
সিরাজগঞ্জের কাজিপুরে পারিবারিক রেষারেষির জেরে হত্যাচেষ্টা, আতঙ্কে পুরো এলাকা।সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার নাটুয়াপাড়া ইউনিয়নে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা, যার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে দীর্ঘ পরিকল্পনা, প্রতিহিংসা এবং একটি পরিবারের ভাঙনের গল্প। এক ব্যক্তি নিজের মেয়ের শ্বশুরকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা অঞ্চল। এলাকাবাসীর মুখে এখন শুধুই প্রশ্ন—কেন, কীভাবে এমন ঘটনা ঘটল?
১০ দিন ধরে কলা গাছ উপড়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অভিনব কৌশল
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি দিনের পর দিন অভিনয় করে গেছেন। প্রতিরাতেই নিজেই কলা গাছ উপড়ে ফেলতেন এবং সকালে প্রতিবেশীদের সামনে নাটক করতেন—”কারা যেন রাতে কলাগাছ তুলে নিয়ে যাচ্ছে!” প্রথমে সবাই ভাবতো হয়তো দুর্বৃত্তের কাজ, কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে—এসব ছিল পরিকল্পনারই অংশ।
তিনি চেয়েছিলেন আশপাশের মানুষের মনোযোগ সরিয়ে রেখে ভিকটিমের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে।
২৪ জুলাই রাতে ফাঁদ তৈরি, শেষ মুহূর্তে পালিয়ে বাঁচে ভিকটিম
২৪ জুলাই রাত ১০টা ৪০ মিনিটে পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়। ওইদিন ভিকটিম (মেয়ের শ্বশুর) এক আত্মীয় আবু বকরের সঙ্গে রাত কিছুটা কাটান। কিন্তু তিনি চলে যাওয়ার পর ভিকটিম একাই বাড়ি ফেরেন। এই সুযোগেই হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তবে কোনোভাবে ভিকটিম তা টের পেয়ে যান এবং সময়মতো সরে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান। অভিযুক্ত ব্যক্তি তখন স্থান ত্যাগ করে গা-ঢাকা দেন।
হত্যাচেষ্টার পেছনে কারণ কী?
অনুসন্ধানে উঠে আসে একাধিক কারণ:
1. অসন্তুষ্টি ও প্রতারণার অভিযোগ: অভিযুক্ত ব্যক্তি মনে করেন, মেয়ের বিয়ে তার প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।
2. জামাইয়ের অবস্থা পরিবর্তন: বিয়ের সময় জামাইয়ের ওষুধের দোকান থাকলেও, এখন তিনি গার্মেন্টসে কাজ করছেন।
3. স্বাধীন জীবনযাপন: ভিকটিম তার ছোট ছেলে (মেয়ের স্বামী) ও ছেলের বউকে শহরে গার্মেন্টস চাকরির জন্য আলাদা থাকতে বললে, এতে ক্ষোভ বাড়ে।
4. অর্থ লেনদেন: বড় ছেলে ছোট ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা দেন, যা এখন ৬ লক্ষে পরিণত হয়। অভিযুক্ত ব্যক্তি চান এই টাকা নিজের হেফাজতে রাখতে, কিন্তু ছোট ভাই তাতে রাজি নয়।
এই আর্থিক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকেই ক্রমে জন্ম নেয় রাগ, অপমান এবং অবশেষে হত্যার পরিকল্পনা।
মূল উদ্দেশ্য: মেয়েকে ফেরানো ও অর্থ দখল?
স্থানীয়দের মতে, অভিযুক্ত ব্যক্তি চেয়েছিলেন এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে—যাতে সমাজ ও আইনের চোখে ভিকটিম পরিবারকে দোষী প্রমাণ করা যায়। এর মাধ্যমে মেয়েকে ডিভোর্সে বাধ্য করে ফের বাড়ি ফিরিয়ে আনা ও অর্থদণ্ড আদায় করাই ছিল তার লক্ষ্য।
বর্তমান অবস্থা ও আইনগত পদক্ষেপ
এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক। ঘটনাটি এলাকায় চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। ভিকটিম পরিবার ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করেছে। নাটুয়াপাড়া ও আশপাশের গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী দ্রুত তদন্ত ও দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন।