
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দশানী লঞ্চঘাটের কাছে ছোট-খাটো দোকান, সামনে টিনের সাইনবোর্ড—“হাবিব উল্লাহ্ ষ্টোর।” কিন্তু ভেতরে ঢুকলেই টের পাওয়া যায় ব্যবসার আসল প্রাণ মাঠা, দই এর সুবাস।
মাঠা-দই ছাড়াও এখানে ষ্টেশনারী ও নিত্যপণ্য মিলবে। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। যে-কোনো অনুষ্ঠান—ওয়ালিমা, মিলাদ, ইফতার মাহফিল—আগে থেকে ফোন দিলে মাঠা-দই অর্ডার নেওয়া হয়।
ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে শীতকাল (প্রায় পাঁচ মাস) উৎপাদন বন্ধ থাকে। তবে পবিত্র মাহে রমজানে চাহিদা দেড়-গুণ বেড়ে যায়।
দোকানের মালিক মো. হাবিব উল্লাহ্ জানান, “২০২০ সালে শখ থেকে মাঠা বানানো শুরু করি। এখন এটা আমার প্রধান আয়। প্রতিদিন ১৫০-১৬০ লিটার মাঠা বিক্রি হয়, লিটার-প্রতি ১২০ টাকায়।” মাস গেলে গড়ে ৩৫ হাজার টাকা আয় হয় বলে তিনি জানান।
তিন বলেন বলেন, “আমরা একেবারে খাঁটি দুধ দিয়ে মাঠা বানাই—কোনো রঙ বা প্রিজারভেটিভ নেই। এই কারণেই ক্রেতারা ফিরে-ফিরে আসেন।”
হাবিব উল্লাহ্ জানান, “প্রতি বছর মাহে রমজানের সময় মাঠা বিক্রি দেড় গুণ বেশি হয়। রোজাদাররা ইফতারে ঠান্ডা মাঠা খুব পছন্দ করেন। সে সময় দিনে ২০০-২৫০ লিটার পর্যন্ত বিক্রি হয়।”
ছেংগারচর সরকারি কলেজ-শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, “অনলাইনে অনেক মাঠা আছে, কিন্তু হাবিব ভাইয়ের মতো স্বাদ কোথাও পাইনি। দামও হাতের নাগালে।”
মতলব সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন বলেন, “বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলে ঘাটে ঘুরতে এলে মাঠা না খেয়ে ফিরি না। হালকা মিষ্টি, টকটকে-শরবতের মতো; বাইরে ১৫০ টাকা লিটার হলেও এখানকার ১২০ টাকার মাঠাই সেরা।”
চাঁদপুর থেকে লঞ্চ যাত্রী মোতালেব হোসেন জানান, “আমি প্রায় নৌপথে যাতায়াত করি। লঞ্চ দশানী ঘাটে আসলেই মাঠার ঘ্রাণ টেনে আনে। বরফ ঠান্ডা আর দুধের ঘন স্বাদ—সত্যি বলছি, সফর শেষে এটাই সবচেয়ে ফ্রেশ ফিল করায়।”
এমভি মমতাজের লঞ্চ চালক বলেন, “প্রতিদিনই চোখে দেখি—নতুন মানুষ আসে, দশানী লঞ্চ ঘাট থেকে অনেকেই বোতলে করে মাঠা ঢাকায় নিয়ে যায়। আমারও ক্লান্তি লাগলে আমি এখানকার মাঠা খাই, শরীর ঝরঝরে থাকে।”
ছেংগারচর থেকে ঘুরতে আসা সফিকুল ইসলাম বলেন, আমি মাঝেমধ্যে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে এখানে এসে মাঠা খাই, এখানকার মাঠা খুব সুস্বাদু। তাই যাওয়ার সময় ফ্যামিলির জন্য মাঠা নিয়ে যাই।
দর্শনার্থীরা বলছেন—শীতল পানীয়ের ভিড়ে ‘খাঁটি দুধের মাঠা’ একইসঙ্গে পুষ্টিকর ও স্বাদে অনন্য; আর তাদের এই আস্থাই ‘হাবিব উল্লাহ্ ষ্টোর’-কে দশানী লঞ্চঘাটের অপরিহার্য ঠিকানায় রূপ দিয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উপ-সহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (প্রানি স্বাস্থ্য) পলাশ কুমার দাস বলেন, “খাঁটি দুধ থেকে তৈরি মাঠা প্রোটিন-ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ও সহজপাচ্য। তবে হাইজিন মানা জরুরি; আমি দেখেছি, হাবিব উল্লাহ্ ষ্টোর সে দিকটা যথেষ্ট ভালোভাবে মেনে চলছে।”
সততা আর স্বাদ—এই দুই সম্বলেই অল্প সময়ে ‘হাবিব উল্লাহ্ ষ্টোর’ স্থানীয়দের আস্থার নাম হয়ে উঠেছে। উদ্যোক্তার আশা, পরবর্তী ধাপে অনলাইন হোম-ডেলিভারি চালু করে চাঁদপুর ছাড়িয়ে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলায়ও খাঁটি দুধের মাঠা পৌঁছে দেবেন।
ছবির ক্যাপশন:
বড় পাতিলে টাটকা দুধ জ্বাল দিচ্ছেন হাবিব উল্লাহ্—শুরু হচ্ছে খাঁটি মাঠা তৈরির প্রথম ধাপ।