
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফার্মেসি বিভাগে শিক্ষক সংকট নিরসনে দ্রুত নিয়োগের দাবিতে এবার প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৩ আগস্ট) সকাল ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করে।
এসময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়, “ধিক্কার ধিক্কার, ব্যর্থ প্রশাসন”, “পারলে শিক্ষক নিয়োগ দেন, নাইলে গদি ছাইড়া দেন”, “শিক্ষা মোদের অধিকার, শিক্ষক নিয়োগ দরকার”। আন্দোলনের কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রম আংশিকভাবে ব্যাহত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফার্মেসি বিভাগে বর্তমানে ৮টি ব্যাচে ২৮৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৫ জন শিক্ষক। বিভাগের ১২টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৭ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে থাকায় পাঠদান কার্যক্রমে মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। একজন শিক্ষকের ওপর গড়ে ৫৭ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানের দায়িত্ব বর্তায়, যা মানদণ্ড অনুযায়ী ১:২০ অনুপাতের চেয়ে অনেক বেশি এবং মানসম্মত শিক্ষার জন্য অত্যন্ত অপ্রতুল।
শিক্ষার্থীরা জানান, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকায় নিয়মিত ক্লাস, কোর্স কাভারেজ এবং ল্যাব পরিচালনায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, পূর্বে একাধিকবার আন্দোলন ও স্মারকলিপি প্রদান করলেও প্রশাসন আশ্বাস ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা শাওন বলেন, “আমরা বিগত চার মাস থেকেই ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষক সংকট নিয়ে কয়েকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। তারপর বিভাগের সব শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেছি। গত ২১ জুলাই উপাচার্য স্যার আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন যে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে ইউজিসি থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুনির্দিষ্ট সার্কুলার আসবে। কিন্তু আজ ৩ আগস্ট, এখনো কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি আসেনি। এজন্য আমরা আজ প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়েছি।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে আমরা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে যোগাযোগ করেছি এবং প্রয়োজনীয় চিঠিও প্রদান করা হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক মনে করি, তবে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়ার মতো স্বৈরাচারী আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আন্দোলনের একটি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি রয়েছে, যা তারা অনুসরণ করছে না। বর্তমানে আমাদের অতিথিরা ভবন থেকে বের হতে পারছেন না। শিক্ষার্থীদের আচরণ স্বৈরাচারী সময়ের ছাত্রলীগের মতো আচরণ।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষক নিয়োগ বিষয়ে আগামী বুধবারের মিটিংয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, “তোমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একটি চিঠি পেয়েছি। আগামী ৬ তারিখ একটি মিটিং রয়েছে, তোমরা ততদিন অপেক্ষা করো। ওইদিনেই আমরা সিদ্ধান্তে যেতে পারব।”
উল্লেখ্য, এর আগেও শিক্ষক সংকট নিরসনে ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন, মানববন্ধন, উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেছেন।