০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভরা মৌসু‌মে জা‌লে ইলিশ নেই, কিস্তির চাপ: সীতাকুণ্ডের জেলেরা দিশেহারা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলছে ইলিশ মৌসুম। অথচ ভরা এই সময়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ নেই জেলেদের জালে। দিনের পর দিন সাগরে ভেসে থেকেও খালি হাতে ফিরছেন তারা। উপার্জন তো দূরের কথা, নৌকার জ্বালানি ও শ্রমিক খরচই উঠছে না—এমনটাই জানাচ্ছেন হতাশ জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে ধরা পড়েছিল প্রায় ১,৪৫৬ টন ইলিশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০৩২ টনে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হঠাৎ করে উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৭৩৬ টনে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) আগস্টের শুরু পর্যন্ত ধরা পড়েছে মাত্র ২৩৩.৫ টন ইলিশ। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের অংশে মাত্র ২৩০.১ টন ইলিশ ধরা পড়েছে—যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০৩ টন কম।

জীবিকা সংকটে ৬ হাজার পরিবার- সীতাকুণ্ডে নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্যা ৫,৪০০। মৌসুমে আরও প্রায় ৫০০ জন শ্রমিক যোগ দেন এ পেশায়। মাছ না পেয়ে অনেকে কর্মী ছাঁটাই করছেন, কেউবা এনজিওর কিস্তির চাপে দিশেহারা।
গু‌লিয়াখালী ও সৈয়দপুর ঘাটে দেখা গেল, নৌকা থেকে নামছেন জেলেরা—কিন্তু মুখে হা‌সি নেই।
সৈয়দপু‌রের জেলে সর্দার স্বপন দাশ বলেন, “ইলিশ মৌসুমে ৫-৬ জন শ্রমিক রাখি, এবার খরচ ওঠ‌ছেনা বলে তাদের ছাঁটাই করেছি।” পাইকার আলাউদ্দিন বলেন, “প্রতিদিন একেক নৌকায় শ্রমিক-মজুরি, বরফ, নাশতায় খরচ পড়ে ৩ হাজার টাকার মতো, অথচ মাছ নেই।

”বাজারে দাম আকাশছোঁয়া, কিন্তু জেলেরা পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম-বাজারে বর্তমানে ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়, মাঝারি (৫০০-৭০০ গ্রাম) ইলিশ ৮০০-১,০০০ টাকায়, আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,৩০০-১,৫০০ টাকায়। অথচ এই মাছ ধরতে গিয়ে লোকসানে পড়ছেন জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এ বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া গত দুই সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ ছিল।”

বিশেষ‌জ্ঞের ম‌তে, অন্তত চারটি কারণ এ সংকটের জন্য দায়ী: ১. জলবায়ু পরিবর্তন: সাগরের তাপমাত্রা বেড়েছে, যা ইলিশের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ২. নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত: উজান থেকে নেমে আসা পানির গতি ও লবণাক্ততার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় প্রজননে ব্যাঘাত ঘটছে। ৩. প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি: ইলিশের স্বাভাবিক আবাসভূমি ধ্বংস হওয়ায় তারা তীরের কাছে আসছে না। ৪. অতিরিক্ত আহরণ: পূর্ববর্তী বছরগুলোতে অধিকহারে মাছ ধরা ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ইলিশের সংখ্যা কমে গেছে।

সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ জরুরি-স্থানীয়রা বলছেন, শুধু মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেই হবে না, নদী ও সাগরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং নিবন্ধিত জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে।

ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

রাণীনগর বিএনপির কর্মী সমাবশ অনুষ্ঠিত

ভরা মৌসু‌মে জা‌লে ইলিশ নেই, কিস্তির চাপ: সীতাকুণ্ডের জেলেরা দিশেহারা

পোস্ট হয়েছেঃ ০৪:০৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩ অগাস্ট ২০২৫

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড-সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলছে ইলিশ মৌসুম। অথচ ভরা এই সময়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ নেই জেলেদের জালে। দিনের পর দিন সাগরে ভেসে থেকেও খালি হাতে ফিরছেন তারা। উপার্জন তো দূরের কথা, নৌকার জ্বালানি ও শ্রমিক খরচই উঠছে না—এমনটাই জানাচ্ছেন হতাশ জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে ধরা পড়েছিল প্রায় ১,৪৫৬ টন ইলিশ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২,০৩২ টনে। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হঠাৎ করে উৎপাদন কমে দাঁড়ায় ৭৩৬ টনে। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) আগস্টের শুরু পর্যন্ত ধরা পড়েছে মাত্র ২৩৩.৫ টন ইলিশ। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডের অংশে মাত্র ২৩০.১ টন ইলিশ ধরা পড়েছে—যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪০৩ টন কম।

জীবিকা সংকটে ৬ হাজার পরিবার- সীতাকুণ্ডে নিবন্ধিত জেলে পরিবারের সংখ্যা ৫,৪০০। মৌসুমে আরও প্রায় ৫০০ জন শ্রমিক যোগ দেন এ পেশায়। মাছ না পেয়ে অনেকে কর্মী ছাঁটাই করছেন, কেউবা এনজিওর কিস্তির চাপে দিশেহারা।
গু‌লিয়াখালী ও সৈয়দপুর ঘাটে দেখা গেল, নৌকা থেকে নামছেন জেলেরা—কিন্তু মুখে হা‌সি নেই।
সৈয়দপু‌রের জেলে সর্দার স্বপন দাশ বলেন, “ইলিশ মৌসুমে ৫-৬ জন শ্রমিক রাখি, এবার খরচ ওঠ‌ছেনা বলে তাদের ছাঁটাই করেছি।” পাইকার আলাউদ্দিন বলেন, “প্রতিদিন একেক নৌকায় শ্রমিক-মজুরি, বরফ, নাশতায় খরচ পড়ে ৩ হাজার টাকার মতো, অথচ মাছ নেই।

”বাজারে দাম আকাশছোঁয়া, কিন্তু জেলেরা পাচ্ছেন না ন্যায্য দাম-বাজারে বর্তমানে ২০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকায়, মাঝারি (৫০০-৭০০ গ্রাম) ইলিশ ৮০০-১,০০০ টাকায়, আর এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১,৩০০-১,৫০০ টাকায়। অথচ এই মাছ ধরতে গিয়ে লোকসানে পড়ছেন জেলেরা।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “এ বছর আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া গত দুই সপ্তাহে বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরা বন্ধ ছিল।”

বিশেষ‌জ্ঞের ম‌তে, অন্তত চারটি কারণ এ সংকটের জন্য দায়ী: ১. জলবায়ু পরিবর্তন: সাগরের তাপমাত্রা বেড়েছে, যা ইলিশের চলাচলের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ২. নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত: উজান থেকে নেমে আসা পানির গতি ও লবণাক্ততার ভারসাম্য নষ্ট হওয়ায় প্রজননে ব্যাঘাত ঘটছে। ৩. প্রাকৃতিক আবাসস্থলের ক্ষতি: ইলিশের স্বাভাবিক আবাসভূমি ধ্বংস হওয়ায় তারা তীরের কাছে আসছে না। ৪. অতিরিক্ত আহরণ: পূর্ববর্তী বছরগুলোতে অধিকহারে মাছ ধরা ও নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ইলিশের সংখ্যা কমে গেছে।

সংকট নিরসনে জরুরি পদক্ষেপ জরুরি-স্থানীয়রা বলছেন, শুধু মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা জারি করলেই হবে না, নদী ও সাগরের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং নিবন্ধিত জেলেদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা না করলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে।