
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব দিনে দিনে বাড়ছে। যার ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং জলাতঙ্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কাও বাড়ছে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রো টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রিফাত এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন।
রিফাত জানান, “বন্ধুদের সঙ্গে তপন দাদার দোকানে চা খাচ্ছিলাম। এমন সময় একদল কুকুর নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছিল। হঠাৎ একটি কুকুর আমার পায়ে কামড়ে দেয়। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রক্ত বের হতে থাকে। পরে বন্ধুরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যায়।” তিনি আরও বলেন, “ডাক্তার রেবিস ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দেন।”
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী কুকুরের কামড়ের শিকার হয়েছেন। বর্তমানে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে—বিশেষ করে ক্যাফেটেরিয়া, ওয়াকওয়ে ও কটকা সংলগ্ন এলাকায়—কুকুরের আনাগোনা সবচেয়ে বেশি।
বাংলা ডিসিপ্লিনের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী কুকুরদের খেতে দেয়। এতে কুকুররা ক্যাফেটেরিয়া ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাফেরা করে। এতে তাদের আচরণ আগ্রাসী হয়ে উঠছে।”
অপরাজিতা হলের বাসিন্দা পুষ্পিতা পূজা বলেন, “টিউশন শেষে হলে ফিরতে দেরি হয়। তখন হাদিস চত্বর থেকে হলে আসতে খুব ভয় লাগে। কুকুরগুলো আমাদের চিনতে না পারলে তেড়ে আসে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. আরিশমা দেবনাথ বলেন, “সকল কুকুরের দেহে রেবিস ভাইরাস থাকতে পারে, তবে সকল কামড়ে জলাতঙ্ক হয় না। কামড় বা আঁচড় লাগলে প্রথমেই ক্ষতস্থান ভালোভাবে পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করতে হবে এবং নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নিতে হবে।”
তিনি আরও জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। প্রশাসনের সহায়তা পেলে ক্যাম্পাসেই ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব।”
বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে প্রশাসনের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ড. নাজমুস সাদাত বলেন, “কুকুর নিধনের জন্য আগে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রাণী সংরক্ষণের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আমরা সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় কুকুরদের টিকাদানের আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বেওয়ারিশ কুকুরের উপস্থিতি যেমন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে, তেমনি বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। প্রশাসনের দ্রুত উদ্যোগ, টিকাদান কর্মসূচির সম্প্রসারণ এবং শিক্ষার্থীদের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সমস্যার কার্যকর সমাধান সম্ভব। শিক্ষার পরিবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নৈতিক দায়িত্ব।