
সংসার চলত টেনেটুনে। লেগেই থাকত অভাব-অনটন। এই অনটনের পরিবারের সদস্য গ্রামের মসজিদে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে ইমামতির চাকরি নিয়েছিলেন। চলাচলের জন্য ব্যবহার করতেন বাইসাইকেল।
হাতে থাকত স্বল্প দামের মোবাইল ফোনসেট। তবে হঠাৎ করেই বদলে যায় তাঁর জীবনযাপন। বাইসাইকেলের বদলে ব্যবহার শুরু করেন দামি মোটরসাইকেল, আগের কম দামের মোবাইলের বদলে ব্যবহার করতে থাকেন লাখ টাকার মোবাইল ফোনসেট। শুধু একটি পদ তাঁর জীবন বদলে দিতে শুরু করেছে।
এই পদটির নাম ‘সমন্বয়ক’। আর যাঁর জীবন বদলে যেতে শুরু করেছে, তিনি হামিদুর রহমান রানা।
সদ্য বিলুপ্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঝিনাইদহ জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি মহেশপুরের বলিভদ্রপুরে।
এলাকায় এখন সবাই তাঁকে ‘সমন্বয়ক রানা’ নামেই ডাকে। জানা গেছে, জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাইদুর রহমানের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত এই হামিদুর রহমান রানা। সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা মহেশপুরে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, পুড়াপাড়া পশুর হাট থেকে নিয়মিত মাসোহারা আদায়, নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে কমিশন ও চাল বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
মহেশপুর পৌরসভার অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ১৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকার বরাদ্দ আছে।
এই কাজের ঠিকাদারি নিয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল রানার সঙ্গে হামিদুর রহমান রানার বনিবনা হচ্ছিল না। পৌরসভার কাজ বণ্টনের জন্য গত ২২ জুলাই দুপুরে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবকে নিয়ে মহেশপুরে গিয়ে জনরোষে পড়েন রানা ও অন্যরা। ওই সময় আরেকটি পক্ষ তাঁদের অবরোধ করে রাখে। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের একাধিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে রেহাই পান তাঁরা। রানার বিরুদ্ধে মহেশপুর সীমান্তে চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি মহেশপুর উপজেলা প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদাও দাবি করেন রানা। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ওই কর্মকর্তাকে মবের ভয় দেখান রানা। পরে ভয়ে ওই কর্মকর্তা অন্যত্র বদলি হয়ে চলে যান।