ও তার ভাই!
তিনি বলেন, আমরা দুই ভাই মাত্র তিনটা মিল দখল করছি, কিন্তু আজহারুল ইসলাম মান্নান তার ছেলে সজিব, ভাতিজা আল-আমিন ও মাসুদ মিলে প্রায় ৩৮টি কারখানা দখলে রেখেছে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা চাঁদা তোলে তারা, কেউ ৮০ হাজার, কেউ দেড় লাখ!
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানা যায়, মান্নান পরিবারের নেতৃত্বে চলছে নৌপথে ডাকাতি, নদীতে চাঁদাবাজি, ঠিকাদারদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় ও চোরাই তেলের ব্যবসা। যুবদলের এই নেতা আরও দাবি করেন, গত কয়েকদিনে ৬ জন চাঁদাবাজ ও ৩ জন ডাকাত ধরা পড়েছে। তারা পুলিশের কাছে সব স্বীকার করেছে, ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল।
চাঁদাবাজির তালিকা: বিএনপি নেতার ছেলের ‘দৈনিক আয়’ দেড় লাখ!
সজিব (মান্নানের ছেলে): নৌ চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে দৈনিক ৮০ হাজার – ১.৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়
আল-আমিন ও মাসুদ (মান্নানের ভাতিজা): চোরাই তেলের ব্যবসা, বাজার ও ফুটপাত থেকে চাঁদা উত্তোলন
সহযোগী নজরুল ও শরীফ: ঠিকাদারদের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়
এ ছাড়া, মান্নান গং মেঘনা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, হুলসিম, তমিজউদ্দিন, ক্যামিকেলসহ প্রায় ৩৮টি মিল ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে বলে আশরাফ প্রধান অভিযোগ করেন।
এই সংবাদ সম্মেলন শুধু একজন নেতা নয়, পুরো সোনারগাঁ বিএনপির অস্তিত্বকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যেখানে নিজেরাই দখলের কথা অকপটে স্বীকার করছেন, সেখানে দলের আদর্শ, গণতন্ত্র বা জনসেবা—এসব এখন শুধুই লোক দেখানো স্লোগান।
সোনারগাঁয়ের সাধারণ জনগণ, শ্রমিক ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা এখন একটাই প্রশ্ন তুলছেন- এই দখলদার ও চাঁদাবাজ রাজনীতি কবে থামবে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি এখনো ‘রাজনৈতিক পরিচয়ের’ নামে এদের রক্ষা করবে? নাকি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করে, রাজনৈতিক দলীয় পরিচয় এখন অনেকের কাছে দুর্নীতির লাইসেন্স। তদন্তকারী সংস্থাগুলোর উচিত অবিলম্বে এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখা এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।