০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

আওয়ামী লীগ অনিশ্চিত, বিএনপি ও জামায়াতের মাঠে তৎপরতা বাড়ছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এই আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সক্রিয় প্রচারণা বা সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসেনি। যার ফলে এখানে মূল প্রতিযোগিতা হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার প্রার্থীদের মধ্যে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা
আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ
সভাপতি, কেশবপুর উপজেলা বিএনপি
সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ কেশবপুরের রাজনীতিতে এক পরিণত, অভিজ্ঞ ও জনভিত্তিসম্পন্ন নেতা। বিগত দুই দশকে তিনি শুধু রাজপথে নয়, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা আজও এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
নেতাকর্মীদের জামিন, পরিবারের ভরণপোষণ, রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমায় সহায়তা—এসবই তিনি করেছেন নীরবে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেশবপুরে মহিলা কলেজের জন্য জমি দান এবং পৌরসভার পার্টি অফিস চত্বরে দোকানিদের প্রায় ২৫ বছর ধরে বিনা ভাড়ায় জায়গা ব্যবহার করতে দেওয়া—এমন দৃষ্টান্ত এলাকাবাসীর হৃদয়ে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
সম্প্রতি আন্দোলন-সংগ্রামে তার সরব উপস্থিতি, হামলার শিকার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পলাশ ও ছাত্রদল সভাপতি খাইরুলের চিকিৎসা নিজ খরচে করানো প্রমাণ করে—তিনি কর্মীবান্ধব নেতা। স্থানীয় জনমতে তিনিই এখন পর্যন্ত কেশবপুরে সবচেয়ে শক্তিশালী বিএনপি প্রার্থী।
অমলেন্দু দাস অপু
সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় হলেও কেশবপুরে মাঠ পর্যায়ে তার তৎপরতা সম্প্রতি শুরু হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে। এখন নিয়মিত ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ করছেন। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগসূত্র ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে এখনও সময় প্রয়োজন।
কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ
সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল
সদস্য, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
শ্রাবণ বিএনপির এমন একজন নেতা, যিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়েও দলের আদর্শে অবিচল থেকেছেন। রাজনৈতিক আদর্শে অবিচল থাকার কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, এমনকি ত্যাজ্যপুত্র হয়ে যাওয়ার মতো আত্মত্যাগও স্বীকার করেছেন তিনি। বর্তমানে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ করছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে এখনো সরাসরি গণসংযোগে নামেননি।
জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী
অধ্যাপক মোক্তার আলী
আমীর, কেশবপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামি
দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের স্থানীয় সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এই নেতা বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সক্রিয় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, দলের সীমিত কাঠামো থাকলেও তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণে নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ এখনো অনিশ্চিত
যশোর-৬ আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মাঠে নামায়নি। দলের তৎপরতাও তেমন দেখা যাচ্ছে না। যদি দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে, তবে এই আসনে আওয়ামী লীগপন্থী ভোটারদের ভোট কার পক্ষে যায়, সেটাই নির্ধারণ করবে কার জয় হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোটব্যাংক যাকে সমর্থন দেবে, তার জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ভোটারদের হিসাব ও বাস্তবতা
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা, দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকা এবং নিরবভাবে দলের জন্য অবদান রাখার কারণে আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। অমলেন্দু দাস অপু এখনও নিজের অবস্থান মজবুত করার প্রক্রিয়ায় আছেন। অধ্যাপক মোক্তার আলী জামায়াত ঘরানার প্রার্থী হিসেবে হলেও এলাকায় নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছেন।
শেষ কথা
কেশবপুরের রাজনৈতিক মাঠ এখনো তরল অবস্থায় রয়েছে, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দৃশ্যপট স্পষ্ট হবে। আবুল হোসেন আজাদ সবচেয়ে সংগঠিত, পরিচিত ও প্রমাণিত নেতারূপে জনমনে প্রতিষ্ঠিত। শ্রাবণ তার ত্যাগ ও দলের প্রতি আস্থার কারণে গুরুত্ব পাচ্ছেন, যদিও মাঠে তাকে এখনও সক্রিয় হতে হবে। অপু নিয়মিত মাঠে থাকলেও স্থানীয়ভাবে সাংগঠনিকভাবে আরও সংহতি প্রয়োজন। অধ্যাপক মোক্তার আলী জামায়াতের কাঠামো দুর্বল হলেও প্রান্তিক ভোট সংগ্রহে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ট্যাগঃ
প্রতিনিধির তথ্য

জনপ্রিয় পোস্ট

সন্দ্বীপে এসইডিপি’র আওতায় পারফরমেন্স বেজড গ্র্যান্টস পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন

যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

পোস্ট হয়েছেঃ ১০:৪৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
আওয়ামী লীগ অনিশ্চিত, বিএনপি ও জামায়াতের মাঠে তৎপরতা বাড়ছে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। এই আসনে বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোনো সক্রিয় প্রচারণা বা সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম উঠে আসেনি। যার ফলে এখানে মূল প্রতিযোগিতা হচ্ছে বিএনপি ও জামায়াত ঘরানার প্রার্থীদের মধ্যে।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা
আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ
সভাপতি, কেশবপুর উপজেলা বিএনপি
সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ কেশবপুরের রাজনীতিতে এক পরিণত, অভিজ্ঞ ও জনভিত্তিসম্পন্ন নেতা। বিগত দুই দশকে তিনি শুধু রাজপথে নয়, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে যে দায়িত্ব পালন করেছেন, তা আজও এলাকায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
নেতাকর্মীদের জামিন, পরিবারের ভরণপোষণ, রাজনৈতিক মামলা-মোকদ্দমায় সহায়তা—এসবই তিনি করেছেন নীরবে। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে কেশবপুরে মহিলা কলেজের জন্য জমি দান এবং পৌরসভার পার্টি অফিস চত্বরে দোকানিদের প্রায় ২৫ বছর ধরে বিনা ভাড়ায় জায়গা ব্যবহার করতে দেওয়া—এমন দৃষ্টান্ত এলাকাবাসীর হৃদয়ে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।
সম্প্রতি আন্দোলন-সংগ্রামে তার সরব উপস্থিতি, হামলার শিকার স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পলাশ ও ছাত্রদল সভাপতি খাইরুলের চিকিৎসা নিজ খরচে করানো প্রমাণ করে—তিনি কর্মীবান্ধব নেতা। স্থানীয় জনমতে তিনিই এখন পর্যন্ত কেশবপুরে সবচেয়ে শক্তিশালী বিএনপি প্রার্থী।
অমলেন্দু দাস অপু
সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটি
কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তার অবস্থান দৃঢ় হলেও কেশবপুরে মাঠ পর্যায়ে তার তৎপরতা সম্প্রতি শুরু হয়েছে, বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে। এখন নিয়মিত ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ করছেন। তবে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার যোগসূত্র ও গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে এখনও সময় প্রয়োজন।
কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ
সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল
সদস্য, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
শ্রাবণ বিএনপির এমন একজন নেতা, যিনি আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়েও দলের আদর্শে অবিচল থেকেছেন। রাজনৈতিক আদর্শে অবিচল থাকার কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া, এমনকি ত্যাজ্যপুত্র হয়ে যাওয়ার মতো আত্মত্যাগও স্বীকার করেছেন তিনি। বর্তমানে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সক্রিয় যোগাযোগ করছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে এখনো সরাসরি গণসংযোগে নামেননি।
জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী
অধ্যাপক মোক্তার আলী
আমীর, কেশবপুর উপজেলা জামায়াতে ইসলামি
দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের স্থানীয় সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা এই নেতা বর্তমানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে সক্রিয় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তিনি আশাবাদী, দলের সীমিত কাঠামো থাকলেও তার ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতার কারণে নির্বাচনে ভালো ফল করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগ এখনো অনিশ্চিত
যশোর-৬ আসনে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থীকে মাঠে নামায়নি। দলের তৎপরতাও তেমন দেখা যাচ্ছে না। যদি দলটি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করে, তবে এই আসনে আওয়ামী লীগপন্থী ভোটারদের ভোট কার পক্ষে যায়, সেটাই নির্ধারণ করবে কার জয় হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যবাহী ভোটব্যাংক যাকে সমর্থন দেবে, তার জয়ের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
ভোটারদের হিসাব ও বাস্তবতা
দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা, দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকা এবং নিরবভাবে দলের জন্য অবদান রাখার কারণে আলহাজ্জ আবুল হোসেন আজাদ এগিয়ে আছেন। অন্যদিকে জাতীয় রাজনীতিতে ত্যাগ ও নিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছেন। অমলেন্দু দাস অপু এখনও নিজের অবস্থান মজবুত করার প্রক্রিয়ায় আছেন। অধ্যাপক মোক্তার আলী জামায়াত ঘরানার প্রার্থী হিসেবে হলেও এলাকায় নিজের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করছেন।
শেষ কথা
কেশবপুরের রাজনৈতিক মাঠ এখনো তরল অবস্থায় রয়েছে, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই দৃশ্যপট স্পষ্ট হবে। আবুল হোসেন আজাদ সবচেয়ে সংগঠিত, পরিচিত ও প্রমাণিত নেতারূপে জনমনে প্রতিষ্ঠিত। শ্রাবণ তার ত্যাগ ও দলের প্রতি আস্থার কারণে গুরুত্ব পাচ্ছেন, যদিও মাঠে তাকে এখনও সক্রিয় হতে হবে। অপু নিয়মিত মাঠে থাকলেও স্থানীয়ভাবে সাংগঠনিকভাবে আরও সংহতি প্রয়োজন। অধ্যাপক মোক্তার আলী জামায়াতের কাঠামো দুর্বল হলেও প্রান্তিক ভোট সংগ্রহে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।