০৭:৫২ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নরসিংদীতে শিল্পকারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদ-নদী জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

নরসিংদী জেলায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই জেলায় ১০ হাজার ৫০০টি ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে পাওয়ারলুম ও ছাপা কারখানা। তবে বেসরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈধ ও অবৈধভাবে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ১২ সহ¯্রাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। কিছুসংখ্যক শিল্পকারখানা ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যাখ্যা সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনেক কারখানাই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। ফলে কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য নদীতে গিয়ে পানি দূষিত করছে। মরছে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী।অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা হাজার হাজার শিল্পকারখানার বিকট শব্দে ও নির্গত দুর্গন্ধময় বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্যে আবাসিক এলাকার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। এতে নরসিংদী জেলার প্রায় ১৮ লক্ষাধিক মানুষের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় এখানকার শিল্প বা আবাসিক এলাকা চিহ্নিত হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় একদিকে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে, অন্যদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে।
এসব শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় বর্জ্যরে কারণে নরসিংদী ও মাধবদী পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ প্রাণ ফুট ফ্যাক্টরির নির্গত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্পকারখানার বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে এ অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নদী ও খাল-বিলে এবং বিভিন্ন জলাশয়ে দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় নদীর মাছ, জমির ফসল, এমনকি গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টরির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, তাদের ফ্যাক্টরির ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি (ইটিপি) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটি চালু করার কাজ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিল্পকারখানার মালিককে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেনি। দ্রুত এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বন্ধ করা না গেলে এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। মাধবদীর টাটাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত মেসার্স ডিএন টেক্সটাইলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিলের অভ্যন্তরে ইটিপি থাকা সত্ত্বেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্পভাবে কারখানার বর্জ্য নির্গত হচ্ছে। ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারখানার মালিক মো. মিজানুর রহমান দুলালের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, ইটিপিতে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজগুলো শেষ করার পর তা চালু করা হবে। এ ব্যাপারে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যতটুকু সম্ভব আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অধিকাংশ শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাও দেয়া হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা নিরূপায়।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

জুড়ীতে নিসচা’র সড়ক সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

নরসিংদীতে শিল্পকারখানার বর্জ্যে দূষিত হচ্ছে নদ-নদী জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

পোস্ট হয়েছেঃ ০৮:১৫:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নরসিংদী জেলায় অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় পরিবেশ দূষণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা ও মেঘনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি দূষিত হয়ে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এই জেলায় ১০ হাজার ৫০০টি ছোট-বড় বিভিন্ন শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে পাওয়ারলুম ও ছাপা কারখানা। তবে বেসরকারি এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বৈধ ও অবৈধভাবে জেলার ৬টি উপজেলায় প্রায় ১২ সহ¯্রাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। কিছুসংখ্যক শিল্পকারখানা ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানাই অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে অনুমোদনপ্রাপ্ত শিল্পকারখানার বর্জ্য নিষ্কাশন পদ্ধতির ব্যাখ্যা সরকারি কাগজপত্রে উল্লেখ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। অনেক কারখানাই ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শিল্পকারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) নেই। ফলে কেমিক্যালযুক্ত বর্জ্য নদীতে গিয়ে পানি দূষিত করছে। মরছে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী।অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা হাজার হাজার শিল্পকারখানার বিকট শব্দে ও নির্গত দুর্গন্ধময় বিষাক্ত ধোঁয়া ও বর্জ্যে আবাসিক এলাকার ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিনষ্ট হচ্ছে। এতে নরসিংদী জেলার প্রায় ১৮ লক্ষাধিক মানুষের জীবন হুমকির মুখে রয়েছে।
অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় এখানকার শিল্প বা আবাসিক এলাকা চিহ্নিত হচ্ছে না। ফলে আবাসিক এলাকায় শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় একদিকে এখানকার ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে, অন্যদিকে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে।
এসব শিল্পকারখানা থেকে নির্গত দুর্গন্ধময় বর্জ্যরে কারণে নরসিংদী ও মাধবদী পৌরসভাসহ বিভিন্ন এলাকার নদ-নদী, খাল-বিল, ডোবা-নালার পানি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্ববৃহৎ প্রাণ ফুট ফ্যাক্টরির নির্গত বর্জ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পাশাপাশি শিল্পকারখানার বর্জ্যরে দুর্গন্ধে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে এ অঞ্চলের মানুষের বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে নদী ও খাল-বিলে এবং বিভিন্ন জলাশয়ে দূষিত পানি ছড়িয়ে পড়ায় নদীর মাছ, জমির ফসল, এমনকি গাছপালা পর্যন্ত মরে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টরির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি বলেন, তাদের ফ্যাক্টরির ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি (ইটিপি) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আপাতত বন্ধ রয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এটি চালু করার কাজ চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নরসিংদীর চিনিশপুর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে শিল্পকারখানার মালিককে বারবার বলা সত্ত্বেও তিনি এ ব্যাপারে কোনো কর্ণপাত করেনি। দ্রুত এসব শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বন্ধ করা না গেলে এলাকায় বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। মাধবদীর টাটাপাড়ায় প্রতিষ্ঠিত মেসার্স ডিএন টেক্সটাইলে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মিলের অভ্যন্তরে ইটিপি থাকা সত্ত্বেও তা দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকল্পভাবে কারখানার বর্জ্য নির্গত হচ্ছে। ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কারখানার মালিক মো. মিজানুর রহমান দুলালের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি জানান, ইটিপিতে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজগুলো শেষ করার পর তা চালু করা হবে। এ ব্যাপারে নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কামরুজ্জামান সরকার বলেন, পরিবেশ রক্ষায় যতটুকু সম্ভব আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। অধিকাংশ শিল্পকারখানার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মামলাও দেয়া হয়েছে। তবে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমরা নিরূপায়।