০৩:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মরা কালিগঙ্গায় গোসলে নেমে নিখোঁজ যুবতী

  • মোঃ নয়ন শেখ
  • পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
  • 123
মরা কালিগঙ্গায় গোসলে নেমে নিখোঁজ, ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি
‘ ওহ আল্লাহ আমার সোনার জান ভিক্ষা দিয়ে দাউরে..
সন্তান হারানোর শোকে মাতম মা শিরিনা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে ঘিরে বসে ও দাঁড়িয়ে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশিরা। পাগল প্রায় বাবা গোলাম মওলা ঘরের বারান্দার দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। সন্তানের শোকে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছেন। গোলাম মওলা ও শিরিনা দম্পতি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ার বাসিন্দা। রোববার (২০ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এ সময় গৃহিনী শিরিনা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ সোনা গো, আমার সোনা, কই গেলিরে..? ওহ আল্লাহ আমার সোনার জান ভিক্ষা দিয়ে দাউরে…।’
স্বজনদের ভাষ্য, তাঁদের বড় মেয়ে সোহানা খাতুন ( ১৮) বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দুরে গত শনিবার দুপুর দুইটার দিকে মরা কালিগঙ্গা নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে ও গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। আজ রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও এলাকাবাসী অভিযান চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে পারিনি।
এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে শনিবার দুইটার দিকে এক গামলা কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল সোহানা খাতুন। পরে বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় মা শিরিনা তাকে নদীতে ডাকতে যান। তিনি গিয়ে দেখেন গামলা ভরা কাপড়চোপড় পড়ে আছে, তবে সোহানা নেই। এরপর স্বজন ও স্থানীয়রা নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে ওইদিন রাত ৮টা থেকে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এবং রোববার সকাল ৮টা থেকে খুলনার ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত নিখোঁজ সোহানাকে উদ্ধার করতে পারেনি কেউ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সোহানার বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দুরে কালিগঙ্গা নদী। নদীতে বড় বড় কচুরিপানা। কোথাও হাটু সমান পানি। কোথাও বা মানুষ সমান। কোনো স্রোত নেই নদীতে। সেখানে নৌকায় চরে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। তাদের সহযোগীতা করছেন এলাকাবাসি। ভিড় করেছেন কয়েক শত উৎসুক জনতা। স্বজনরা আহাজারিতে ভেঙে পড়েছেন।
এ সময় স্থানীয় যুবক প্রিন্স মাহমুদ বলেন, সোহানা শনিবার নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল। পরে নদীর পাড়ে কাপড়চোপড় পাওয়া গেলেও সোহানাকে আর পাওয়া যায়নি। তাঁর ভাষ্য, হয়তো নদীতে ডুবে গেছে সোহানা।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার দুরে হাবিবুর রহমানের বাড়ি। তার স্ত্রী রেখা খাতুন বলেন, শনিবার গোসল শেষে বাড়ি ফিরছিলাম।আনুমানিক আড়াইটার দিকে সোহানা গামলা ভরা কাপড়চোপড় নদীর ওপরে নিয়ে আসে। আর আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম। কিন্তু সোহানা পরে নদীতে গেল, না বাড়িতে গেল তা খেয়াল করিনি।
শোকে কাতর সোহানার মা শিরিনা খাতুন বলেন, মেয়ে নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় নদীতে গিয়ে দেখি স্যান্ডেল, ওর ওড়না, গামলা ভরা কাপড়চোপড় ওপরে পড়ে আছে। কিন্তু আমার সোহানা নেই।
বাবা গোলাম মওলা বলেন, খবর পেয়ে সবাই মিলে সন্ধা পর্যন্ত নদীতে খোঁজাখুঁজি করি। তবুও না পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। তাঁর ভাষ্য, মেয়ে নদীতেই আছে।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্দ্র প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, শনিবার রাত ৮টা থেকে আমরা অভিযান শুরু করি। না পেয়ে রোববার সকাল থেকে খুলনার ডুবুরি দল অভিযান শুরু করেছে। তবে এখনও নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা ডুবুরি দলের লিডার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীতে স্রোত নেই। কচুরিপানায় ভরা। মাঝে মাঝে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০ ফিট পানি। অভিযান চলছে। তাঁর ভাষ্য, সোহানা নদীতে থাকলে এতো সময় খুঁজে পাওয়ার কথা।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

ধর্মপাশা পাইকুরাটি ইউনিয়ন বিএনপির মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা

