
গাইবান্ধার সাঘাটায় পুকুর থেকে সিজু মিয়া (২৫) নামে এক যুবকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ হত্যা করে পুকুরে ফেলা রাখার অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী।
হত্যার বিচারের দাবিতে আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে গাইবান্ধা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেন শত শত এলাকাবাসী।
পরে তাঁরা বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও করে অবস্থান নেন। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন নিহত সিজুর মা মোছা. রিক্তা বেগম, বড় বোন খুশি বেগম, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ফেরদৌস সরকার রুম্মান, স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী, মো. আরিফুর রহমান, কবির হোসেনসহ অনেকেই। বক্তারা বলেন, সিজুকে পুলিশ থানায় ডেকে নিয়ে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করছেন। থানায় থেকে পালানোর সময় পুকুরে ঝাপ দিয়ে তিনি মারা যান নাই। যার বাড়ি নদীর উপর তিনি সাঁতার জানে। এই হত্যার ২৪ ঘন্টার মধ্য বিচার ও সাঘাটা থানার ওসিকে অব্যাহতি না দিলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন তাঁরা। সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম দাবি করেন, কয়েকদিন আগে সিজু মিয়া একটি পুরাতন অ্যান্ড্রয়েড ফোন ক্রয় করেছিলেন।
সাঘাটা থানা থেকে ফোনটি চোরাই বলে জানায় এসআই রাকিব। পরে তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলীর উপস্থিতিতে ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ফোনটি পুলিশকে দিয়ে দেন। তারপরও সাঘাটা থেকে পুলিশ পরিচয়ে দিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে সিজুকে সাঘাটা থানায় দেখা করতে বলেন। তিনি আরও দাবি করেন, তার ছেলেকে পুলিশ হত্যা করে পুকুরে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার নাটক করে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছে। সকালে পুকুর থেকে মরদেহ উদ্ধারের ঘটনাটিও নাটক ছিল পুলিশের। তিনি তার ছেলের হত্যার বিচার দাবি করেন। স্থানীয় ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, এ হত্যা নি:সন্দেহে পুলিশ করছেন। তার প্রমান একটি মানুষের শরীর ১২ ঘন্টা পানি নিচে ছিল। তার পকেট থেকে গাইবান্ধা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একটি স্পৃষ্ট প্রবেশপত্র কিভাবে এলো। পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের পর তার পকেট থেকে বের করল , সেটি একটু ভিজলো না। এই হত্যার সঠিক বিচার দাবি করছি।
গাইবান্ধা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ফেরদাউস সরকার রুম্মান বলেন, ‘সিজু অত্যন্ত নম্র ও ভদ্র প্রকৃতির ছেলে। তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যার ভিডিও আমাদের কাছে আছে। আমরা এ হত্যার বিচার দাবি করছি।গাইবান্ধা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলাম সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ঘটনাস্থলে এসে সিজু হত্যার সঠিক তদন্ত করে বিচারের আশ্বাস দিলে বিক্ষুদ্ধ জনতা পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে সরে যান। নিহত সিজু মিয়া (২৫) গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ইউনিয়নের বাগুরিয়া গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
উল্লেখ্য :পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে গাইবান্ধার সাঘাটা থানায় ঢুকে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মহসিন আলীকে ছুরিকাঘাত করে পুকুরে ঝাঁপ দেয় সিজু মিয়া। পরদিন শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরের কচুরিপানার মধ্য থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অজ্ঞাতনামা হিসেবে ওই ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে।