
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ এবং অমাবস্যার প্রভাবে ভোলায় মেঘনা নদীর পানি দ্বিতীয় দিনের মতো বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেল ৩টায় মেঘনার পানি বিপৎসীমার ১শ’ ১২ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে বাঁধের বাইরের নিচু এলাকা। ফলে ভোলার সদর, মনপুরা, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে বসতঘর, বাড়ির আঙিনা, রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। কোথায় হাঁটু পানি, আবার কোথায় কোমর সমান পানিতে তলিয়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। এছাড়া দিনভর থেমে থেমে বর্ষণের জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে অনেক স্থানে। অতি জোয়ারের চাপে পুকুর ও মাছের ঘের ভেসে গেছে। ডুবে গেছে রান্না ঘর, রাস্তাঘাট।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানিতে চারপাশ ডুবে থাকায় অনেকের ঘরে রান্নার চুলাও জ্বলেনি। এতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে দুর্গত এলাকায়। পানিবন্দি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সেখানকার মানুষ। এলাকাবাসী জানায়, নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বেড়ে যাওয়ায় ভোলার উপকূলের অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে শুক্রবার (২৫ জুলাই) তুলনায় শনিবার (২৬ জুলাই) পানির চাপ কিছুটা কম। তবুও প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন এলাকা।
ভোলা সদরের ইলিশা এলাকার পানিবন্দি বাসিন্দা মনোয়ারা রহিমা বেগম বলেন, দুদিন ধরে জোয়ারের পানিতে ভাসছি। অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। মনপুরা এলাকার বাসিন্দা রিতা রাণী বলেন, আমাদের এখানে বর্তমানে মাঝা (কোমর) পরিমানে পানি উঠেছে। অনেক সময় গলা পর্যন্তও পানি উঠে। আমাদের ঘর পানিতে ডুবে রয়েছে। রান্না-বান্না করতে না পারায় কষ্টের মধ্যে আছি।
এদিকে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটসহ অভ্যন্তরীণ ১০ রুটের লঞ্চ চলাচল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়েই ছোট ছোট ট্রলারে করে ভোলা থেকে লক্ষ্মীপুরসহ অন্যান্য রুটে যাত্রীরা পারাপার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন নজরদারী দেখা যায়নি। তবে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। অতি জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূলের রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ জনপদ।
ভোলার জেলা প্রশাসক মো: আজাদ জাহান বলেন, নিম্নচাপেরর প্রভাবে পানি বেড়ে অনেকে স্থানে পানি প্রবেশ করেছে। বেড়িবাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামতের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে যারা পানিবন্দি আছেন, তাদের সহায়তা করা হবে। ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: হাসানুজ্জামান বলেন, মেঘনার বিপৎসীমা অতিক্রম করায় বাঁধের বাইরের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে পানি নেমে গেলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।