০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৫ অগাস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​চন্দ্রনাথ, গুলিয়াখালী ও মহামায়া: এক দিনে সীতাকুণ্ডের তিন বিস্ময়

  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড—একদিকে সুউচ্চ পাহাড়, অন্যদিকে সুবিশাল সমুদ্র। প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যদেশের অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়। সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা ও লেক—সব একসাথে উপভোগের সুযোগ এনে দিয়েছে এই অঞ্চল। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই লম্বা সফরের সুযোগ পান না।তাই এক দিনের ভ্রমণেই যদি পাহাড়-সমুদ্র-লেক দেখা যায়, তবে সেটিই যেন পরিপূর্ণ এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। চলুন জেনে নিই সীতাকুণ্ডের এমনই তিনটি জনপ্রিয় গন্তব্য—যেখানেআপনি একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়: পাহাড় জয় ও শিবমন্দির দর্শন চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতচন্দ্রনাথ পাহাড় একদিকে যেমন দর্শনীয়, অন্যদিকে তেমনি রোমাঞ্চকর। পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ঐতিহাসিক শিবমন্দির, যা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র তীর্থস্থানও বটে। পাহাড়ে ওঠার পথে প্রায় ২২০০ সিঁড়ি পাড়ি দিতে হয়। কিছু সিঁড়ি বেশ পিচ্ছিল ও সংকীর্ণ—ফলে সাবধানতা আবশ্যক। প্রায় দেড়ঘণ্টার চড়াই-উৎরাই পথ পেরিয়ে মন্দিরে পৌঁছালে পুরো সীতাকুণ্ড শহর এবং দূরবর্তী সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য ধরা দেয় চোখে। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড বাজার কলেজ রোড ধরে অটো বা সিএনজিতে যেতে হবে চন্দ্রনাথ পাহাড়েরপাদদেশ পর্যন্ত। জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। রিজার্ভে গেলে ২০০–২৫০ টাকা লাগতে পারে। গুলিয়াখালী সি বিচ: সবুজের গালিচা চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখে নেমে এসেই সরাসরি চলে যেতে পারেন গুলিয়াখালী সৈকতে। এটি সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। সৈকতটি অন্য যে কোনো সমুদ্র সৈকত থেকে একেবারেই আলাদা—কারণ এখানে সমুদ্রের গায়ে সবুজ ঘাসে মোড়ানো টিলার মতো গঠন আর কেওড়া বনের অপার সৌন্দর্যত রয়েছে। সৈকতের চারপাশে সরু নালা, কেওড়া গাছের শ্বাসমূল আর জোয়ার-ভাটার খেলা এই স্থানকে দিয়েছে সোয়াম্প ফরেস্ট বা ম্যানগ্রোভ পরিবেশের ছোঁয়া। পাখির কলতান, বাতাসের সুর ও ঢেউয়ের শব্দে এ এক অনন্য প্রকৃতিক কাব্য। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড নামার বাজার থেকে পাওয়া যাবে সিএনজি। জনপ্রতিভাড়া ৪০–৫০ টাকা। বেড়িবাঁধে নেমে কিছুটা হাঁটলেই সৈকতের প্রান্তে পৌঁছানো যাবে। মহামায়া লেক: পাহাড় ঘেরা কৃত্রিম সৌন্দর্য গুলিয়াখালী থেকে ফেরার পথে দুপুরের খাবার সেরে রওনা দিন মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকের উদ্দেশে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক,যার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। পাহাড়ঘেরা এই লেকটি শুধু নয়নাভিরাম প্রকৃতিই নয়, বরং ট্রেকিং ও নৌভ্রমণের জন্যও আদর্শ। লেকের পাড়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পানিরবিস্তৃতি, দূর থেকে আসা ঝরনার শব্দ আর গা ছমছমে নির্জনতা—যা প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড থেকে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি বাজার হয়ে পৌঁছাতে হবে রাবার ডেম বা মহামায়াগেট পর্যন্ত। সেখান থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার পথ লেকের গা ঘেঁষে। চাইলে সিএনজি করেও গেট পর্যন্ত যাওয়া যায়। শেষ কথা : একদিনে সীতাকুণ্ডের তিন রূপ চন্দ্রনাথের পাহাড়ি চূড়া, গুলিয়াখালীর সবুজ সমুদ্র, আর মহামায়ার নীল জলরাশি। এই তিনে ঘেরা একদিনের ভ্রমণ আপনার মনকে যেমন প্রশান্ত করবে,তেমনি নতুন করে জীবনকে দেখার চোখও খুলে দেবে। সময় সুযোগ করে একদিন ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড। প্রকৃতি এখানে আপনাকে আপন করে নেবে।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

মদন উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারি শিক্ষক সমিতির কমিটি ঘোষণা

​চন্দ্রনাথ, গুলিয়াখালী ও মহামায়া: এক দিনে সীতাকুণ্ডের তিন বিস্ময়

পোস্ট হয়েছেঃ ০৫:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড—একদিকে সুউচ্চ পাহাড়, অন্যদিকে সুবিশাল সমুদ্র। প্রকৃতির এমন অপার সৌন্দর্য আর বৈচিত্র্যময় ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যদেশের অন্য কোথাও খুব কমই দেখা যায়। সমুদ্র, পাহাড়, ঝরনা ও লেক—সব একসাথে উপভোগের সুযোগ এনে দিয়েছে এই অঞ্চল। কর্মব্যস্ত জীবনে অনেকেই লম্বা সফরের সুযোগ পান না।তাই এক দিনের ভ্রমণেই যদি পাহাড়-সমুদ্র-লেক দেখা যায়, তবে সেটিই যেন পরিপূর্ণ এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। চলুন জেনে নিই সীতাকুণ্ডের এমনই তিনটি জনপ্রিয় গন্তব্য—যেখানেআপনি একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন। চন্দ্রনাথ পাহাড়: পাহাড় জয় ও শিবমন্দির দর্শন চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিতচন্দ্রনাথ পাহাড় একদিকে যেমন দর্শনীয়, অন্যদিকে তেমনি রোমাঞ্চকর। পাহাড়টির উচ্চতা প্রায় ১১৫২ ফুট। পাহাড়ের চূড়ায় রয়েছে ঐতিহাসিক শিবমন্দির, যা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র তীর্থস্থানও বটে। পাহাড়ে ওঠার পথে প্রায় ২২০০ সিঁড়ি পাড়ি দিতে হয়। কিছু সিঁড়ি বেশ পিচ্ছিল ও সংকীর্ণ—ফলে সাবধানতা আবশ্যক। প্রায় দেড়ঘণ্টার চড়াই-উৎরাই পথ পেরিয়ে মন্দিরে পৌঁছালে পুরো সীতাকুণ্ড শহর এবং দূরবর্তী সমুদ্রের অসাধারণ দৃশ্য ধরা দেয় চোখে। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড বাজার কলেজ রোড ধরে অটো বা সিএনজিতে যেতে হবে চন্দ্রনাথ পাহাড়েরপাদদেশ পর্যন্ত। জনপ্রতি ভাড়া ৩০-৪০ টাকা। রিজার্ভে গেলে ২০০–২৫০ টাকা লাগতে পারে। গুলিয়াখালী সি বিচ: সবুজের গালিচা চন্দ্রনাথ পাহাড় দেখে নেমে এসেই সরাসরি চলে যেতে পারেন গুলিয়াখালী সৈকতে। এটি সীতাকুণ্ড বাজার থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে। সৈকতটি অন্য যে কোনো সমুদ্র সৈকত থেকে একেবারেই আলাদা—কারণ এখানে সমুদ্রের গায়ে সবুজ ঘাসে মোড়ানো টিলার মতো গঠন আর কেওড়া বনের অপার সৌন্দর্যত রয়েছে। সৈকতের চারপাশে সরু নালা, কেওড়া গাছের শ্বাসমূল আর জোয়ার-ভাটার খেলা এই স্থানকে দিয়েছে সোয়াম্প ফরেস্ট বা ম্যানগ্রোভ পরিবেশের ছোঁয়া। পাখির কলতান, বাতাসের সুর ও ঢেউয়ের শব্দে এ এক অনন্য প্রকৃতিক কাব্য। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড নামার বাজার থেকে পাওয়া যাবে সিএনজি। জনপ্রতিভাড়া ৪০–৫০ টাকা। বেড়িবাঁধে নেমে কিছুটা হাঁটলেই সৈকতের প্রান্তে পৌঁছানো যাবে। মহামায়া লেক: পাহাড় ঘেরা কৃত্রিম সৌন্দর্য গুলিয়াখালী থেকে ফেরার পথে দুপুরের খাবার সেরে রওনা দিন মিরসরাইয়ের মহামায়া লেকের উদ্দেশে। এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক,যার আয়তন প্রায় ১১ বর্গকিলোমিটার। পাহাড়ঘেরা এই লেকটি শুধু নয়নাভিরাম প্রকৃতিই নয়, বরং ট্রেকিং ও নৌভ্রমণের জন্যও আদর্শ। লেকের পাড়ে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পানিরবিস্তৃতি, দূর থেকে আসা ঝরনার শব্দ আর গা ছমছমে নির্জনতা—যা প্রকৃতিপ্রেমীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যেভাবে যাবেন: সীতাকুণ্ড থেকে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদীঘি বাজার হয়ে পৌঁছাতে হবে রাবার ডেম বা মহামায়াগেট পর্যন্ত। সেখান থেকে ১৫ মিনিট হাঁটার পথ লেকের গা ঘেঁষে। চাইলে সিএনজি করেও গেট পর্যন্ত যাওয়া যায়। শেষ কথা : একদিনে সীতাকুণ্ডের তিন রূপ চন্দ্রনাথের পাহাড়ি চূড়া, গুলিয়াখালীর সবুজ সমুদ্র, আর মহামায়ার নীল জলরাশি। এই তিনে ঘেরা একদিনের ভ্রমণ আপনার মনকে যেমন প্রশান্ত করবে,তেমনি নতুন করে জীবনকে দেখার চোখও খুলে দেবে। সময় সুযোগ করে একদিন ঘুরে আসুন সীতাকুণ্ড। প্রকৃতি এখানে আপনাকে আপন করে নেবে।