
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) অবকাঠামো উন্নয়ন, সড়ক সংস্কার এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে গত চার বছরে নতুন কোনো সরকারি প্রকল্প অনুমোদন হয়নি। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে উন্নয়ন বরাদ্দ, যার প্রভাব পড়ছে পুরো মহানগরের সামগ্রিক অগ্রগতিতে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, কেসিসির নিজস্ব আয়ে শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও দৈনন্দিন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন পুরোপুরি নির্ভর করে সরকারি প্রকল্প ও বিদেশি দাতা সংস্থার অনুদানের ওপর। এই নির্ভরতার মাঝেই এখন প্রকল্প সংকটে পড়েছে কেসিসি।
২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে অনুমোদিত ‘সড়ক উন্নয়ন’ ও ‘ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ প্রকল্পের মধ্যে প্রথমটি গত অর্থবছরে শেষ হয়েছে এবং দ্বিতীয়টি শেষ হতে যাচ্ছে চলতি বছরেই। এছাড়া ২০২১ সালে শুরু হওয়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পটিও এবছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এরপর কেসিসির হাতে আর কোনো চলমান সরকারি প্রকল্প থাকছে না।
অর্থবছরভিত্তিক কেসিসির বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ সালে বাজেট ছিল ৮৬১ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেড়ে হয় ১,০৮২ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২৪-২৫ সালে তা নেমে আসে ৯৮১ কোটিতে এবং ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট আরও কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭২১ কোটি টাকায়। এক বছরের ব্যবধানে বাজেট কমেছে প্রায় ২৬০ কোটি টাকা।
সরকারি বরাদ্দ কমার চিত্রও উদ্বেগজনক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ ছিল ৩১৭ কোটি টাকা, পরের বছর তা কমে হয় ২২৯ কোটি, আর চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ মাত্র ১৩০ কোটি টাকা।
কেসিসির প্রধান প্রকৌশলী মশিউজ্জামান খান জানান, নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ড্রেন এবং অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য নতুন একটি প্রকল্পের খসড়া চার বছর ধরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় রয়েছে। এখনো অনুমোদন হয়নি। ফলে পুরনো সমস্যাগুলোর সমাধানে অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।
এ বিষয়ে কেসিসির প্রশাসক ও খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, “বড় প্রকল্পগুলোর অনুমোদনের জন্য সরকারকে অনুরোধ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশি দাতা সংস্থার সহায়তায় নতুন প্রকল্প আনতে চেষ্টা চলছে।”
নগর পরিকল্পনাবিদ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অতিবৃষ্টিজনিত জলাবদ্ধতা, এবং জরাজীর্ণ রাস্তাঘাটের কারণে খুলনার নাগরিক জীবন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। নতুন প্রকল্প অনুমোদন না হলে এই দুর্ভোগ আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।