মরা কালিগঙ্গায় গোসলে নেমে নিখোঁজ যুবতী

পোস্ট হয়েছেঃ ০৬:১৭:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫
মরা কালিগঙ্গায় গোসলে নেমে নিখোঁজ, ২৪ ঘণ্টায়ও উদ্ধার হয়নি
‘ ওহ আল্লাহ আমার সোনার জান ভিক্ষা দিয়ে দাউরে..
সন্তান হারানোর শোকে মাতম মা শিরিনা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি বিছানায় শুয়ে আছেন। তাকে ঘিরে বসে ও দাঁড়িয়ে আছেন স্বজন ও প্রতিবেশিরা। পাগল প্রায় বাবা গোলাম মওলা ঘরের বারান্দার দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছেন। সন্তানের শোকে তিনি স্তব্ধ হয়ে গেছেন। গোলাম মওলা ও শিরিনা দম্পতি কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বাগুলাট ইউনিয়নের বাঁশগ্রাম কারিগর পাড়ার বাসিন্দা। রোববার (২০ জুলাই) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে সরেজমিন গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এ সময় গৃহিনী শিরিনা খাতুন বিলাপ করতে করতে বলেন, ‘ সোনা গো, আমার সোনা, কই গেলিরে..? ওহ আল্লাহ আমার সোনার জান ভিক্ষা দিয়ে দাউরে…।’
স্বজনদের ভাষ্য, তাঁদের বড় মেয়ে সোহানা খাতুন ( ১৮) বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দুরে গত শনিবার দুপুর দুইটার দিকে মরা কালিগঙ্গা নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে ও গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। আজ রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নদীতে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও এলাকাবাসী অভিযান চালিয়েও তাকে উদ্ধার করতে পারিনি।
এলাকাবাসী ও ফায়ার সার্ভিস সুত্রে জানা গেছে, বাড়ির পাশের মরা কালিগঙ্গা নদীতে শনিবার দুইটার দিকে এক গামলা কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল সোহানা খাতুন। পরে বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় মা শিরিনা তাকে নদীতে ডাকতে যান। তিনি গিয়ে দেখেন গামলা ভরা কাপড়চোপড় পড়ে আছে, তবে সোহানা নেই। এরপর স্বজন ও স্থানীয়রা নদীতে নেমে খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পেয়ে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। পরে ওইদিন রাত ৮টা থেকে কুমারখালী ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এবং রোববার সকাল ৮টা থেকে খুলনার ডুবুরি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তবে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত নিখোঁজ সোহানাকে উদ্ধার করতে পারেনি কেউ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সোহানার বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দুরে কালিগঙ্গা নদী। নদীতে বড় বড় কচুরিপানা। কোথাও হাটু সমান পানি। কোথাও বা মানুষ সমান। কোনো স্রোত নেই নদীতে। সেখানে নৌকায় চরে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। তাদের সহযোগীতা করছেন এলাকাবাসি। ভিড় করেছেন কয়েক শত উৎসুক জনতা। স্বজনরা আহাজারিতে ভেঙে পড়েছেন।
এ সময় স্থানীয় যুবক প্রিন্স মাহমুদ বলেন, সোহানা শনিবার নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল। পরে নদীর পাড়ে কাপড়চোপড় পাওয়া গেলেও সোহানাকে আর পাওয়া যায়নি। তাঁর ভাষ্য, হয়তো নদীতে ডুবে গেছে সোহানা।
ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৫০ মিটার দুরে হাবিবুর রহমানের বাড়ি। তার স্ত্রী রেখা খাতুন বলেন, শনিবার গোসল শেষে বাড়ি ফিরছিলাম।আনুমানিক আড়াইটার দিকে সোহানা গামলা ভরা কাপড়চোপড় নদীর ওপরে নিয়ে আসে। আর আমি বাড়ি চলে এসেছিলাম। কিন্তু সোহানা পরে নদীতে গেল, না বাড়িতে গেল তা খেয়াল করিনি।
শোকে কাতর সোহানার মা শিরিনা খাতুন বলেন, মেয়ে নদীতে কাপড়চোপড় কাচতে এবং গোসল করতে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় নদীতে গিয়ে দেখি স্যান্ডেল, ওর ওড়না, গামলা ভরা কাপড়চোপড় ওপরে পড়ে আছে। কিন্তু আমার সোহানা নেই।
বাবা গোলাম মওলা বলেন, খবর পেয়ে সবাই মিলে সন্ধা পর্যন্ত নদীতে খোঁজাখুঁজি করি। তবুও না পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। তাঁর ভাষ্য, মেয়ে নদীতেই আছে।
কুমারখালী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্দ্র প্রসাদ বিশ্বাস বলেন, শনিবার রাত ৮টা থেকে আমরা অভিযান শুরু করি। না পেয়ে রোববার সকাল থেকে খুলনার ডুবুরি দল অভিযান শুরু করেছে। তবে এখনও নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান মেলেনি। অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খুলনা ডুবুরি দলের লিডার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, নদীতে স্রোত নেই। কচুরিপানায় ভরা। মাঝে মাঝে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৪০ ফিট পানি। অভিযান চলছে। তাঁর ভাষ্য, সোহানা নদীতে থাকলে এতো সময় খুঁজে পাওয়ার কথা।