
যাকে ঘিরে মৃত্যু হয়েছিল একজন সাহসী সাংবাদিকের, যিনি আজও হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনিই আবার ফিরে এলেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে। ঘটনাটি আঘাত করেছে সাধারণ মানুষের বিশ্বাস, প্রশ্ন তুলেছে ন্যায়বিচার ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নিয়ে। জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বহিষ্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, যিনি সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার মূল অভিযুক্ত, সম্প্রতি পুনরায় চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনের অনুমতি পেয়েছেন। ঘটনার সূত্রপাত ২০২৩ সালের ১৪ জুন, রাতের আঁধারে পেশাগত দায়িত্ব শেষে বাড়ি ফেরার পথে বর্বরোচিত হামলার শিকার হন সাংবাদিক নাদিম। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ জুন সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে যে মামলাটি দায়ের করেন, তাতে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করা হয়। মামলার পর বাবুকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে হাইকোর্টে রিট করে বরখাস্তের আদেশ স্থগিতের আবেদন করেন। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি, হাইকোর্ট তাঁর বরখাস্ত আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে। সেই ছয় মাসের মেয়াদ ১৯ আগস্টে শেষ হবে ততদিনের জন্যই আবার ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষমতায় ফিরলেন বাবু। ২৮ জুলাই, বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে বাবুকে পুনরায় দায়িত্ব পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। পরদিন ২৯ জুলাই বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (স্থানীয় সরকার) এ. কে. এম. আব্দুল্লাহ-বিন-রশিদ। অঅন্যদিকে সাধুরপাড়া ইউপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিয়াউল রহমান জানান, আমরা ইউএনও অফিস থেকে চিঠি পেয়েছি, কিন্তু বাবু সাহেবকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তিনি হয়তো শহরে অবস্থান করছেন।অর্থাৎ, ইউনিয়নের চেয়ারে তিনি ফিরলেও জনতার সামনে এখনও অনুপস্থিত। এই সিদ্ধান্তে স্থানীয় জনতা এবং সাংবাদিক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে। তাদের ভাষায় একজন সাংবাদিকের মৃত্যু নিয়ে যে মামলা এখনো চলমান, সেই মামলার প্রধান আসামিকে আবারও জনগণের প্রতিনিধি বানানো মানেই গণতন্ত্র ও বিচারব্যবস্থার ওপর সরাসরি থুথু ছিটানো। সাংবাদিকদের কলম যদি সত্য বলার দায়ে রক্তে রাঙে, আর খুনি যদি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়, তাহলে আগামী দিনে আর কেউ লেখার সাহস রাখবে না। আইনের দৃষ্টিতে মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ অপরাধী নয় এ কথা ঠিক। তবে নৈতিকতা, জনস্বার্থ ও নিরাপত্তা বিবেচনায় এমন একজন বিতর্কিত ব্যক্তিকে দায়িত্বে ফিরিয়ে দেওয়া প্রশাসনিক দূরদর্শিতার প্রশ্ন তোলে।