০৮:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে ১১ লাখ টাকার মন্দিরের প্রকল্প অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়

  • আজীজুল গাজী
  • পোস্ট হয়েছেঃ ১২:২০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • 28

{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"effects":1,"beautify":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false}

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১% আয়কর খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ একটি মন্দিরে তিনটি প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশ্নের মুখে বরাদ্দের যৌক্তিকতা
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের জনসংখ্যার ৯০-৯৫% মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় কোনো মসজিদ বা মাদ্রাসায় একটি টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ একটি মন্দিরে একসঙ্গে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে গিয়ে দেখা যায়…
ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সিংগাতী গ্রামে অবস্থিত শীতলা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রকল্পটির বিস্তারিত সম্পর্কে অজ্ঞ। মন্দিরের উপদেষ্টা ও সহ-সভাপতিরা জানান, তাঁরা জানেন শুধু ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা বালু ভরাটের অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজ স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, কেউ জানেন না সরকারি প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড কবে লাগানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, “গতকালই তো ছাদ ঢালাই হয়েছে!” অথচ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, “আমি ছাঁদ ঢালাইয়ের বিষয়ে কিছু জানি না।” স্থানীয় ইউপি সদস্যের বক্তব্যে অসঙ্গতি ৮নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য জানান, তিনি এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, তবে বিল উত্তোলনের সময় তাঁর সিগনেচার নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ‘সুপারভিশন কমিটির সদস্য’। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কিছুই জানানো হয়নি।
ফাঁস হচ্ছে পুরনো বছরের অনিয়মও
২০২৪-২৫ অর্থ বছর ছাড়াও ২০১৬-১৭ এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরেও আরও ৭ লাখ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা, নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে এই ৭ লাখ টাকা নিয়ে ও কয়েক বছর ধরে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান সব মিলিয়ে এই ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে সরকারি অর্থ অপচয় ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে। সাবেক সচিবের সম্পদের অনুসন্ধান
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রকল্পের হিসাব ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সাবেক সচিব আশীষ ব্যানার্জির হাতে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে চাকরি করার সময় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার নামে জমি কেনা, ব্যাংক ব্যালেন্সের হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ। মাত্র ৫-৬ মাসে সমস্ত বাজেট খরচ!স্থানীয় সূত্র বলছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কোথাও তেমন কোনো বরাদ্দ না থাকলেও শুধু ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের পুরো বাজেট মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ব্যয় দেখানো হয়েছে। এসব ব্যয়ের মধ্যে মন্দিরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা জনসাধারণের দৃষ্টিতে বৈষম্য ও দুর্নীতির স্পষ্ট নমুনা।
সব তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে
অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেজিস্টার খাতা, বিল-ভাউচার, মাঠ পর্যায়ের চিত্রসহ প্রায় সব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি তথ্যপ্রমাণ-সহ আরও বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। শেষ কথা:আমরা কি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে পারবো না?এসব প্রশ্ন শুধু একজন সাংবাদিকের নয়—এটি পুরো সমাজের। তাই আসুন, সবাই মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সত্য প্রকাশ হোক, দুর্নীতির অবসান হোক।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

পাঁচ মাস ২৫ দিনে কোরআনের হাফেজ হলো শাহরাস্তির তানভীর

ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে ১১ লাখ টাকার মন্দিরের প্রকল্প অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড়

পোস্ট হয়েছেঃ ১২:২০:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নে সরকারি বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ১% আয়কর খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ একটি মন্দিরে তিনটি প্রকল্প দেখিয়ে প্রায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রশ্নের মুখে বরাদ্দের যৌক্তিকতা
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের জনসংখ্যার ৯০-৯৫% মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় কোনো মসজিদ বা মাদ্রাসায় একটি টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অথচ একটি মন্দিরে একসঙ্গে তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে গিয়ে দেখা যায়…
ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সিংগাতী গ্রামে অবস্থিত শীতলা মন্দিরে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রকল্পটির বিস্তারিত সম্পর্কে অজ্ঞ। মন্দিরের উপদেষ্টা ও সহ-সভাপতিরা জানান, তাঁরা জানেন শুধু ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা বালু ভরাটের অনুদান দেওয়া হয়েছে। বাকি কাজ স্থানীয়ভাবে চাঁদা তুলে হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
তবে আশ্চর্যজনকভাবে, কেউ জানেন না সরকারি প্রকল্পের কোন সাইনবোর্ড কবে লাগানো হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, “গতকালই তো ছাদ ঢালাই হয়েছে!” অথচ ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন বলেন, “আমি ছাঁদ ঢালাইয়ের বিষয়ে কিছু জানি না।” স্থানীয় ইউপি সদস্যের বক্তব্যে অসঙ্গতি ৮নং ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য জানান, তিনি এই প্রকল্প সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, তবে বিল উত্তোলনের সময় তাঁর সিগনেচার নেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি ‘সুপারভিশন কমিটির সদস্য’। অথচ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কিছুই জানানো হয়নি।
ফাঁস হচ্ছে পুরনো বছরের অনিয়মও
২০২৪-২৫ অর্থ বছর ছাড়াও ২০১৬-১৭ এবং ২০২১-২২ অর্থ বছরেও আরও ৭ লাখ টাকার হোল্ডিং ট্যাক্সের টাকা, নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে এই ৭ লাখ টাকা নিয়ে ও কয়েক বছর ধরে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান সব মিলিয়ে এই ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে সরকারি অর্থ অপচয় ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠছে। সাবেক সচিবের সম্পদের অনুসন্ধান
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই প্রকল্পের হিসাব ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সাবেক সচিব আশীষ ব্যানার্জির হাতে। তার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি বিভিন্ন ইউনিয়নে চাকরি করার সময় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। তার নামে জমি কেনা, ব্যাংক ব্যালেন্সের হিসাব প্রশ্নবিদ্ধ। মাত্র ৫-৬ মাসে সমস্ত বাজেট খরচ!স্থানীয় সূত্র বলছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের কোথাও তেমন কোনো বরাদ্দ না থাকলেও শুধু ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের পুরো বাজেট মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে ব্যয় দেখানো হয়েছে। এসব ব্যয়ের মধ্যে মন্দিরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যা জনসাধারণের দৃষ্টিতে বৈষম্য ও দুর্নীতির স্পষ্ট নমুনা।
সব তথ্য প্রমাণ হাতে রয়েছে
অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের রেজিস্টার খাতা, বিল-ভাউচার, মাঠ পর্যায়ের চিত্রসহ প্রায় সব তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগিরই বাকি তথ্যপ্রমাণ-সহ আরও বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। শেষ কথা:আমরা কি দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে পারবো না?এসব প্রশ্ন শুধু একজন সাংবাদিকের নয়—এটি পুরো সমাজের। তাই আসুন, সবাই মিলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। সত্য প্রকাশ হোক, দুর্নীতির অবসান হোক।